BRAKING NEWS

কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে সংসদে সরব বিরোধীর , ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস সরকারের

নয়াদিল্লি, ১১ এপ্রিল (হি.স.) : ভারতীয় নৌসেনা কুলভূষণ যাদবের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে উত্তাল সংসদ। ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন অফিসারকে সোমবার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে পাকিস্তানের সেনা আদালত। মঙ্গলবার সংসদে লোকসভা অধিবেশন শুরু হতেই সেই সিদ্ধান্তের সমালোচনায় সুর চড়ায় কংগ্রেস। আজ লোকসভায় কংগ্রেস সাংসদ মল্লিকার্জুন খার্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাকিস্তান গেলেন অথচ কূলভূষণ যাদবের বিষয়টি তুললেন না কেন? প্রশ্ন করল কংগ্রেস। একই সঙ্গে তারা তোলে কাশ্মীরে অশান্তি প্রসঙ্গ। জবাব দিতে উঠে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানান, পাক এজেন্সিগুলি কূলভূষণকে অপহরণ করে, র গুপ্তচর হিসেবে তাঁকে দেখিয়ে তাঁর বিচার করে তারা। যেভাবে তাঁর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তার কঠোর প্রতিবাদ করেছে কেন্দ্র, কক্ষকে তিনি আশ্বস্ত করতে চান, ন্যায় অবশ্যই করা হবে।
তবে এ কথা শুনতে চাননি বিরোধীরা। কংগ্রেসের মললিকার্জুন খার্গে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তো পাকিস্তান গিয়েছিলেন। কিন্তু নওয়াজ শরিফের কাছে কুলভূষণ যাদবের বিষয়টি একবারের জন্যও তুলে ধরেননি।যদি কূলভূষণকে বাঁচানো না যায়, তা সরকারের দুর্বলতা হিসেবে প্রমাণিত হবে।কুলভূষণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিধি–নিষেধ মানছে না পাকিস্তান। সাজা কার্যকর হলে, তা পূর্বপরিকল্পিত খুন বলেই গণ্য হবে। সরকার এখনও চুপ কেন?
কুলভূষণের সমর্থনে গলা চড়ান এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসিও। তাঁর মতে, ‘উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়াই কুলভূষণেক দোষী সাব্যস্ত করেছে পাকিস্তানের সেনা আদালত। নিয়ম–কানুনের ধার ধারে না তারা। ওদের সেনা আদালতকে নামমাত্র আদালত বলা চলে। যে কোনও মূল্যেই হোক না কেন, কুলভূষণকে বাঁচাতেই হবে। প্রয়োজনে প্রভাব খাটাক সরকার।’ বিরোধীদের সওয়াল জবাবের মুখে পড়ে সরকারের হয়ে সাফাই দিতে এগিয়ে আসেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমার। তিনি বলেন, ‘সভাকক্ষের প্রত্যেকেই কুলভূষণেক নিয়ে উদ্বিগ্ন। সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
এরপরই এগিয়ে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। পাক সেনা আদালতের নিন্দা করে জানান, ‘কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ডের তীব্র নিন্দা করছি। সকলকে আশ্বস্ত করছি, এর বিরুদ্ধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেই। ভুয়ো অভিযোগে কুলভূষণকে অপহরণ করেছে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা। এখন জোর করে ‘র’ এজেন্ট বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ পাকিস্তান যে কুলভূষণকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দিচ্ছে রাজ্যসভায় তা মেনে নিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও। ইসলামাবাদকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘কুলভূষণের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই। পরিকল্পিতভাবে তাঁকে খুন করতে চাইছে পাকিস্তান সরকার। তবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে ফল ভাল হবে না। দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক তো বিগড়োবেই, এর কড়া মূল্যও চোকাতে হবে ইসলামাবাদকে।’
২০১৬ সালের ৩ মার্চ সীমান্ত সংলগ্ন চমন এলাকা থেকে কুলভূষণ যাদবকে গ্রেফতার করে পাক সেনা। ভারতের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি এবং করাচি ও বালুচিস্তানে নাশকতায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। সেখানকার সেনা আদালতে সোমবার সেই মামলার শুনানি ছিল। তাতে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়। তাতেই নড়েচড়ে বসেছে ভারতের রাজনৈতিক মহল। গতকালই ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আব্দুল বসিতকে ডেকে পাঠায় বিদেশ মন্ত্রক। প্রমাণপত্র ছাড়া ভারতীয় নাগরিক কুলভূষণের ফাঁসি হলে ফল ভাল হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেয়।
এ বিষয়ে টুইট করে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে কূলভূষণকে মুক্ত করুক সরকার। এ ব্যাপারে সরকারকে আরও সক্রিয় হতে অনুরোধ জানান কংগ্রেসের মনীশ তিওয়ারি। পাক সেনা আদালত কুলভূষণকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার একদিন আগেই দুই পাকিস্তান নাবিকের প্রাণ বাঁচিয়েছিল ভারতীয় উপকূলরক্ষীবাহিনী। সেই প্রসঙ্গ টেনে কুলভূষণকেও নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে আর্জি জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *