নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ এপ্রিল৷৷ সর্টসার্কিটে অগ্ণিকান্ডের ঘটনায় আইজিএম হাসপাতালে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়৷
ঘটনাস্থলে চিকিৎসক দ্বারা কর্তব্যরত দুই চিত্র সাংবাদিক নিগৃহীত হয়েছেন৷ ঘটনার জেরে হাসপাতালে রীতিমতো উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে৷ খবর পেয়ে ছুটে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী সহ দপ্তরের আধিকারীকরা৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পৌঁছে বিশাল পুলিশ বাহিনী৷ ভবিষ্যতে অগ্ণিকান্ডের ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য তিন সদস্যক একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে তদন্তের জন্য৷ অন্যদিকে, সাংবাদিকদের তরফ থেকে হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্টকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়৷ সাংবাদিকরা দাবী জানিয়েছেন অবিলম্বে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অচিন্ত কুমার নাথকে সাংবাদিক নিগ্রহের দায়ে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করতে হবে৷ সেই তারা সাংবাদিকরা থানায় একটি মামলাও করেছেন ঐ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে৷ চবিবশ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্ত চিকিৎসককে গ্রেপ্তার না করা হলে সাংবাদিকরা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবেন বলে জানিয়েছেন৷
সংবাদে প্রকাশ, বুধবার দুপুর দুইটা নাগাদ আইজিএম হাসপাতালের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড (ব্লক-২) এ বিদ্যুতের মিটারে আকস্মিক আগুন লাগে৷ দ্রুত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে৷ মুহুর্তের মধ্যেই হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ যে যেদিকে পারেন ছুটে পালাতে থাকেন৷ মূলত ঐ ওয়ার্ডটি প্রসূতি মায়েদের৷ অগ্ণিকান্ডের ফলে ওয়ার্ডে থাকা রোগী ও আত্মীয় পরিজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তা সহকারে মিটার বন্ধ করেন এবং দ্রুত পাঁচ জন পোস্ট অপারেটিভ রোগীকে অক্ষত অবস্থায় নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যান৷
এদিকে, অগ্ণিকান্ডের খবর পেয়ে হাসপাতালে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান বেশ কয়েকজন চিত্র সাংবাদিকও৷ হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তথা স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ অচিন্ত কুমার নাথ সাংবাদিকদের দেখেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন৷ তিনি তখন অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সাথে অযথা তর্কে লিপ্ত হন৷ তিনি উত্তেজিত হয়ে চিত্র সাংবাদিক ভাস্কর দত্ত এবং চিত্র সাংবাদিক প্রসেনজিৎ দেকে শারীরিক ভাবে হেনস্থা করেন প্রকাশ্যে৷ ঐ দুই চিত্র সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তাঁদের হাতের ভিডিও ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলে দেন৷ তিনি আচমকা উত্তেজিত হয়ে এভাবে সাংবাদিকদের সাথে আচরণ করায় উপস্থিত স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে সকলেই অবাক হয়ে যান৷ লোকমুখে শোনা গিয়েছে ঐ ডাক্তারবাবু নাকি দিনের সিংহভাগ সময়ই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে এর আগেও বহু অভিযোগ উঠেছে৷ অবৈধ গর্ভপাত থেকে শুরু করে নানাহ কেচ্ছার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে৷
এদিকে, এই ঘটনার খবর পেয়ে সাংবাদিকদের এক প্রতিনিধি দল হাসপাতালে ছুটে যান৷ হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ রাধা দেববর্মার সাথে মিলিত হন৷ সাংবাদিকরা দাবী জানিয়েছেন অবিলেম্ব ডাঃ অচিন্ত কুমার নাথকে বরখাস্ত করতে হবে৷ ডাঃ রাধা দেববর্মাও অচিন্তবাবুর তরফদারী করেন এবং সাংবাদিকদের অভিযোগ ও দাবীকে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন৷ সাংবাদিকদের চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত তিনি বলেন কোন অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে জানানোর জন্য৷
অন্যদিকে, অগিনকান্ডের ঘটনার অব্যবহিত পারেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী ঘটনাস্থলে যান এবং উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন৷ বৈঠকে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ তপন কুমার দাস, আইজিএম হাসপাতালের সুপারিনটেনডেট ডাঃ রাধা দেববর্মা সহ হাসপাতালের চিকিৎসকরা ও পুর্ত দপ্তরের ইন্টারন্যাল ইলেকট্রিকেল এবং রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের আধিকারীকরা উপস্থিত ছিলেন৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার ঘটনার প্রশংসা করেন ও সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন৷
ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের জেনারেল ম্যানেজার নরেশ দাস, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শান্তনু দাশ এবং ইন্টারন্যাল ইলেকট্রিকেলের একজিকিউটিভ ইঞ্জিনীয়ার নারায়ণ চন্দ্র দত্তকে নিয়ে তিন সদস্যক কমিটি গঠন করা হয়৷ এই কমিটি কোন ত্রুটি রয়েছে কিনা তার অনুসন্ধান করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন৷
অন্যদিকে, আইজিএম হাসপাতালে সংবাদ সংগ্রহে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার দ্বারা দুইজন চিত্র সাংবাদিক দৈহিক ভাবে লাঞ্ছিত হওয়া এবং তাদের ক্যামেরা ভাঙচুরের ঘটনা অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করেছে আগরতলা প্রেস ক্লাব৷ আগরতলা প্রেস ক্লাব বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছে৷