বন্যায় ধর্মনগরে ২০০ জন ত্রাণ শিবিরে,খোয়াইয়ে বজ্রাঘাতে হত দুই, জখম পাঁচ

Exif_JPEG_420নিজস্ব প্রতিনিধি, খোয়াই, ধর্মনগর,১৭ মে৷৷ ঝড়,বৃষ্টিতে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে৷ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে ধর্মনগরে৷ এদিকে, বৃষ্টির সঙ্গে প্রবল বজ্রপাত হয়েছে খোয়াইয়ের বেহালাবাড়িতে৷ বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ প্রবল বর্ষণ চলাকালীন সময়েই আচমকা বজ্রপাতে খোয়াই বেহলাবাড়ি কৃষ্ণপাড়ায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে৷ গুরুতর জখম হয়েছেন পাঁচজন৷ রেগার মাটি কাটার কাজ করার পর ২৫ জন রেগা শ্রমিক একত্রে বিশ্রাম করছিলেন তখন৷ আচমকা বাজ পড়ায় সকলেই মূর্ছিয়ে পড়েন৷ বাজ পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সুকল পড়ুয়া দিপুল দেববর্মা, বয়স ১৪ এবং বাসনা দেববর্মা, বয়স ৪০৷ গুরুতর আহত হন মোট ৫ জন৷ এদের সকলকেই প্রথমে বেহালাবাড়ি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়৷ আহতরা হলেন শিলারানি দেববর্মা, সুজাতা দেববর্মা, শালকা দেববর্মা, প্রীতিরানি দেববর্মা, এবং নিরুবালা দেববর্মা৷ তবে সুজাতা দেববর্মা, নিরুবালা দেববর্মার চিকিৎসা চলছে খোয়াই জেলা হাসপাতালে৷ তবে গুরুতর আহতদের মধ্যে থেকে পরবর্তী সময় শিলারানি দেববর্মা, শলাকা দেববর্মা এবং প্রীতিরানি দেববর্মাকে আগরতলা জিবি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে৷
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে অল্পেতে রক্ষা পাওয়া অন্যান্য রেগা শ্রমিকরা জানালেন কি বীভৎস ছিল ঐ কতটুকু সময়৷ খোয়াই মহকুমার রতনপুর, মনাইছণার পর এবার বেহালাবাড়িতে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করছে৷ বুধবারের ঘটনায় চোখের পলকেই একে একে দুজন সঙ্গীকে হারালেন রেগা শ্রমকরা৷ কিছুক্ষণ সময় সম্পূর্ণ অচৈতন্য ছিলেন সকলেই৷ মুহূর্তেই কত বড় বিপদ মাথার উপর দিয়ে চলে গেল৷ এখনো কেউ কেউ ভীত, কেউ কেউ স্তম্ভিত, কেউ কেউ বাকরুদ্ধ৷ এর মধ্যেই প্রতিনিধির সামনে তুলে ধরলেন আতঙ্কে ভরা মুহূর্তের কথা৷ পাশেই আহতদের আত্মীয়স্বজনরা তাদের আপনজনের কাছে, তাদের প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া প্রয়াস চালাচ্ছেন৷ কেউ কেউ মৃতদেহকে আগলে পড়ে আছেন৷ অত্যন্ত রোমহর্ষক৷
এদিকে, ঘটনার খবর পেয়েই চাম্পাহাওড় থানার পুলিশ সহ খোয়াই জেলাশাসক অপূর্ব রায়, খোয়াই মহকুমা শাসক ড সমিত রায় চৌধুরী সহ জেলা ও মহকুমা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখানে ছুটে যান৷ মহকুমা শাসকের তত্ত্বাবধানে আহতদের সঠিক সময়ে চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করা হয়৷ সে সাথে সরকারিভাবে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমা শাসক ড সমিত রায় চৌধুরী৷ মর্মান্তিক এই ঘটনায় বেহলাবাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে৷
এদিকে, মঙ্গলবার ও বুধবার সকালের বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে ধর্মনগরে৷ শহরের বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে নিম্নঞ্চল প্লাবিত হয়েছে৷ বন্যা কবলিত এলাকার প্রায় দুইশ মানুষ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে৷ রেলওয়ে কলোনী বস্তি, রাজবাড়ী, নয়াপাড়া, শিববাড়ি প্রভৃতি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে বন্যা দুর্গতরা৷ এদিকে, প্রশাসনের তরফ থেকে একটি প্রতিনিধি দল বন্যা কবলিত এলাকা সফর করেছে৷ খোঁজ খবর নিয়েছেন৷ বন্যা দুর্গতরা অভিযোগ করেছেন, ড্রেনের জল নিস্কাশনের কোন সঠিক ব্যবস্থা নেই৷ তাই বৃষ্টির জল জমে গিয়েছে৷ একই সঙ্গে নিম্নাঞ্চলের অলিগলির রাস্তাগুলিতে জল জমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে উঠেছে৷ একদিনের বৃষ্টিতেই যদি এমন অবস্থা হয়ে যায় তাহলে বর্ষা পুরোপুরিভাবে রাজ্যে জাকিয়ে বসলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷