BRAKING NEWS

বাম শরিক আরএসপি’র রাজ্য সম্পাদক সুদর্শন ভট্টাচার্য্যের বিস্ফোরক মন্তব্য, বামফ্রন্ট মানুষের আস্থা হারিয়েছে, দায়ী বামেরাই

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৫ জুন ৷৷ বামফ্রন্টের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়েছে৷ আর এজন্য বামপন্থীরাই দায়ী৷ বুধবার

বুধবার আগরতলায় মুক্তধারা অডিটরিয়ামে সিপিআই নেতা প্রয়াত প্রশান্ত কপালীর স্মরণে স্মৃতিচারণ সভায় বামফ্রন্টের নেতৃবন্দ৷ ছবি নিজস্ব৷
বুধবার আগরতলায় মুক্তধারা অডিটরিয়ামে সিপিআই নেতা প্রয়াত প্রশান্ত কপালীর স্মরণে স্মৃতিচারণ সভায় বামফ্রন্টের নেতৃবন্দ৷ ছবি নিজস্ব৷

মুক্তধারা অডিটরিয়ামে প্রয়াত সিপিআই নেতা প্রশান্ত কপালির স্মরণ সভা মঞ্চে উপস্থিত বামফ্রন্টের অন্যান্য নেতৃত্বদের সামনেই আরএসপি রাজ্য সম্পাদক সুদর্শন ভট্টাচার্য এই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন৷ শুধু তাই নয়, খোঁচা দিয়েছেন সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকার এবং রাজ্য সম্পাদক বিজন ধরকেও৷ কটাক্ষের সূরে সুদর্শনবাবু তাঁদের বলেন, নতুন নতুন মানুষকে দলে টানার আহ্বান জানালে কি হবে, যেখানে মানুষ আস্থা হারিয়েছে বামপন্থী আন্দোলনের উপর, সেখানে মানুষকে আহ্বান জানালেও তাঁরা আসবে না৷
আসলে স্মরণসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য তথা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এবং সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর উভয়েই বামপন্থী আন্দোলন আরো সুসংহত করার ডাক দেন এবং মানুষকে বামফ্রন্টের দিকে টেনে আনার আহ্বান জানান৷ এবিষয়ে সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মানিকবাবু বামফ্রন্ট ক্রমেই দূর্বল হয়ে পড়েছে স্বীকার করে বলেন, সারা দেশে বামপন্থী আন্দোলন আরো সুসংহত করতে হবে৷ যারা এখনো ভুল শিবিরে রয়েছেন, তাঁদের বুঝাতে হবে৷ বুঝিয়ে তাঁদের বামফ্রন্টের শিবিরে আনতে হবে৷ তবে, বামফ্রন্টে যে মতানৈক্য রয়েছে তাও তাঁর বক্তব্যে ফুটে উঠেছে৷ তিনি বলেন, বামফ্রন্টে সব দল এক রকম নয়৷ ফ্রন্টের শরিকদলগুলির মধ্যে বিতর্ক বা মতান্তর থাকতেই পারে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত বামফ্রন্টের ঐক্যে চিড় ধরেনি৷ তবে, নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা হত ঠিকই, কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানও করা হত৷ সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধরও একই সুরে বলেন, বামফ্রন্টে নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিতর্ক হত ঠিকই কিন্তু তার সুরাহাও হয়ে যেত৷ তবে, যে বিষয়ে বিজনবাবু জোর দিয়েছেন তা হল, বামফ্রন্টকে শক্তিশালি করতে গেলে নতুন নতুন মানুষকে টানতে হবে৷ তাঁদের বুঝতে হবে৷ তাঁদের কথা শুনতে হবে৷ তবেই দেশে বামফ্রন্টের আন্দোলন শক্তিশালি আকার ধারণ করবে৷
এদিকে, সিপিআই রাজ্য সম্পাদক রঞ্জিত মজুমদার এবং ফরোয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক শ্যামল রায়ও বামফ্রন্টকে শক্তিশালি করে তুলার ডাক দেন৷ তাঁদের মতে, সারা দেশের পাশাপাশি এরাজ্যেও বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত শুরু হয়েছে৷ একে প্রতিহত করতে বামপন্থী আন্দোলন আরো শক্তিশালি করে তুলতে হবে৷
কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন সুরে বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে আরএসপি’র রাজ্য সম্পাদক দেখিয়ে দিয়েছেন, সারা দেশে ফ্রন্ট দূর্বল হওয়ার পেছনে নিজেরাই দায়ী৷ তাঁর মতে, মানুষ আস্থা হারিয়েছে বলেই বামফ্রন্ট দূর্বল হয়ে পড়েছে গোটা দেশে৷ তাঁর সাফ কথা, বামপন্থী দলগুলির গত বেশ কিছুকাল যাবৎ যে ভূমিকা গ্রহণ করা উচিৎ ছিল তা নিতে পারেনি৷ ফলে মানুষ কতটা বামফ্রন্টের সান্নিধ্যে আসবে আজ সেই প্রশ্ণ দেখা দিয়েছে৷ তাঁর দাবি, এই পরিস্থিতির জন্য বামপন্থীরাই দায়ী৷ তিনি জোর গলায় বলেন, বামফ্রন্টের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা ক্রমশ প্রকাশ পাচ্ছে৷ সাধারণ মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না৷ ফলে ভারতবর্ষে ক্রমশ বামপন্থীরা প্রগতিশীল আন্দোলনের আকর্ষণ থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে৷ আর এ কারণেই বামপন্থী আন্দোলন প্রশ্ণচিহ্ণের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে বলে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন৷
এদিন তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, আমরা বলে থাকি ভারতে বামফ্রন্ট দূর্বল হয়ে পড়েছে৷ কিন্তু সবল হওয়ার জন্য সে ধরনের কর্মসূচী নেওয়া হয়েছি কি, প্রশ্ণ তুলেন তিনি৷ পাশাপাশি তাঁর আরও প্রশ্ণ, আদৌ যদি সবল হওয়ার জন্য সে ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ না করা হয়ে থাকে তাহলে দায় কার? তাঁর দাবি, বামফ্রন্টের দূর্বলতাই প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করছে৷
এদিন তিনি বামপন্থী আন্দোলন আরো শক্তিশালি করার লক্ষ্যে বলেন, আমাদের এখন মূল্যায়ন করার সময় এসেছে৷ যদি শক্তিশালি কর্মসূচী গ্রহণ করা সম্ভব না হয়, তাহলে নতুন নতুন মানুষকে বামপন্থী আন্দোলনের সাথে যুক্ত করা যাবে না৷ তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, এখন মূল্যায়ণ করতে হবে সারা দেশে আমাদের অবস্থান ঠিক কোথায়৷ ত্রিপুরা কিংবা কেরালার বাইরে অন্য কোন রাজ্যে আমরা কেন শক্তিশালি হতে পারছি না, তা ভাবার সময় এসেছে৷ আর বামফ্রন্টের দূর্বলতা কাটানোর জন্য বিকল্প কর্মসূচী উপস্থাপন করার পাশাপাশি মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে৷ তবেই সারা দেশে বামফ্রন্ট শক্তিশালি হয়ে উঠবে বলে সুদর্শনবাবু মনে করেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *