মাজুলি (অসম), ০৮ সেপ্টেম্বর, (হি.স.) : রাজ্যে পরিবর্তন এসেছে কিনা বলে যাঁরা ব্যঙ্গ করেন, তেমন বিরোধীদের মুখে ঝামা ঘষে জবাব দিয়েছেন শিক্ষা-স্বাস্থ্য-অর্থ মন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তাঁর কটাক্ষ, যাঁরা পনেরো বছরে কিছুই করতে পারেনি তাঁরা তিন মাস বয়সি সরকারের কাছে পরিবর্তনের হিসাব চায়, যে সব বিপ্লবী নেতা পনেরো বছরে অসমে কী ঘটেছে তা দেখে না তারা একশো দিনের সরকারের পরিবর্তনের মূল্যায়ন করে কোন মুখে। মন্ত্রী বলেন, তাঁদের সরকার বিপ্লবের মাধ্যমে পরিবর্তন নয়, মানুষের জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। বলেন, তিন মাসে তাঁরা পরিবর্তন করতে পারেননি ঠিক, তবে পরিবর্তনের নতুন যাত্রা শুরু করেছেন। পরিবর্তনের এক নতুন ইতিহাস রচনা করতে চান তাঁরা। এই সরকার মানুষের জন্য কাজ করতে চায়। বলেন, পরিবর্তন বিস্তৃত হচ্ছে। তাঁর ব্যাখ্যা, বিগত তরুণ গগৈ সরকারের আমলে রাজস্ব বৃদ্ধির হার মাসে ছিল মাত্র ২ শতাংশ। কিন্তু বর্তমান তিন মাসের সরকারের আমলে সেই হার বেড়ে হয়েছে ১৫ শতাংশ। এটাই পরিবর্তন। উদাহরণ দিয়ে বলেন, মাজুলিতে অনুষ্ঠিত আজকের অসম সরকারের ক্যাবিনেট বৈঠকে পূর্ত, জলসম্পদ, জলসেচ, কৃষি ইত্যাদি বিভাগ খাতে ১৪০০ কোটি টাকা টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত এই টাকায় কিছুটা হলেও বন্যা সমস্যা, নদী ভাঙন সমস্যা, বাঁধ সমস্যা, রাস্তাঘাট, স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা সমাধান করা যাবে।
পরিবর্তন স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও আসবে। মাজুলিতে নির্বাচনের আগে প্রদত্ত ক্যানসার রোগীদের দু-লক্ষ টাকা করে অর্থ সাহায্য সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হচ্ছে। আর মাত্র এক মাস, ২ অক্টোবর এই কর্মসূচির সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তাছাড়া, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যে আরও পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার অঙ্গীকার করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র এক মাস পর মাধ্যমিকের ফলাফল বের হয়। শুনেছেন, মাজুলির অমুক গ্রামের, অমুক অতি দরিদ্র পরিবারের এক ছাত্র স্ট্যান্ড করেছে। অমুক গ্রামের গরিব পরিবারের অমুক সন্তান স্টার নম্বর পেয়েছে। তাদের উচ্চশিক্ষায় টান পড়ে। তখনই রাজ্যের বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, অসমের সকল দরিদ্র পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে পড়াশুনার ব্যবস্থা করা হবে। সেই সিদ্ধান্ত আজ বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের বিনামূল্যে বইপত্র দেওয়া হচ্ছে। আগামীদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের ছাত্রছাত্রীদেরও বিনামূল্যে বইপত্র জোগান ধরা হবে। তাঁর সরকার এসে কলেজ স্তরে বিনামূল্যে ভরতি হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আগামী দিনে তা-ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে জানান শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব। তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী মাজুলিতে কটন কলেজের মতো একটি সরকারি কলেজও আগামী বছরের মধ্যে স্থাপন করা হবে। হায়ার সেকেন্ডারি থেকে পোস্ট গ্যাজুয়াট স্তর পর্যন্ত পড়ার সুযোগ থাকবে বলে জানান মন্ত্রী শর্মা।
এমন পরিবর্তন অসমের সর্বত্র অঙ্কুরিত করতে চায় বর্তমান সরকার। আগামী ১ অক্টোবর থেকে রাজ্যের ৮০ হাজার মধ্যাহ্ন ভোজনের কর্মীরা তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাবেন। এজন্য কারোর কাছে হাত পাততে হবে না।
মাজুলি কেবল অসমেরই নয় গোটা ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক রাজধানী বলে আখ্যা দেন মন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।