BRAKING NEWS

মিজো শরণার্থীদের ক্ষোভের আগুনে ছাড়খার আনন্দবাজারের ২১টি বাড়ি

বিশেষ প্রতিনিধি, কাঞ্চনপুর, আগরতলা, ১৫ মে৷৷ চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে অগ্ণিগর্ভ হয়ে উঠেছে উত্তর জেলার কাঞ্চনপুর মহকুমার আনন্দবাজার৷ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বহু বাড়ি ঘর৷ সংঘর্ষ হয়েছে জনতা- পুলিশে৷ আহত হয়েছেন পুলিশ কর্মী সহ সাধারণ মানুষও৷ পরিস্থিতি জাতিদাঙ্গার রূপ নিতে পারে আশঙ্কায় মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল নিরাপত্তা বাহিনী৷ রাজধানী আগরতলা পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে পদস্থ অফিসাররা ঘটনাস্থলে পৌঁছেন৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কঠোর নজরদারী চালানো হচ্ছে৷ করা হয়েছে শান্তি বৈঠকও৷ রবিবার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গোটা কাঞ্চনপুর মহকুমা থমথমে হয়ে রয়েছে৷ ছুটির দিন হওয়া সত্বেও প্রশাসনের পদস্থ আধিকারীকরা ঘটনাস্থলেই রয়েছেন৷
DSCN8674সংবাদে প্রকাশ, উত্তর জেলার কাঞ্চনপুরের নাইসিংপাড়ায় অবস্থানরত মিজোরামোর রিয়াং শরণার্থীরা অভিযোগ করেন তাদের সম্প্রদায়ের তথা শিবিরের এক শরণার্থী ব্রিঘুরাম রিয়াংকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে৷ এই খুনের সাথে যুক্ত রয়েছে আনন্দবাজার থানার অধীন কাশিরামপুর এলাকার বাসিন্দা রঞ্জিত দাস৷ এই অভিযোগ এনে হাজার হাজার রিয়াং শরণার্থী রবিবার সকালে নাইসিংপাড়া থেকে কাশিরামপুরে নেমে আসে৷ সেখানে গিয়ে গণহারে বাড়ি ঘরে হামলা চালাতে থাকে৷ ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়৷ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ২১টি বাড়িতে৷ মুহুর্তের মধ্যেই পরিস্থিতি অগ্ণিগর্ভ হয়ে উঠে৷ খবর পৌঁছে আনন্দবাজার থানায়৷ থানার ওসি রাজকুমার জমাতিয়া প্রথমে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন৷ পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে সঙ্গে সঙ্গেই তিনি কাঞ্চনপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিককে জানান৷ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক, পুলিশ সুপার সহ আই জিকে বিষয়টি জানান৷ সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেন পদস্থ পুলিশ আধিকারীকরা৷ কাঞ্চনপুর, কৈলাসহর, ধর্মনগর প্রভৃতি স্থান থেকে প্রচুর সংখ্যায় টিএসআর ও পুলিশ নিয়ে পৌঁছানো হয় আনন্দবাজারে৷ পুলিশ উত্তেজিত রিয়াং শরনার্থীদের ছত্রভঙ্গ করেতে লাঠিচার্জও করে৷ তাতে বিক্ষুব্ধরা আরও উত্তেজিত হয়ে উঠে৷ পুলিশর উপর হামলা চালায়৷ তাতে সাতজন পুলিশকর্মী রক্তাক্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে৷
এদিকে, রিয়াং শরনার্থীরা কাশিরামপুরের বাসিন্দা শৈলেন্দ্র দাস, প্রদীপ দাস, হরিপদ দাস, মনোরঞ্জন দাস, বাবুল দাস, ধীরেন্দ্র দাস, বিশ্বজিৎ দাস, স্বপন দাস, নিতাই দাস, প্রাণেশ দাস, রাধিকা দাস, নিখিল দাস এবং রঞ্জিত দাসের বাড়িতে হামলা চালায়৷ তাদের বাড়ি ঘর ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়৷ অগ্ণিসংযোগের পর উত্তর জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে৷ অন্যদিকে, প্রায় ছয় সহস্রাধিক শরণার্থীর সংঘবদ্ধ ভাবে পাহাড় থেকে সমতলে নেমে এসে অতর্কিত হামলায় গোটা কাশিরামপুর এলাকায় আতঙ্কে জবুথবু হয়ে পড়ে৷ প্রাণ নিয়ে পালাতে থাকেন জনগণ৷ নারী পুরুষ যে যেদিকে পারেন ছুটে পালান৷ শরণার্থীরা দফায় দফায় ঐ এলাকায় হামলা হুজ্জুতি চালায়৷ পুলিশ প্রশাসনও হতবম্ব হয়ে উঠে৷ যেখানে দুটি জাতির মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা তাই বিষয়টিকে অতি স্পর্শকাতর হিসেবে ধরে নিয়ে পুলিশ অত্যন্ত সংযমের সাথে মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছে৷ কিন্তু শরণার্থীদের তান্ডব এতটাই হিংস্র হয়ে উঠেছিল যে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে বাধ্য করে৷ তাই পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে৷ তাতে বেশ কয়েকজন জখমও হয়েছে৷
এদিনের এই অগ্ণিগর্ভ পরিস্থিতির পেছনে যে বিষয়টি রয়েছে, তা নিয়েও মতবিরোধ রয়েছে৷ জানা গিয়েছে, পরশুদিন রিয়াং শরণার্থী শিবিরের এক যুবক ব্রিঘুরাম রিয়াং কাশিরামপুর এলাকায় একটি পুকুর থেকে মাছ চুরি করতে গিয়ে হাতনাতে ধরা পড়ে৷ তাকে গণধোলাই দিয়ে আনন্দবাজার থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়৷ পুলিশ তাকে চিকিৎসার জন্য কাঞ্চনপুর হাসপাতালে ভর্তি করায়৷ সেখান থেকে নাকি ব্রিঘুমার রিয়াং পালিয়ে যায়৷ তারপর গতকাল তার মৃতদেহ উদ্ধার হয় কাশিরামপুর এলাকায়৷ নিহত যুবকের পরিবার ও শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দাদের অভিযোগ তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ এই হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে গোটা নাইসিংপাড়া শরণার্থী শিবির৷ আর এই ক্ষোভের জেরেই এদিন শরণার্থীরা একজোট হয়ে কাশিরামপুরে আসে এবং বাড়ি ঘরে হামলা চালায়, অগ্ণিসংযোগ করে৷ এদিকে, রাতে খবর লেখার সময় জানা গিয়েছে, পুলিশের পদস্থ অফিসাররা ঘটনাস্থলে রয়েছেন৷ শরণার্থীদের নাইসিংপাড়া শিবিরে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ তবে যেকোন সময় শরণার্থীরা পুনরায় সমতলে এসে হামলা চালাতে পারে এই আশঙ্কাকে উড়িয়ে না দিয়ে উত্তর জেলার পুলিশ প্রশাসন ধলাই জেলা, উনকোটি জেলা থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে কাঞ্চনপুর মহকুমার বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করেছে৷
এদিকে, এদিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর তরফে জানাননো হয়েছে, আজ উত্তর ত্রিপুরার কাঞ্চনপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভিগুরাম রিয়াং নাামে এক যুবকের আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিজোরাম থেকে মহকুমার উদ্বাস্ত শিবিরে আশ্রিত একদল লোকের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে গছিরাম পাড়ার কাশীরামপুরে কিছু বাড়ি ঘর আক্রমণ এবং াগুণ দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা করছে সিপিআই (এম) ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী৷
জানা গেছে, গত ৫ মে ভিগুরাম রিয়াং নামে একজন উদ্বাস্তু যুবক রঞ্জিৎ দাস নামে এক ব্যক্তির পুুকুর থেকে মাছ চুরি করায় পুকুরের মালিক তাকে ধরে ফেলে মারধোর করে৷ পুলিশ যুবকটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়৷ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসায় যুবকটি সুস্থ হয়ে ওঠে৷ কিন্ত আজ সকালে হাসপাতাল সংলগ্ণ স্থানে ফাঁসি দিয়ে যুবকটি আত্মহত্যা করে৷ এই মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বাস্তু শিবিরের বিরাট সংখ্যক লোক দলবদ্ধভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে কাশীরমাপুরে ঘর-বাড়ি আক্রমণ করে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ বাড়িগুলোর লোকজন পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন৷ নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত হস্তক্ষেপ করে৷
রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী এই প্ররোচনামূলক আক্রমণের প্রতিবাদ করছে৷ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখার জন্য সব অংশের মানুষের কাছে আবেদন জানাচ্ছে৷ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে দাবি জানাচ্ছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *