BRAKING NEWS

ধলেশ্বর, খোয়াই ও মুঙ্গিয়াকামীতে তিন গৃহবধূকে হত্যা, ভাটি অভয়নগরে উদ্ধার যুবকের রক্তাক্ত মৃতদেহ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/খোয়াই/তেলিয়ামুড়া, ১২ এপ্রিল৷৷ পৃথক স্থানে তিন গৃহবধূকে হত্যা করা হয়েছে৷ এছাড়া আরও এক যুবকের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে৷ তাতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা কি৷ পাশাপাশি গার্হস্থ্য হিংসার রাশ টানা যে অসম্ভব হয়ে উঠছে৷
বিষ খাইয়ে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে৷ জানা গিয়েছে, ধলেশ্বর ১৪ নম্বর রোডের বাসিন্দা দিপ্তনু রায় চৌধুরী তাঁর স্ত্রী তনুশ্রী রায়কে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে৷ আগরতলা পূর্ব মহিলা থানায় দিপ্তনুর বিরুদ্ধে মৃতার পরিবারের তরফে মামলা করা হয়েছে৷ মামলা লিপিবদ্ধ করে পুলিশ অভিযুক্ত দিপ্তনু রায় চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে৷
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, চার বছর আগে দিপ্তনুর সাথে বিয়ে হয়েছিল খেজুরবাগান এলাকার তনুশ্রীর৷ বিয়ের পর থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হয়নি৷ পণের জন্য তনুশ্রীর উপর নির্যাতন চালানো হত বলে অভিযোগ করেছেন মৃতার বাবা৷ বুধবার মৃতার বাবা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত নয়টা নাগাদ তাঁর মেয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে টেলিফোনে খবর পান তনুশ্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ খবর পেয়ে মৃতার বাবা সহ পরিবারের সদস্যরা ধলেশ্বরে ছুটে যান৷ গিয়ে জানতে পারেন পাখির খাচায় ওষুধ দিতে গিয়ে তনুশ্রী বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কিন্তু, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরই তাঁর মৃত্যু হয়৷ মৃতার বাবা জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের কাছ থেকে তিনি জানতে পেরেছেন যে ওষুধ পাখির খাচায় দেওয়া হয়েছিল তার বিষক্রিয়ায় সঙ্গে সঙ্গেই তনুশ্রীর মৃত্যু হওয়ার কথা ছিল৷ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার অনেক সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাঁদেরকে জানানো হয়েছে৷ এর থেকে তিনি অনুমান করছেন, মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে৷
খোয়াই থানার অধীন পূর্ব সোনাতলা গ্রামে খুন হলেন এক গৃহবধূ৷ মৃতার নাম চয়নিকা দাস সূত্রধর৷ বয়স আটত্রিশ৷ মঙ্গলবার রাতে স্বামী মনোজিৎ সূত্রধর স্ত্রীকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ৷ শুধু তাই নয়, বুধবার ভোর সাড়ে চারটা নাগাদ খোয়াই থানায় পোন করে আত্মসমর্পণ করে স্বামী মনোজিৎ৷ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা খোয়াই শহরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে৷
এদিকে, খুনের ঘটনার খবর পয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে খোয়াই থানার পুলিশ৷ মৃতদেহ উদ্ধার করে খোয়াই হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়৷ পরবর্তী সময়ে ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ নিকটাত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হয়৷ অন্যদিকে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে স্বামী মনোজিৎ সূত্রধর৷ হাসপাতালে জামাই আদরে অভিযুক্ত মনোজিৎকে রাখায় মৃতার নিকটাত্মীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন৷ খোয়াই থানার ভেতরেই তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ মৃতার পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, ভোর সাড়ে চারটা থেকে দুপুর বারেটা পর্যন্ত একজন খুনের আসামীকে গারদে না রেখে কেন জামাই আদরে তাকে থানার ভেতর বসিয়ে রাখা হল৷ কারণ খঁুজতে গিয়ে মৃতার পরিবারের লোকজনরা জানায়, মনোজিৎ সূত্রধরের এক ভাই পুলিশ৷ তাও আবার খোয়াই থানায় কর্মরত৷ ভাইকে কিভাবে বাঁচানো যায় সেই পরিকল্পনাই চলছিল৷ এলাকার জনগণ যখন খোয়াই থানায় গিয়ে জানতে চায় কেন মনোজিৎকে গারদে রাখা হল না তখন থানার পুলিশ জানায় মনোজিৎ মানসিক রোগী৷ যে কারণে তাকে এইভাবে রাখা হয়েছে৷ পুলিশের এই বক্তব্য শুনে এলাকার জনগণ জানতে চায় আপনারা কোন্ ডাক্তারী পরীক্ষার ভিত্তিতে মনোজিৎকে মানসিক রোগী বলেছেন৷ এনিয়ে জনগণ থানার ভেতর প্রবেশ করে বিক্ষোভ দেখান৷ দাবী জানানো হয় অভিযুক্ত মনোজিৎকে জনতার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য৷ পরে পুলিশ মনোজিৎকে খোয়াই কোর্টে নিয়ে যায়৷ এদিকে, চয়নিকার পরিবারের লোকজন খুনী মনোজিৎ এর কঠোর শাস্তির দাবী করেছেন৷
এদিকে, মুঙ্গিয়াকামী থানা এলাকার দক্ষিণ মহারানীর গোবিন্দ সরকার পাড়ার এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্বামী৷ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঐ গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে৷ ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত ৯ এপ্রিল গোবিন্দ সরকার পাড়ার বাসিন্দা দিলীপ দেববর্মা রাতে বাড়িতে ফিরে স্ত্রী অনুরূপা দেববর্মাকে প্রচন্ড মারধর করেন৷ তাতে ঐ গৃহবধূ গুরুতর ভাবে আহত হন৷ ঘটনার খবর পেয়ে গৃহবধূর বাপের বাড়ির লোকজন ছুটে গিয়ে তাঁকে প্রথমে কল্যাণপুর হাসপাতালে নিয়ে যান৷ সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাঁকে খোয়াই জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করেন৷ মঙ্গলবার খোয়াই জেলা হাসপাতাল থেকে তাঁকে তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়৷ ঐদিন রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়৷ গৃহবধূর মৃত্যুর পর তাঁর দেহ শ্বশুর বাড়ির পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ ময়নাতদন্ত ছাড়া ঐ গৃহবধূর মৃতদেহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর শ্বশুর বাড়ির লোকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন খবর পেয়ে মুঙ্গিয়াকামী থানার পুলিশ হাসপাতালে এসে পৌঁছান এবং মৃতদেহের ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেন৷ মৃতার পরিবারের অভিযোগে ঐ গৃহবধূর স্বামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে৷
অন্যদিকে, বুধবার ভোরে রাজধানী আগরতলা শহরের ভাটি অভয়নগরে একটি ড্রেনের পাশে এক অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে৷ এদিন সকাল ছয়টা নাগাদ স্থানীয় জনগণ ড্রেনের পাশে মৃতদেহ পরে থাকতে দেখেন৷ সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় রামনগর পুলিশ ফাঁড়িতে৷ পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় ময়নাতদন্তের জন্য৷ জানা গিয়েছে, ঐ যুবকের মুখে ও কানে আঘাতের চিহ্ণ রয়েছে৷ তাই ঘটনাটি হত্যাকান্ড কি না তা নিয়ে পুশিও ধন্দে রয়েছে৷ খবর লেখা পর্যন্ত পুলিশ মৃতদেহ সনাক্ত করতে পারেনি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *