নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ সেপ্ঢেম্বর৷৷ সততা এবং শুদ্ধতার অন্যতম নিদর্শন সোনা৷ অলঙ্কার নারীদের আভূষণের প্রধান সরঞ্জাম৷ তাই এবার মা দুর্গাকে সোনার গয়নার আভূষণে মোড়ে দিয়েছে আগরতলার ছাত্রবন্ধু ক্লাব৷ চার কোটি টাকার গয়নায় সাজানো হয়েছে মা দুর্গাকে৷ পশ্চিমবঙ্গের হাবড়ার গ্রামের কৃতি শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পোদ্দারের বুদ্ধির খেলা এবার রাজ্যবাসী দুর্গোৎসবে দেখবেন বলে দাবি আয়োজকদের৷ গত রবিবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যে স্বর্ণ দুর্গা কড়া পাহারায় এসে পৌঁছেছে৷ চতুর্থীর দিন উদ্বোধন করা হবে সোনার গয়নায় মোড়া দুর্গা প্রতিমা৷ ওইদিন থেকেই সোনার গয়নার অভিনব কারুকৃতি দেখতে সকলের জন্য প্যান্ডেল উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে৷ ছাত্র বন্ধু ক্লাবের পুজা কমিটির সম্পাদক অশোক ঘোষ জানিয়েছেন, এরাজ্যের গর্ব দীপা কর্মকার চতুর্থীতে স্বর্ণদুর্গা প্রতিমা উদ্বোধনে থাকবেন৷ তবে, যদি দীপা ৪ অক্টোবর দিল্লি চলে যান তাহলে ২ অক্টোবরই উদ্বোধন করা হবে স্বর্ণদুর্গা৷ সাথে এবছরই প্রথম এরাজ্যে ছাত্রবন্ধু ক্লাব থিমসংয়ের উদ্বোধন করবে৷
এদিন শ্রীঘোষ জানিয়েছেন, অত্যাধুনিক গুণমান সম্পন্ন ফাইবার দিয়ে বানানো হয়েছে দুর্গা প্রতিমা৷ তাতে কলকাতার বিখ্যাত একটি জুয়েলারি সংস্থা তাদের স্বর্ণের গয়না প্রদর্শনী করেছে৷ দেবী দুর্গা সহ কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর প্রতিমাতেও একইভাবে সোনার গয়না দিয়ে সাজানো হয়েছে৷
তিনি জানান, হাবড়ার বাণীপুর মনসা বাড়ি এলাকার তরুণ শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পোদ্দারের দীর্ঘদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে ত্রিপুরাবাসী নতুন দুর্গাপ্রতিমা দর্শন করবেন৷ এই প্রতিমা তৈরির কাজ গত এপ্রিল মাসে শুরু হয়েছে৷ উত্তর ভারতীয় শিল্পের আদলে প্রতিমা তৈরি হয়েছে৷ তামিলনাড়ুর ভেলোরে অবস্থিত স্বর্ণমন্দিরের থিমেই প্যান্ডেল বানানো হচ্ছে৷ তিনি জানান, গত এপ্রিল মাস থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে চলেছিল প্রতিমা তৈরির কাজ৷ শিল্পীর বাড়িতে বসানো হয়েছিল পুলিশ ক্যাম্প৷ সেখানে সর্বক্ষণ ১০-১৫ জন পুলিশ কর্মী মোতায়েন ছিলেন৷ প্রতিমা তৈরির স্থান থেকে শিল্পীর বাড়ি এবং আশপাশ এলাকায় প্রায় ৩০টি স্থানে উন্নতমানের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছিল৷ লাইফ ক্যামেরায় নজরদারি রেখেছিল পুলিশ৷ রবিবার আগরতলা বিমানবন্দর থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এই প্রতিমা আনা হয়েছে৷ দুর্গোৎসবের সময় রাজ্য পুলিশ প্রশাসন প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদান করবে বলে ছাত্রবন্ধু ক্লাবকে আশ্বস্ত করেছে৷ এছাড়াও ক্লাবের তরফে বেসরকারিনিরাপত্তা কর্মী ৩৫ জন মোতায়েন করা হবে৷ থাকবে ২০টি সিসি ক্যামেরা৷ এছাড়াও ক্লাবের ভলান্টিয়াররা নিরাপত্তার বিষয়ে সহযোগিতা করবেন৷ শ্রীঘোষ জানিয়েছেন, স্বর্ণদুর্গা প্রতিমার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার প্রশ্ণে রাজ্য পুলিশের সাথে ক্লাব কর্মকর্তাদের আলোচনা হয়েছে৷
এদিকে, দুর্গোৎসবের সময় ভিড়ের কথা মাথায় রেখে আয়োজকরা সমস্ত রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷ শ্রীঘোষ জানান, সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে পুজো দেখতে আসা সকলের মধ্যে সন্ধ্যা সাতটা থেকে প্রসাদ বিতরণ করা হবে৷ কারণ, মফস্বল থেকে অনেকেই আসেন যারা দীর্ঘ সময় ধরে পুজো দেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েন৷ অথচ ক্ষিদে লাগলে রাস্তা থেকে কিছু কিনে খাওয়ার সামর্থ অনেকেরই থাকে না৷ তাদের এবং অন্যান্যদের কথা চিন্তা করে ক্লাব কর্মকর্তারা পুজোর তিনদিন ঢালাওহারে প্রসাদ বিতরণের আয়োজন করবে৷
শ্রীঘোষ দাবি করে বলেন, এবারের পুজোয় রাজ্যবাসীকে অভিনব চিন্তাধারার প্রতিফলনের লক্ষ্যেই এই সাহসী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ তবে, এবারের পুজোয় বাজেট সম্পর্কে তিনি স্পষ্টভাবে কিছু জানাতে পারেননি৷ তার মতে, চার কোটি টাকার গয়না দিয়ে দুর্গা প্রতিমা সাজানো হওয়ার অর্থ এই নয় বাজেট চার কোটি টাকা৷ তবে, গত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি এবছর খরচ হবে পুজোতে৷ তিনি দাবি করে বলেন, রাজ্যে ছাত্রবন্ধু ক্লাবের বাজেটেই সবচেয়ে বেশি৷
এদিন তিনি আরো জানান, আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু কেবল স্বর্ণদুর্গা প্রতিমা নয়৷ আলোকসজ্জাও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে৷ দীপা কর্মকারের বিশ্ববিখ্যাত পদুনোভা ভল্ট সহ আরো অনেক কিছু দেখানো হবে আলোকসজ্জার মাধ্যমে৷ সবমিলিয়ে এবারের পুজোয় গোটা রাজ্যে অন্যতম আকর্ষণ এই দুর্গাপ্রতিমা, দাবি ছাত্রবন্ধু ক্লাব কমকর্তাদের৷
পুজো কমিটির সম্পাদক জানিয়েছেন, প্যান্ডেলের পাশেই মাটির তৈরি দুর্গাপ্রতিমা রাখা হবে৷ যেখানে পুজো হবে৷ দশমীর পরদিনই এই দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জন করবে ক্লাব৷ এরপর স্বর্ণদুর্গার স্বর্ণালঙ্কারগুলি যথাস্থানে ফিরে যাবে৷