চিকিৎসক স্বল্পতা নিরসনে এজিএমসিতে পড়ার জন্য শর্ত লাগাবে রাজ্য সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ আগস্ট৷৷ চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি শিক্ষা

সোমবার আগরতলা সরকারী মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ নিজস্ব ছবি৷
সোমবার আগরতলা সরকারী মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ নিজস্ব ছবি৷

নিয়ে বর্হিরাজ্যে পেশাগত কাজে যাওয়া চলবে না বলে কড়া বার্তা দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী বাদল চৌধুরী৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাফ কথা, আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করে এরাজ্যের রোগীদের সেবায় নিয়োজিত হতে হবে৷ এজন্য ডাক্তারি শিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে নিয়মাবলী আরো কঠোর করার পাশাপাশি শর্ত লাগানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন৷ এই কঠোর সিদ্ধান্তের পেছনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মানবিক বোধ হারিয়ে ফেলার বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন৷ সোমবার আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবস অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সমস্ত পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে এই বার্তা দিয়েছেন৷
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে বলেন, চিকিৎসকের সাফল্য নির্ভর করে চিকিৎসিত রোগীর সন্তুষ্টির উপর৷ এক্ষেত্রে যে ঘাটতি রয়েছে সে কথা স্বীকার করে মুখ্যমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ তিনি স্পষ্ট বলেন, রোগীদের সন্তুষ্টির ক্ষেত্রে এরাজ্যে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে৷ এই ঘাটতি পূরণ করতে হবে৷ ভালো চিকিৎসকের সঙ্গে ভালো মানুষও হতে হবে৷ পাশাপাশি পড়ুয়াদের উৎকর্ষতা বাড়ানোর জন্য অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের যথেষ্ট দায়িত্ব রয়েছে তা তিনি মনে করিয়ে দেন৷
তবে, এদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজ্যে চিকিৎসক স্বল্পতার পেছনে যে কারণ তুলে ধরেছেন তা রীতিমত অবাক করার মত৷ তিনি জানান, ২৬৯ জন চিকিৎসক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল৷ এর মধ্যে কেবল ২১ জন আবেদন করেছেন৷ চিকিৎসকদের বেতনক্রম তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী নয়, সে কারণেই রাজ্য সরকারের অধীন হাসপাতালগুলিতে চাকুরি করার জন্য আবেদনের হার খুবই কম বলে তিনি জানিয়েছেন৷ সাথে উদ্বেগ প্রকাশ করে এও বলেছেন, রাজ্য সরকার পরিচালিত মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করার পর নব্য চিকিৎসকরা বর্হিরাজ্যে চলে যাচ্ছেন৷ তাঁরা এরাজ্যে আসতে চান না৷ ফলে, এখন রাজ্য সরকারকেই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে৷ তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে নিয়মাবলী আরো কঠোর করা হবে৷ সেক্ষেত্রে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হবে৷ কারণ, এই মেডিকেল কলেজে পড়ে যারা চিকিৎসক হয়েছেন তাঁদের দায়িত্ব রয়েছে রাজ্যবাসীকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার৷ এই দায়িত্ব পালন করার জন্য বর্তমানে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রী এবং এই কলেজ থেকে বেরনো চিকিৎসকদের আহ্বান জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রী৷ তাতে যতদূর ধারণা করা হচ্ছে, আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস কোর্স করার পর রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত রোগীদের সেবায় নিয়োজিত হতে হবে৷
এদিকে, স্বাস্থ্য সচিব এম নাগারাজু বিভিন্ন প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকদের ভূমিকা নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন৷ তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, রাজ্যের বহু প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে যেখানে চিকিৎসকরা গর্ভবতী মহিলাদের প্রসব করাতে সাহস পান না৷ প্রসব যন্ত্রণায় কাতর গর্ভবতী মহিলাদের জেলা হাসপাতালগুলিতে রেফার করা হয় প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে৷ তিনি ঐ সমস্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রসবের জন্য কোন গর্ভবতী মহিলাকে অন্যত্র পাঠানো চলবে না৷ চিকিৎসকদের সে দায়িত্ব পালন করতেই হবে৷
এদিন, মেডিকেল কলেজের কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের আয়োজন করা হয়৷ আলোচনার শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এই মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলার পেছনে যারা নানা ভাবে সাহায্য করেছেন তাদের অভিনন্দন জানান৷ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান এগুচ্ছে৷ বিজ্ঞানের অগ্রগতি না হলে সভ্যতার বিকাশই আটকে যাবে৷ ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ্যবই সময়ে চিকিৎসার কাজে এই জ্ঞান তারা প্রয়োগ করতে পারবে৷
এদিন এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনটি সংস্থা রাজ্যে ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে৷ একশ শয্যার একটি হাসপাতালও করতে চায় তারা৷ এজন্য জমি দেখতে পশ্চিম জেলার জেলা শাসককে বলা হয়েছে৷ এছাড়া, জিবি হাসপাতালে সুপার স্পেশালিটি ব্লক তৈরী করতে ১৪৪ কোটি টাকা মঞ্জুরিও পাওয়া গেছে৷ এদিকে, এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ জে কে দেববর্মা, পরিবার কল্যান দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ এন ডার্লং৷ কলেজের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেন এ জি এম সি-র অধ্যক্ষ অধ্যাপক কমল কৃষ্ণ কুন্ডু৷ স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক এন বি সিং৷ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মেডিকেল এডুকেশনের অধিকর্তা অধ্যাপক বাসুদেব ভট্টাচার্য৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *