BRAKING NEWS

অমানবিক শ্মশান

tripuraআগরতলা পুর নিগম নিয়ন্ত্রিত বটতলা মহাশ্মশানেও চরম অমানবিকতার নিদর্শনে জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়াছে৷ অন্তিম যাত্রাতেও এই নোট সংকট যেন পিছু ছাড়িতেছে না৷ বটতলা মহাশ্মশানে মৃতদেহ সৎকার করাইতে গিয়া হয়রানির শিকার হইতেছেন শোকাতুর স্বজনরা৷ মনে হয়, জানিয়া বুঝিয়াই এই অমানবিক নিদর্শন রাখিয়াছে মহাশ্মশানের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুর কর্মীরা৷ যেখানে সরকারী নির্দেশ আছে শ্মশানেও পুরনো পাঁচশ হাজার টাকার নোট গ্রাহ্য হইবে৷ সেখানে বটতলা মহাশ্মশান এক কলংকিত অধ্যায় রচনা করিল বলা যাইতে পারে৷ অন্তিম যাত্রাতে বটতলা মহাশ্মশানের এই ভূমিকার দায় আগরতলা পুর নিগম এড়াইতে পারে না৷ কিন্তু, প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ কর্মচারীরা যেন শ্মশানযাত্রীদের কাছে অসাধারণ হইয়া উঠেন৷ তাহাদের সঙ্গে একশ্রেণীর ধান্দাবাজরা যুক্ত হইয়া শ্মশানের পরিবেশও প্রশ্ণের মুখে নিয়া দাঁড় করাইয়াছে৷
এই প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা যেন ভুলিয়া যান যে, এই মৃত্যু পথ যাত্রী হইতে হইবে সকলকেই৷ কবির ভাষায় জন্মিলে মরিতে হইবে ‘অমর কে কোথা কবে’৷ এই চরম সত্যির মুখোমুখি দাঁড়াইয়াও আমরা অবলীলায় হানাহানি, স্বার্থবাজী, অমানবিকতা চালাইয়া যাই৷ বটতলা শ্মশানঘাটিকে আধুনিকতায় মোড়া হইয়াছে৷ মৃতদেহ সৎকারের ক্ষেত্রে পুর নিগম বা রাজ্য সরকারের ইহা প্রশংসনীয় উদ্যোগ সন্দেহ নাই৷ এই মহতী উদ্যোগে মানবিক আবেদন যদি মিশ্রিত না হয় তাহা হইলে শোকাতুর মানুষের বিড়ম্বনা বাড়িয়াই যাইবে৷ আমাদের পুরাণে বর্ণিত আছে রাজা হরিশচন্দ্রও শ্মশানে মৃতদেহ সৎকারের কাজ করিতেন৷ শ্মশানের ইতিহাস আমাদের সভ্যতার ঊষালগ্ণ হইতেই৷ পুরাণে বর্ণিত কাহিনীই বলিয়া দেয় শ্মশান সেই যুগ যুগান্তের হাত ধরিয়া আসিয়াছে৷ সেই সময় কাঠ ইত্যাদির মাধ্যমেই মৃতদেহ সৎকার হইত৷ আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ইলেট্রিক চুল্লীতে নিমেষে মৃতদেহ সৎকার হইয়া যাইতেছে৷ যাহারা ঐতিহ্যের অনুসারী তাহারা অবশ্য কাঠ দিয়াই দেহ দাহ করিতেছেন৷ কিন্তু, এখন কাঠ বাঁশও দুষ্প্রাপ্য হইয়া যাইতেছে৷ বটতলা মহাশ্মশান আধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশে মৃতদেহ দাহের ক্ষেত্রে এক অনন্য ভূমিকা রাখিতেছে৷ সম্ভবত, উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্য কোনও রাজ্যে এমন আধুনিক শ্মশানের খোঁজ মিলিবে না৷ যদি তাহা সত্যি হয়, তাহা হইলে আগরতলা পুর নিগম নজীর রাখিয়াছে বলা যাইতে পারে৷ মানুষের অন্তিম যাত্রায় যাহাতে শোকাতুর মানুষের হয়রানি হইতে না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখিয়াই মহাশ্মশানের আধুনিক সুবিধা সন্নিবেশিত হইয়াছে৷ সেখানে শুক্রবার মৃতদেহ সৎকারে গিয়া নোট বিড়ম্বনার ঘটনা চরম অমানবিক ও কলংকজনক ঘটনা ছাড়া কিছুই নয়৷ পুর নিগমের উচিত শ্মশানঘাটের দায়িত্বে দায়িত্বশীল কর্মী নিয়োগ করা৷ কেন পুরনো পাঁচশ ও হাজার টাকার নোট নিতে অস্বীকার করিয়া শোকে কাতর স্বজন হারা মানুষকে হয়রানি করা হইল৷ সংশ্লিষ্ট ঘটনার যথাযত তদন্ত করিয়া সংশ্লিষ্ট কর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নিতেই হইবে৷ অবশ্য এক্ষেত্রে হগব পন্থী হইলে তো সাত খুন মাপ হইয়া যায়৷ এই ভাবে আজ সরকারী ও নিগমের অফিসের হাল শোচনীয় হইতেছে৷ কর্মসংসৃকতি গোল্লায় গিয়াছে৷ মহাশ্মশানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের অমানবিক ও কলংকিত আচরণ তাহাই প্রমাণ করিয়া দিয়াছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *