রাজ্যব্যাপী চাক্কা জ্যাম করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও পেট্রোপণ্যের সংকটের প্রতিবাদ তৃণমূলের, হালাহালিতে সিপিএম তৃণমূলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আহত সাতজন, হাসপাতালেও ক্যাডার হামলা

CHAKKA JAMনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/কমলপুর/তেলিয়ামুড়া/খোয়াই/ চড়িলাম/ কৈলাসহর/ উদয়পুর, ২৩ জুলাই৷৷ তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব ঘোষিত চাক্কা জ্যাম আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ধলাই জেলার কমলপুরের হালাহালি এবং বিমল সিনহা মেমোরিয়াল হাসপাতালে আন্দোলকারী এবং সিপিএম ক্যাডার বাহিনীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে একজন সরকারী কর্মচারী সহ উভয় দলের মোট ৭ জন রক্তাক্ত হয়েছেন৷ তাদের প্রত্যেককে বিমল সিনহা মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে৷ পুলিশের পদস্থ আধিকারীকরা এসে পরিস্থিতি সাময়িক নিয়ন্ত্রণে আনেন৷ আন্দোলনকারী তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ এই ঘটনার জন্য একদিকে যেমন শাসক দল সিপিআইএমকে দায়ি করেছে, ঠিক তেমনি পুলিশ প্রশাসনকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন৷ তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ আগাম ঘোষণা সত্বেও পুলিশের সামনে সিপিএম’র ক্যাডার বাহিনী কিভাবে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালাতে সক্ষম হল৷ এর দায় কোনভাবেই আরক্ষা প্রশাসন এড়াতে পারে না৷ পক্ষান্তরে সিপিআইএম’র অভিযোগ, বিনা প্ররোচনাতেই তাদের কর্মী সমর্থকদের উপর আন্দোলনকারীরা হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করেছে৷
তৃণমুল কংগ্রেসের চাক্কাজ্যাম কর্মসূচীতে কেন্দ্র করে কমলপুরে দফায় দফায় তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিএমের মধ্যে সংঘের্ষ বাঁধে৷ এতে একজন সরকারী কর্মীসহ উভয়দলের ৭জন সমর্থক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ আহতরা হল-রতন চন্দ (টিএমসি), অমর ভট্টচার্য্য (সিপিএম), অনিল দাস (টিএমসি), প্রদীপ চন্দ (টিএমসি), অজয় চৌধুরী (টিএমসি), গৌরাঙ্গ দাস (টিএমসি) প্রমুখ৷ আহতরা সকলেই কমলপুর বিএসএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার সকালে হালাহালি বাজারে৷ এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের চাক্কাজ্যাম কর্মসূচী চলছিল গাড়ি আটকানো নিয়ে উভয় দলের সমর্থকদের মধ্যে প্রথমে বচসা হয় পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়৷ পরবর্তী সময়ে কমলপুর বিএসএম হাসপাতালে দ্বিতীয় দফায় সংর্ঘষ বাঁধে৷ পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে ঘটনা আয়ত্বে আসে৷ এব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা গৌতম বিশ্বাস এবং সিপিআইএম নেতা বসন্ত সিনহা প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে উভয়ে উভয়ের বিরুদ্ধে দোষারূপ করেন৷ ঘটনার খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার এসডিপিও চন্দন সাহাকে নির্দেশ দেন নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশে যাতে কোন দুর্বলতা না থাকে৷
সারা রাজ্যের সাথে তেলিয়ামুড়া ও তৃণমূলের ডাকা একঘন্টা চাক্কা জ্যাম কর্মসূচী পালিত হয়৷ এদিন তেলিয়ামুড়ার করইলং ও মহারানীপুরস্থিত পেট্রোল পাম্পের সামনে৷ চাক্কা জ্যাম কর্মসূচীটি অনুষ্ঠানটি হয়৷ এদিনের চাক্কা জ্যাম কর্মসূচীর নেতৃত্ব দেন অশোক কুমার বৈদ্য৷ সকাল দশটা নাগাদ জাতীয় সড়ক আটকে দিয়ে চাক্কা জ্যাম কর্মসূচী পালিত হয়৷ পথ অবরোধের ফলে দুই দিকের যানবাহন আটকা পরে যায়৷ সুকল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা অবরোধের বাইরে থাকলেও, শিক্ষক শিক্ষিকারা যথা সময়ে সুকলে উপস্থিত থাকতে পারেন নি৷
সারা রাজ্যের সাথে খোয়াইয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে এক ঘন্টার চাক্কাজ্যাম কর্মসূচী পালন করা হল শনিবার৷ রাজ্যের পেট্রোপণ্য সংকট ও কালোবাজারী, জাতীয় সড়কের বেহাল দশা এবং দ্রব্যমূল বৃদ্ধির প্রতিবাদে শনিবার বেলা দশটা থেকে এগারটা পর্যন্ত একঘন্টার চাক্কা জ্যাম এর ডাক দেয় রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস৷ খোয়াই ব্লক এলাকার চারটি জায়গাতে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে পথ অবরোধ করা হয়৷ খোয়াইয়ের নৃপেন চক্রবর্তী এভিন্যু, খোয়াই অফিস রোড, ভারত কল্যাণ সংঘ ক্লাব সংলগ্ণ রোডে এবং রামচন্দ্রঘাট চৌমূহনীতে পথ অবরোধ করে চাক্কা জ্যাম কর্মসূচী পালন করে তৃণমূল৷ তবে তৃণমূল কংগ্রেসের এই চাক্কা জ্যাম কর্মসূচীতে সুকল পড়ুয়া থেকে সরকারী কর্মচারীদের সবাইকেই সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়৷ অনেক ক্ষেত্রে সুকল পড়ুয়াকেও অবরোধের মুখে পড়তে হয়৷ প্রশাসনিক গাড়ীগুলিকে আটকে থাকতে হয় এক ঘন্টা যাবত৷ শনিবার তৃণমূল কংগ্রেস জেলা সভাপতি মনোজ দাস জানান, প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মী-সমর্থক খোয়াই ব্লক এলাকার চারটি স্থানে একঘন্টার চাক্কা জ্যাম কর্মসূচীতে অংশ নেয়৷
রাজ্যের অন্যান্য স্থানের সঙ্গে কৈলাসহরেও শনিবার সকাল দশটা থেকে এগারটা পর্যন্ত চাক্কা জ্যাম কর্মসূচী পালন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ পিসিসি সভাপতি তথা কৈলাসহরের বিধায়ক বীরজিৎ সিনহার বাড়ির সামনেই চাক্কা জ্যাম করে তৃণমূল৷ আজকের এই চাক্কা জ্যামে ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ অফিস যাত্রীদের গাড়ি সহ আরক্ষা দপ্তরের গাড়িও আটকে পড়ে চাক্কা জ্যামে৷ তবে, এদিনের আন্দোলন কর্মসূচীর নেতৃত্ব দেন দেবাশীষ দেব, সুভাষ সিনহা প্রমুখ৷ চাক্কা জ্যাম কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে কৈলাসহরে ছিল ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য ব্যাপী ১ ঘন্টার চাক্কা জ্যাম কর্মসূচীর অঙ্গ হিসাবে আজ উদয়পুরের ব্রহ্মাবাড়ীতে, কাকড়াবন এবং বাগমায় চাক্কা জ্যাম কর্মসূচী সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়৷ কাকড়াবনে নেতৃত্ব দেন অভিষেক দেবরায়, বাগমায় টিটন পাল এবং উদয়পুরে বিধায়ক প্রসজিৎ সিংহ রায় ও শীতল মজুমদার৷ সর্বত্র শান্তিপূর্ণ ভাবে এই কর্মসূচী পালিত হয়েছে বলে বানিয়েছেন এসডিপিও রাজেন্দ্র দত্ত৷ সুকলের ছাত্র/ছাত্রী ও অসুস্থ ব্যক্তিরা এই জ্যামের বাইরে ছিল৷ মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী৷
টিএমসি এক ঘন্টা চাক্কা জ্যাম করে মেলাঘড় থানাধীন আগরতলা সোনামুড়া রোডের নলছড়ের বিওসি এলাকায়৷
সারা ত্রিপুরার রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস এর ডাকে যে চাক্কা জ্যাম তথা ১ ঘন্টার বন্ধ তা যথাযথ ভাবে পালন করা হল বক্সনগর তৃণমূল কংগ্রেস এর কর্মীরা৷ এতে কলমচৌড়া থানার ওসি প্রভাত শীল ওনার বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে উপস্থিত ছিলেন৷ কারন বক্সনগরে শান্তী যাতে বিনষ্ট না হয় তার জন্য তার এই উপস্থিতি৷ তৃণমূলের দাবি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি রোধ , পেট্রোল ও ডিজেলের সংকট রোধ ইত্যাদি দাবি৷
শনিবার সকাল দশটায় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা বিশ্রামগঞ্জ বিওসির ও বিশালগড় ব্রীজ চৌমূহমীতে দ্রব্যমূল্যের আকাশ ছোঁয়া বৃদ্ধি, পেট্রোল ডিজেলের সংকট ও কালোবাজারী রোখতে এক ঘন্টার জন্য জাতীয় সড়কে চাক্কা জ্যাম কর্মসূচী পালন করে দু’তিনশ তৃণমূল কর্মী সমর্থক এই চাক্কা জ্যামে অংশগ্রহন করেন৷ বিশ্রামগঞ্জ বিওসির সামনে প্রাক্তন পিসিসি সদস্য দুলাল ঘোষ ও রাজ্য তৃণমূল যুব নেতা গোপীনাথ সাহার নেতৃত্বে এক ঘন্টার চাক্কা জ্যাম কর্মসূচী পালন করা হয়৷ চাক্কা জ্যামের সময় বক্তব্য রাখতে গিয়ে গোপিনাথ সাহা বলেন, ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস ময়দানে নেমে পড়েছে৷ তিনি আরও বলেন যে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর আকাশ ছোঁয়া দাম, পেট্রোল ও ডিজেল সংকট৷ কালো বাজারীর বিরুদ্ধে সরকার ব্যর্থ হয়েছে৷ তাই সারা রাজ্য শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চাক্কা জ্যাম কর্মসূচী অনুষ্ঠান পালন করা হয়৷ তিনি বলেন, কার্যত তৃণমূল কংগ্রেসের এই গতিকে দেখে শাসক দল অনেকটাই চিন্তিত হয়ে পড়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই৷ যদিও বিধানসভা নির্বাচনের দিন এগিয়ে আসার সাথে সাথে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কোন জায়গাতে গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই মূল বিষয়৷
এদিকে, তৃণমূলের এই চাক্কা জ্যাম আন্দোলনকে জনবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক বলে মন্তব্য করেছে সিপিআই (এম) রাজ্য কমিটি৷ দলের পক্ষ থেকে এদিন এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজ্যে জ্বালানি তেলের সংকটকে ইস্যু করে তৃণমূল কংগ্রেস দল ২৩ জুলাই ব্যস্তমত সময়ে রাজধানী আগরতলায় ও রাজ্যের কয়েকটি স্থানে চাক্কা জ্যাম আন্দোলনের নামে যে ভাবে যান জট সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে, সি পি আই (এম) ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের এই জনবিরোধী আন্দোলনের তীব্র নিন্দা করছে৷
এটা সবাই জানেন, জাতীয় সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের৷ কিন্তু কেন্দ্রের বিজেপি পরিচালিত সরকার এবং আসামের বিজেপি নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়কের আসামের লোয়াইরপোয়ায় জাতীয় সড়ক সংস্কার না করায় ত্রিপুরার আপাময় মানুষকে গত দু’মাসের বেশি সময় ধরে প্রচন্ড দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে৷ যাত্রী গাড়ী চলাচল, জ্বলানি তেল ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীবাহী যানবাহনের ত্রিপুরায় প্রবেশ দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে৷ শত শত যানবাহন দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে৷
ত্রিপুরা সরকার, ত্রিপুরার সাংসদগণ বার বার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দ্রুততার সাথে জাতীয় সড়কটি সংস্কার ও উন্নয়নের দাবি করে আসছে৷ আসাম সরকারের সাথেও বার বার প্রশাসনিক স্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত কেন্দ্র বা আসাম সরকার কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয় নি৷
ত্রিপুরা সরকার স্ব-উদ্যোগী হয়ে কাঠাঁলতলী সড়কটি মেরামত করে আংশিকভাবে জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্য আনার ব্যবস্থা করে আসছে৷ রেল পথে খাদ্য ও অন্যান্য পণ্য আনা হচ্ছে৷ জ্বালানি আনারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷
এসব জানা সত্ত্বেও তৃণমুল কংগ্রেস দলের নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় ও আসাম সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করে ত্রিপুরা সরকারকে দোষারোপ করে আগরতলা শহরে এবং রাজ্যের আরও কয়েকটি স্থানে এক ঘন্টা চাক্কা জ্যাম করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে৷ কমলপুর মহকুমার হালহালিতে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের ইট-পাথর ছুঁড়ে আতঙ্ক তৈরি ও কয়েকজনকে আহত করার ঘটনার পার্টি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে৷ গণতান্ত্রিক পথে ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলনের অধিকার সবার আছে৷ কিন্তু রোগী, শ্রমিক, শিক্ষক, কর্মচারী, ছাত্র সহ সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করা কোন মতেই গণতান্ত্রিক আন্দোলন হতে পারে না৷
রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী তৃণমুল কংগ্রেসের জনবিরোধী অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে, এদের জনবিচ্ছিন্ন করতে সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে৷