BRAKING NEWS

ভারতীয় জ্ঞান-দর্শনকে পাথেয় করে শান্তির পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান দলাই লামার

গুয়াহাটি, ০২ এপ্রিল, (হি.স.) : ‘অহিংসা ভারতের ধর্ম-গৌরব। আমি এই ধর্ম ও গৌরবকে শিরোধার্য করে দিনপাত করছি, তাকে অনুসরণ করছি। তাই শান্তির পথে অগ্রসর হতে হলে ভারতীয় জ্ঞান ও দর্শনের শিক্ষা নিতে হবে। এটাও সত্য, ভারত আমার গুরুর গুরু পরমগুরু। এমন-কি, সমগ্র বিশ্বে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারতীয় দর্শন ও জ্ঞান অত্যন্ত সহায়ক। ভারতের দীর্ঘ সময়ের আতিথ্য গ্রহণ করে এই অনুভব দৃঢ় হয়েছে আমার।’ বক্তা তিব্বত থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসিত ধর্মগুরু দলাই লামা।
গুয়াহাটিতে তাঁর সফরের দ্বিতীয়দিন আজ রবিবার গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কেকে হেন্ডিক মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং ‘লয়ার্স বুক স্টল’ আয়োজিত ‘আধুনিক যুগে প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করছিলেন তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামা। আজ গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরিঞ্চিকুমার বরুয়া প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত ‘লয়ার্স বুক স্টল’ প্রকাশিত ‘মোর দেশ মোর মানুহ’ (আমার দেশ আমার মানুষ) শীর্ষক দালাই লামার আত্মজীবনী সংবলিত অসমিয়া ভাষায় অনূদিত গ্রন্থ উন্মোচন করে আবেগিক বক্তব্য পেশ করিছেলন তিনি।
বলেন, ভারতের পাঁচ হাজার বছর পুরনো সভ্যতা আজও অপরিবর্তিত। গোটা বিশ্ব যখন পরিবর্তনের দিকে ধাবিত হচ্ছে, তখন ভারত তার অন্তরাত্মার আবহ থেকে বিচ্যুত হয়নি। সে তার অবস্থানে অটল। এ কারণও ব্যাখ্যা করেন দালাই লামা। বলেন, সকল ধর্মের গুরুজনেরা প্রেম, করুণার বাণী ছড়ান। কিন্তু এই প্রেম-করণাকে সম্বল করে মানবসমাজকে কীভাবে একত্রিত হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে চলতে হয় তার পাঠ দেয় কেবল ভারতীয় ধর্ম।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত শ্রোতা তথা আমন্ত্রিত অভ্যাগতদের উদ্দেশে বলেন, সাম্প্রতিককালের বিশ্বায়নের যুগে, অত্যাধুনিক সমাজব্যবস্থায় ভারতবর্ষ তার প্রাচীন ধারা বজায় রেখে নিজেকে প্রবক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। বলেন, নৈতিক আবেগের কাছে কোনও যুক্তিতর্কই টিঁকে থাকতে পারে না। এমন-কি আবেগের পাশাপাশি কিছু সত্য তথ্যও লুকিয়ে থাকে এবং এজন্যই ভারতের স্থান সর্বোচ্চে। তাছাড়া, আমরা সামাজিক জীব হওয়ার দরুণ আমাদের সুখ-শান্তি অপরের ওপর নির্ভর করে। বর্ণবৈষম্য ব্যবস্থা থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে। আসলে এই ব্যবস্থার প্রচলন করেছিলেন তদানীন্তন ভূ-স্বামীরা। আজকের ভাষণে প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখতেও সবাইকে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান দলাই লামা। তিনি নিজেকে একজন দলাই লামা বলে ভাবেন না বলেও জানিয়ে বলেন, ‘আমি কাউকে কখনও আলাদা করে দেখি না। সবাইকে নিয়ে চলি। কেউ আমার চেয়ে ছোট নন।’
নিজের আত্মজীবনী গ্রন্থ উন্মোচনী অনুষ্ঠানের পর তিনি উপস্থিত অভ্যাগতদের সঙ্গে এক মতবিনিময় এবং সরাসরি প্রশ্নোত্তর কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করেন দলাই লামা। এই কার্যক্রমে তিনি ভারতের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বলেন, জনবিস্ফোরণ রোধ করতে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। তাছাড়া, সকল মানবজাতিকে আধ্যাত্মিক ধ্যান করার পরামর্শও দেন তিনি। মহিলাদের সম্পর্কে বলেন, মানবিক ক্ষেত্রে নারীর সক্রিয় যোগদান অস্বীকার করার উপায় নেই। তাঁদের অবদানেই আমরা এগিয়ে চলেছি। মহিলাদের আন্তরিকতার ফলে সমাজ ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছে।
গ্রন্থ উন্মোচনী অনুষ্ঠানে অন্যাদের সঙ্গে ছিলেন, গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মৃদুল হাজরিকা, রেজিস্টার এসকে নাথ, লয়ার্স বুক স্টলের চেয়ারম্যান যতীন হাজরিকা, স্বত্বাধিকারী ভাস্কর বরুয়া, অনুবাদক ইন্দ্রানী লস্কর, কেকে হেন্ডিক মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রীতুমণি বরকাকতি প্রমুখ। এই অনুষ্ঠানের পর তিনি চলমান ‘নমামি ব্রহ্মপুত্র’ উৎসবের এক অনুষ্ঠানেও যোগদান করবেন। এর পর আগামীকাল যাবেন উজান অসমের ডিব্রুগড়ে। সেখানে ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে যোগদান করে সোজা চলে যাবেন অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াঙে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *