নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ মে৷৷ স্বপ্ণ যেন ধাপে ধাপে বাস্তবে পরিণত হচ্ছে৷প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক ব্রডগেজে আগরতলা থেকে শিলচর পর্যন্ত যাত্রী রেল চালানো হয়৷ পরবর্তী ধাপ হিসেবে শুক্রবার থেকেই প্রতিদিন আগরতলা-শিলচর রুটে স্পেশাল প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ঘোষণা করে পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলওয়ে৷ ফলে, আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্যে ব্রডগেজে যাত্রী রেল পরিষেবা সূচনার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্তে আরেক ধাপ চড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে৷ অবশ্য রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভুর তৎপরতাতেই যে আনুষ্ঠানিকভাবে রেল যাত্রার পূর্বে আগরতলা-শিলচর রুটে প্রতিদিন যাত্রী রেল চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাও একপ্রকার স্পষ্ট৷
বুধবার রাজ্যের দুই সাংসদ রেলমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে রাজ্যে রেল পরিষেবা নিয়ে আলোচনায় আগামী ২০মে’র পর যে কোন দিন রাজ্যে ব্রডগেজে যাত্রী রেল পরিষেবা শুরু হবে বলে প্রতিশ্রুতি মিলেছিল৷ এমনিতেই সুরক্ষা পর্যবেক্ষণ সমাপ্ত হওয়ার পর সুরক্ষা কমিশনার ছাড়পত্রও দিয়েছে বেশ কয়েকদিন অতিক্রান্ত৷ ফলে, নিরাপত্তার বিষয়টিতে সবুজ সংকেত পাওয়া সত্ত্বেও রাজ্যে রেল পরিষেবা শুরু না হওয়ায় নানা মহল থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়৷ এনিয়ে রাজ্য সরকারও পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলওয়ের পাশাপাশি বারে বারে রেল মন্ত্রকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷ যাতে অন্তত আনুষ্ঠানিকভাবে রেল পরিষেবা শুরু হওয়ার আগে আগরতলা-শিলচর রুটে যাত্রী রেল প্রতিদিন চলতে পারে৷
পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক পি জে শর্মা বৃহস্পতিবার এক প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ৬ মে অর্থাৎ শুক্রবার ০৫৬৬৪ নম্বরের শিলচর-আগরতলা স্পেশাল প্যাসেঞ্জার ট্রেন বেলা নয়টায় শিলচর থেকে আগরতলার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে৷ অনুরূপ ৭মে অর্থাৎ শনিবার ০৫৬৬৩ আগরতলা-শিলচর স্পেশাল প্যাসেঞ্জার ট্রেন বেলা ৯টায় আগরতলা থেকে শিলচরের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে৷ তবে, ঐ দিনই একই সময়ে শিলচর থেকেও একটি যাত্রী ট্রেন আগরতলার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে৷ ফলে, শনিবার থেকে প্রতিদিন আগরতলা-শিলচর রুটে একটি করে যাত্রী ট্রেন আসা যাওয়া করবে৷ পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলওয়ে মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক জানিয়েছেন, মোট ১০টি কামরা এবং দুটি ল্যাগেজ তথা পার্সেল ভ্যান নিয়ে ট্রেনটি আগরতলা-শিলচর রুটে চলাচল করবে৷ প্রতিদিন এই ট্রেন দুটি আগরতলা এবং শিলচর স্টেশনে পৌঁছবে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা নাগাদ৷ তিনি আরো জানিয়েছেন, প্যাসেঞ্জার স্পেশাল ট্রেনটি এই রুটে সবকটি স্টেশনে দাঁড়াবে৷ ফলে, রাজ্য থেকে কিংবা শিলচর থেকে আসা যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে সুবিধা হবে৷
এই পরিষেবা ৬ মে থেকে শুরু করে ২০ মে পর্যন্ত চলবে৷ তাতে অনুমান করা হচেছ, হয়ত ২০ মে কিংবা তার দুয়েকদিনের মধ্যেই রাজ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী রেল পরিষেবার সূচনা হতে চলেছে৷ কারণ, রেল মন্ত্রী বুধবার রাজ্যের সাংসদদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন হয়তবা পুনরায় তার খেলাপ করবেন না৷ এর আগে বাংলা নববর্ষে রাজ্যে যাত্রী রেল পরিষেবা চালু হওয়ার কথা ছিল৷ রেলমন্ত্রী এবিষয়ে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন৷ কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি৷ দেখতে দেখতে এপ্রিল শেষ হয়ে মে মাস শুরু হয়ে গেল৷ তখন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এবিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন৷ মুখ্যসচিবকে রেল বোর্ড এবং পূর্বোত্তর সীমান্ত রেল আধিকারিকদের সাথে আলোচনা করার নির্দেশ দেন৷ সেই মোতাবেক বৈঠকও হয়৷ তাতে রেলের উপর আরেকপ্রস্ত চাপ বাড়ায় রাজ্য সরকার৷ অবশেষে সিদ্ধান্ত হয় পরীক্ষামূলকভাবে আগরতলা-শিলচর রুটে চালানো হবে যাত্রী রেল৷ এক দফা চালিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আগামী ২০ মে পর্যন্ত প্রতিদিন আগরতলা-শিলচর রুটে চলবে স্পেশাল প্যাসেঞ্জার ট্রেন৷ খুব শীঘ্রই যে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে রাজ্যে যাত্রী রেল পরিষেবা তা একপ্রকার স্পষ্ট৷
এদিকে, পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলওয়ের জনসংযোগ আধিকারিক জানিয়েছেন, শিলচর এবং নিউ হাফলংয়ের মধ্যেও স্পেশাল ট্রেন পুণরায় শুরু করা হবে৷ এছাড়া পাহাড় লাইনে ভারী বর্ষণে রেল লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ৬ তারিখের শিলচর-গুয়াহাটি ট্রেনটি বাতিল করা হয়েছে৷
2016-05-06