আগরতলা, ০৯ এপ্রিল,(হি:স): আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সিভিল সোসাইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শুধু এই দেশেই নয় সমগ্র
বিশ্বে সিভিল সোসাইটি এখন সরকারের কর্ম পদ্ধতি এবং নিতি নির্ধারণে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বের প্রথম কোথায় কখন কিভাবে সিভিল সোসাইটি মুভমেন্ট শুরু হয়েছিল এ নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে ইদানীং কালে সিভিল সোসাইটি মুভমেন্ট’এর বিষয়টি সর্বাধিক প্রচারে আসে পশ্চিমবঙ্গের বাম শাসনের অন্তিম পর্ব থেকে।
ত্রিপুরাও বাম শাসিত।মাঝের পাঁচ বছর বাদ দিলে তিন দশকের অধিক সময় ধরে এই রাজ্যে বামেরাই ক্ষমতায় রয়েছে। যদিও ঘটনা বহুল পাহাড়ি এই ছোট রাজ্যে জনসচেতনতা নিয়ে আক্ষরিক অর্থে কেউই কোন প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। কারণ এই রাজ্যে ভোট পরে ৯৬%। কিন্তু গণতন্ত্রের এই বাহারি চমকের প্রকৃত রহস্য কার্যত গবেষণার বিষয়। কিন্তু এই রাজ্যে সিভিল সোসাইটি মুভমেন্ট কখনোই বিশেষ নজরে আসেনি। যা-ও হয়েছে, তার পুরোটাই শাসক দলের নিয়ন্ত্রণে থেকে। কখনো মার্কিন বিরোধী মিছিল, আবার কখনো যুদ্ধ বিরোধী মিছিল।
কিন্তু শনিবার মধ্যরাত্র থেকে আচমকাই এই রাজ্যে স্বাধীন,সরকার কিংবা শাসক দলের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত যুক্তিবাদী বুদ্ধিজীবী মহলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। রাত পোহাতেই রবিবার ছুটির দিনে ঘর থেকে বেড়িয়েই রাজধানীর বাসিন্দারা দেখলেন অদ্ভুত দৃশ্য। প্রতিবাদের ভাষায় এত নতুনত্ব ইতিপূর্বে অন্তত এই পাহাড়ি রাজ্যে লক্ষ্য করা যায়নি। অথচ প্রতিবাদীরা সকলেই এই রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেল ত্রিপুরার তথা রাজধানী আগরতলার কিছু উচ্চ শিক্ষিত যুবক যুবতি, যাদের মধ্যা অনেকেই চিত্র শিল্পী বা সঙ্গীত জগতের সঙ্গে নানা ভাবে যুক্ত। সাধারণ মানুষের আকর্ষণ এতটাই ছিল যে ছুটির দিনে বাজারের থলে নিয়ে গৃহ কর্তা বাড়ি থেকে বের হলেও দীর্ঘক্ষণ দারিয়ে ছিলেন রাজপথের ধারে। বেলা বারার সঙ্গে সঙ্গে উৎসুক জনতার ভিড়ও বারতে থাকে। ঘটনাটি লক্ষকরে রাজধানীর বিভিন্ন থানার পুলিশ বেরিয়ে পরে বিষয়টি বুঝতে। চলে আসেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ আধিকারিকরাও।
প্রতিবাদীদের মধ্যা একজন চিত্র শিল্পী অরিন্দম চৌধুরী জানিয়েছেন, “রাজ্যের বিভিন্ন জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে সমাজের নানা অংশের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের নিয়ে তারা সংঘটিত হয়েছেন। এই সংগঠনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘এবার জাগ’। তারাই রাত ভর শহরের বিভিন্ন প্রান্তে, রাজ পথের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছেন। একই সঙ্গে রবীন্দ্র ভবন প্রাঙ্গণে আম্র-কুঞ্জে তারা জড়ো হয়েছেন।
রাজ পথে একে দেওয়া এই ব্যঙ্গচিত্রে রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করা হয়েছে। ক্রমবর্ধমান নাবালিকা ধর্ষণ, গন ধর্ষণ, এবং ধর্ষণের পর হত্যা সহ নারী নির্যাতনকে প্রেক্ষাপট করে এই চিত্র গুলি আকা হয়েছে। একি সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের ব্যঙ্গচিত্রের পাশে সদ্য আদালতের নির্দেশে চাকরীচ্যুতদের ইস্যু টেনে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তারি একটি বয়ান বিদ্রূপ করে লিখে দেওয়া হয়েছে। আবার অন্য দিকে ধৃতরাষ্ট্রের প্রশাসন বলে উপেক্ষা করা হয়েছে।
এই জাতীয় প্রতিবাদ এর আগে ত্রিপুরাতে কখনো লক্ষ্য করা যায়নি। একই সঙ্গে রবীন্দ্র ভবনের আম্র-কুঞ্জে শুরু হয়েছে প্রতিবাদী সঙ্গীত ও আবৃতি। আম গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে শিশু কন্যা ও কিশোরীদের পোশাক। শহর জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রতীবাদের এই নয়া ধরন দেখে রাজনৈতিক নেতারা অনেকেই বিস্মিত আবার অনেকেই বেশ উৎফুল্লও বটে। তবে কোন রাজনৈতিক দলিই চটজলদি এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে চাইছে না। অন্য দিকে নয়া প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের “এবার জাগো”র সদস্যরা সব ধরনের রাজনৈতিক দলাদলির ঊর্ধ্বে থাকার কথা জানিয়েছেন। তাদের মতে এই সংগঠন, সমাজ আর মানবতা নিয়েই কথা বলবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষকে জাগিয়ে তোলাই তাদের কাজ। তবে অনেকেই রাজপথের ব্যঙ্গচিত্র দেখে বিষয়টিকে সরকার বিরোধী চক্রান্ত বলে মনে করছেন।হিন্দুস্থান সমাচার ।