আগামী অর্থবছরে জিএসটি চালু হলেই মধ্যবিত্তের হেঁসেলে লাগবে আগুন, চিন্তায় কৃষকরা, বাড়বে কীটনাশকের দামও

TAXনয়াদিল্লি, ২০ অক্টোবর ৷৷ বহু প্রতীক্ষিত জিএসটি কার্যকর হলে মধ্যবিত্তের হেঁসেলে আগুন লাগবে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ কেন্দ্রের প্রস্তাবিত চার স্তরীয় পণ্যপরিষেবা কর বা জিএসটিতে করের যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে তাতে ভোজ্য তেল, মশলা এমনকি মুরগির মাংসেরও দাম বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে৷ তবে সুখবরও রয়েছে৷ কারণ, কমতে পারে টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন এবং এসির দাম৷ দেশের কর বিশেষজ্ঞ মহল এই অনুমান করছে৷ ফলে, ক্ষুধা নিবারণে খাবার তৈরিতে অত্যাবশকীয় কিছু সামগ্রীর দাম বৃদ্ধিতে মধ্যবিত্তের মাথায় বাজ পড়বে বলেই আশঙ্কা৷
তবে, সবচেয়ে চিন্তার বিষয় কৃষকদের নিয়ে৷ সূত্রের খবর, দাম বাড়তে পারে কীটনাশকের৷ ফলে, এই জিএসটি কার্যকর হলে মাথায় বাজ পড়তে পারে কৃষকদেরও৷
আগামী অর্থবর্ষ থেকেই সারা দেশে কেন্দ্র চালু করার কথা ভাবছে এক দেশ এক কর বা জিএসটি৷ তার আগে চলতি সপ্তাহে রাজ্যগুলির সঙ্গে এই প্রসঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্র৷ সেখানে চারস্তরীয় কর ব্যবস্থা প্রস্তাব দেওয়া হয় কেন্দ্রের তরফে৷ আর তাতেই উঠে আসে মধ্যবিত্তের ঘাড়ে মূল্যবৃদ্ধির বোঝা চাপার বিষয়টি৷
সূত্র অনুসারে জানা গেছে, প্রস্তাব অনুযায়ী সর্বনিম্ন করের হার ৬ শতাংশ৷ অন্যদিকে, সর্বোচ্চ করের হার ২৬ শতাংশ৷ এর মাঝে দুটো স্বাভাবিক করের হারের স্তর রাখা হয়েছে৷ তা যথাক্রমে ১২ ও ১৮ শতাংশ৷ এখানে প্রশ্ণ উঠেছে ২৬ শতাংশ হার কোন কোন সামগ্রীর উপর বসানো হবে৷ সূত্রের দাবি, ২৬ শতাংশ হার মূলত এফএমসিজি এবং খাদ্য পণ্যের উপর বলবৎ হবে৷ পাশাপাশি যে সমস্ত পণ্য দূষণ ছড়ায় সেগুলির ওপরও অতিরিক্ত সেস বসানো হবে৷
জানা গেছে, কেন্দ্রের প্রস্তাব কার্যকর হলে মুরগির মাংস এবং নারিকেল তেলের দাম এক লাফে বেড়ে যাবে৷ কারণ, বর্তমানে এই দুই পণ্যের উপর ৪ শতাংশ কর প্রযোজ্য হয়৷ পণ্য পরিষেবা কর বা জিএসটি’র ফলে তা বেড়ে ৬ শতাংশ হবে৷ একই ভাবে অন্যান্য ভোজ্য তেল, সরিষার তেল, বাদাম তেলে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬ শতাংশ হবে৷ রান্নার কাজে ব্যবহৃত প্রধান দুটি পণ্য মধ্যবিত্তের জন্য মারাত্মক চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ হলুদ ও জিরে৷ এই দুই পণ্যের হার এক লাফে ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে৷ শুধু তাই নয়, বাড়তে পারে ধনে, গোলমরিচ এবং তৈলবীজের দাম৷ সূত্রের খবর, এই পণ্যগুলির কর ৫ শতাংশ থেকে আরো ১ শতাংশ বৃদ্ধি করা হতে পারে৷ এদিকে, দাম বাড়বে গ্যাস স্টোভ, গ্যাস বার্নার, মশা তাড়ানোর যন্ত্র বা কয়েলেরও৷ ফলে, কেন্দ্রের বহু প্রতীক্ষিত পণ্য পরিষেবা কর আগামী অর্থবছরে চালু হলে নিত্য প্রয়োজনীয় বেশ কয়েকটি পণ্য নিয়ে মধ্যবিত্তের কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়বে বলেই অনুমান৷
তবে, কয়েকটি ক্ষেত্রে জিএসটি চালু হলে মধ্যবিত্তের জন্য সুখের হবে৷ জিএসটির ফলে দাম কমতে পারে টেলিভিশন, ওয়াশিং মেশিন, ইনভার্টার, বৈদ্যুতিন পাখা, বৈদ্যুতিন রান্নার সরঞ্জাম, রেফ্রিজারেটর, বাতানুকুল যন্ত্র সহ বেশ কিছু পণ্যের৷ এখন এই জিনিসগুলির উপর ২৯ শতাংশ কর চাপানো আছে৷ জিএসটি চালু হলে সেই হার কমে হবে ২৬ শতাংশ৷ এছাড়াও সস্তা হতে পারে বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য৷ সুগন্ধী, শেভিং ক্রিম, মাথায় মাখার তেল, শ্যাম্পু, সাবান, বডি পাউডার সহ বিভিন্ন টয়লেটরিজের দামও ৩ শতাংশ কমতে পারে৷
ফলে, জিএসটি চালু হলে হেঁসেল সামলানো মধ্যবিত্তের কাছে মুশকিল হলেও কিছু কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে দাম কমিয়ে সমতা রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ এমনটাই মনে করছে কর বিশেষজ্ঞ মহল৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *