বাংলা ও ত্রিপুরায় তৃণমূলকে রাজনৈতিক ভাবে প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে

নয়াদিল্লী, ১৯ সেপ্ঢেম্বর৷৷ বাংলার সাথে ত্রিপুরায়ও সিপিএমের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ সিপিএম CPIMকেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এই দুই রাজ্যে তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ একই সঙ্গে ত্রিপুরায় কিভাবে তৃণমূলকে রাজনৈতিক দিক দিয়ে প্রতিহত করা যায় সেই বিষয় নিয়েও উক্ত বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে সংবাদ সূত্রে জানা গিয়েছে৷ গত ২৩ আগষ্ট আগরতলায় উপজাতি ভিত্তিক রাজনৈতিক দল আইপিএফটির মিছিলকে কেন্দ্র করে যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এই সংঘর্ষের নেপথ্যে তৃণমূল কংগ্রেস রয়েছে বলে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে৷ এছাড়া এই বৈঠকে সিপিএমের সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়েও আলোচনা হয়েছে৷ বিশেষ করে কোলকাতা প্লেনামে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সেই সিদ্ধান্তকে কার্য্যকর করে দলের সাংগঠনিক শক্তি আরও বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এই বৈঠকে৷
১৭ থেকে ১৯ সেপ্ঢেম্বর পর্যন্ত দিল্লীতে হয় সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক৷ বৈঠকে ত্রিপুরা, বাংলা এবং কেরালা সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন৷ এই বৈঠকে দেশের এবং বিভিন্ন রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ বৈঠকে কি কি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা এদিন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সাংবাদিক সম্মেলনে তুলে ধরেন৷ দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা শহরে গত ২৩ আগষ্ট আইপিএফটির মিছিলকে কেন্দ্র করে যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে তার পেছনে তৃণমূল কংগ্রেসের হাত রয়েছে৷ তৃণমূল সক্রিয়ভাবে এই সংঘর্ষের সাথে যুক্ত রয়েছে বলে সিপিএমের দাবি৷ দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে৷ দল মনে করে ত্রিপুরার জনগণ এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে এবং আগামীদিনে এই ধরনের ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে দল রাজনৈতিক ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে৷ কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে৷ এই প্রসঙ্গে দলের বক্তব্য হচ্ছে, বাংলায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস সন্ত্রাসের রাজত্ব চালিয়েছে৷ বিজেপিকে সাথে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বাংলায় সিপিএম কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা হুজ্জতি চালিয়ে যাচ্ছে৷ বাংলার বিভিন্ন স্বশাসিত সংস্থাগুলিতে তৃণমূল কংগ্রেস বাহুবল ও অর্থবল দিয়ে দখল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ এই চেষ্টার বিরুদ্ধে সিপিএম কর্মী সমর্থকরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গেলেই হিংসার পথ অবলম্বন করছে তৃণমূল কংগ্রেস৷
কেরালা প্রসঙ্গে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে৷ এই রাজ্যে ল্যাফট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার একশ দিনের মধ্যে যেসব প্রতিশ্রুতি নির্বাচনে দিয়েছিল তার সিংহভাগ পুরণ করেছে৷ দল মনে করছে বিজেপি এবং আরএসস কেরালার সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে৷ হিংসার বাতাবরণ সৃষ্টির চেষ্টা করছে বিজেপি ও আরএসএস৷ সিপিএমের দাবি এই ধরনের হিংসার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলবে কেরালার শান্তিপ্রিয় জনগণ৷
সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির এই বৈঠকে, দেশের অভ্যন্তরিণ নিরাপত্তা নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে৷ এই প্রসঙ্গে সিপিএমের বক্তব্য হচ্ছে, বিজেপির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার যে বিদেশ নীতি অনুসরণ করছে তা দেশের পক্ষে বিপজ্জনক৷ জম্মু ও কাশ্মীরে চলমান হিংসার বিষয়েও কেন্দ্রকেই বিধলেন সিপিএম কেন্দ্রীয় নেতৃত্বরা৷ গো রক্ষা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের যে উদ্যোগ তারও সমালোচনা করা হয়েছে সিপিএমের পক্ষ থেকে৷ সংখ্যালঘু তথা দলিত নির্যাতনের বিরুদ্ধে আগামীদিনে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সিপিএম দেশব্যাপী আরও বৃহত্তর গণআন্দোলন সংগঠিত করবে৷
সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির এই বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে বেকার সমস্যা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জমি অধিগ্রহণ, রেগার মজুরি বৃদ্ধি সহ সামাজিক ভাতা প্রদানে কেন্দ্রীয় সরকারের নেতিবাচক ভূমিকার বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *