নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ জুলাই৷৷ পেট্রোলের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে রাজ্যে৷ রাজ্য প্রশাসন এমনটাই মনে করছে৷

উত্তর ত্রিপুরা জেলাশাসকের দেওয়া এক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, গত ১ জুলাই থেকে ৮ জুলাই বিকেল পর্যন্ত ৮০ ট্যাঙ্কার পেট্রোল এসেছে৷ ধরে নেওয়া যাক, নূ্যনতম এক ট্যাঙ্কারে ১২ হাজার লিটার পেট্রোল ধারণ ক্ষমতা থাকে৷ এই হিসেবে মোট ৯ লক্ষ ৬০ হাজার লিটার পেট্রোল রাজ্যে এসেছে৷ তাতে প্রশ্ণ উঠেছে এত তেল কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে৷ সম্প্রতি খাদ্য দপ্তর পেট্রোলে রেশনিং শুরু করেছে৷ দেরিতে হলেও এখন প্রতি দ্বিচক্র যানে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে পেট্রোল দেওয়া হচ্ছে৷ ফলে, প্রতিদিন যেভাবে পেট্রোল পাম্পগুলিতে জ্বালানি তেলের জন্য দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে এর পেছনে কি কারণ লুকিয়ে রয়েছে সে বিষয়েও নানা প্রশ্ণ উঠতে শুরু করেছে৷
তবে, এই সংকট আগরতলা শহর সহ শহরতলী এলাকা এবং কয়েকটি স্থানেই মারাত্মকভাবে দেখা যাচ্ছে৷ প্রশাসনিক সূত্রে খবর, অনেকেই একাধিকবার পৃথক পেট্রোল পাম্প থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করছে৷ তাতে কেবল রেশনিং করলেই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না৷ আমবাসা, কেলাসহর, কুমারঘাট, ধর্মনগর ইত্যাদি জায়গায় পেট্রোলের কোন সংকট নেই৷ দাবি উঠেছে, মহকুমা শাসকের মাধ্যমে পেট্রোল সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে৷ সেক্ষেত্রে দ্বিচক্র যান কিংবা গাড়ির ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন নাম্বার নথিভুক্ত করেই যাতে পারমিট ইস্যু করা হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে৷ এই সমস্ত পদ্ধতি অবলম্বন করলে পেট্রোলের নিয়ন্ত্রণ করা রাজ্য সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে বলে ধারনা৷ সেই সাথে বাড়াতে হবে নজরদারী৷ কারণ, পেট্রোলের কালোবাজারীতে ছেয়ে গেছে রাজধানী শহর ও শহরতলী৷ খাদ্য দপ্তরের ভিজিল্যান্স টিমের নিস্ক্রিয়তায় কালোবাজারীদের বাড়বাড়ন্ত, এমনটাই অভিযোগ৷ ফলে, পেট্রোল কালোবাজারী আটকানো সম্ভব না হলে সঙ্কট মোচন হবে না, তা একপ্রকার নিশ্চিত৷
উত্তর ত্রিপুরা জেলাশাসকের এক রিপোর্টে দেখা গেছে, ১ জুলাই ২২টি, ২ জুলাই ১৩টি, ৩ জুলাই ১৩টি, ৪ জুলাই ৪টি, ৫ জুলাই ৩ টি, ৬ জুলাই ২০টি, ৭ জুলাই ২টি এবং ৮ জুলাই বিকেল পর্যন্ত ৩টি পেট্রোলবাহী ট্যাঙ্কার রাজ্যে ঢুকেছে৷ এদিকে, ১ জুলাই ২৪টি, ২ জুলাই ৬টি, ৩ জুলাই ১৬টি, ৪ জুলাই ৯টি, ৫ জুলাই ৮ টি, ৬ জুলাই ৩১টি, ৭ জুলাই ১১টি এবং ৮ জুলাই বিকেল পর্যন্ত ১৪টি ডিজেলবাহী ট্যাঙ্কার ঢুকেছে৷ একইভাবে, ৩ জুলাই ৩টি, ৪ জুলাই ১টি, ৫ জুলাই ১টি, ৬ জুলাই ৮টি, ৭ জুলাই ২টি এবং ৮ জুলাই বিকেল পর্যন্ত ৩টি কেরোসিনবাহী ট্যাঙ্কার ঢুকেছে৷ এছাড়া, ২ জুলাই ৬টি, ৩ জুলাই ১৫টি, ৪ জুলাই ১৮টি, ৫ জুলাই ৫ টি, ৬ জুলাই ৭টি, ৭ জুলাই ১৬টি এবং ৮ জুলাই বিকেল পর্যন্ত ১০টি বুলেটবাহী গাড়ি ঢুকেছে৷
উত্তর ত্রিপুরা জেলাশাসকের এই রিপোর্টে অনেকটাই স্পষ্ট ডিজেল নিয়ে রাজ্যে কোন সংকট থাকার কথা নয়৷ এলপিজি অবশ্য চাহিদার তুলনায় জোগান কম রয়েছে৷ সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এলপিজি’র দেড় মাসের বেকলগ চলছে৷
এদিকে, পূর্ত দপ্তরের জাতীয় সড়ক শাখার মুখ্যবাস্তুকার দীপক দাস জানিয়েছেন, ৮নং জাতীয় সড়কে আসামের অংশে প্রায় ৮০০ গাড়ি আটকে পড়েছে৷ শুক্রবার এই পথে ২২টি গাড়ি এসেছে৷ গতকাল ৪৩টি গাড়ি প্রবেশ করেছে৷ ফলে, যে অনুপাতে ৮নং জাতীয় সড়ক দিয়ে গাড়ি প্রবেশ করছে তাতে ঐ ৮০০ গাড়ি ঢুকতে অনেকদিন সময় লাগবে৷ এদিন তিনি জানিয়েছেন, কাঁঠালতলী দিয়ে ২০৮এ জাতীয় সড়কে শুক্রবার ৮৪টি গাড়ি এসেছে৷ বৃহস্পতিবার ৪৬টি এবং বুধবার ১০৮টি গাড়ি ঐ সড়ক দিয়ে আসতে দেওয়া হয়েছে৷ প্রধানত পেট্রোপণ্যের ট্যাঙ্কারগুলি এবং যাত্রীবাহী বাস অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই সড়ক পথে আসতে দেওয়া হচ্ছে৷ বেশি লোড গাড়ি গুলি এই সড়কপথে নিয়ে আসা অনেকটাই ঝঁুকিপূর্ণ৷ তিনি জানান, কাঁঠালতলী সড়কটি মূলত এনইসি রোড৷ ফলে, জাতীয় সড়ক যে পদ্ধতিতে নির্মাণ করা হয় সে পদ্ধতি অনুসারে কাঁঠালতলী সড়কটি নির্মাণ করা হয়নি৷ এখন এই সড়কটি জাতীয় সড়কে উন্নীত হওয়ায় নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করেই এই সড়কের সংস্কার করা হবে৷