সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ

BJPত্রিপুরায় বিরোধী দলের মুখ্য ভূমিকা এখন কোন দল পালন করিবে তাহাই এখন রাজনীতির মানুষের কাছে লাখ টাকার প্রশ্ণ৷ কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ত্রিপুরায় ২০১৮ সালের স্বপ্ণে বিভোর৷ রাজ্যে দলের মাথায় বসানো হইয়াছে যাঁহাকে তিনি কতখানি দলকে উজ্জীবিত করিতে পারিবেন সেই প্রশ্ণও উঠিয়াছে৷ ত্রিপুরায় বিজেপি’র অগ্রগতির অনেক বেশী সুযোগ ছিল৷ কিন্তু রাজ্যে দলের শক্তিশালী নেতৃত্বই এখন বড় কথা৷ বড় কথা রাজ্যবাসীর মনে বিশ্বাসের ভিত গড়িয়া তোলা৷ কিন্তু সেই পরিস্থিতি নজরে পড়িতেছে না৷ কংগ্রেসের বিদ্রোহী গোষ্ঠী দলবল সহ যদি বিজেপি দলে যোগ দিত তাহা হইলে হয়তো সেই সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকিত৷ কিন্তু বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রধান নেতা, প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা সুদীপ রায় বর্মন জানাইয়া দিয়াছেন তিনি কোনও অবস্থাতেই বিজেপি দলে যোগ দিবেন না৷ তাঁহার এই বক্তব্য যদি আসল কথা হয় তাহা হইলে এরাজ্যে আক্ষরিক অর্থে ত্রিপুরায় বিজেপির তেমন শক্তি বৃদ্ধির সুযোগ নাই৷ সারা রাজ্যে নতুন করিয়া সংগঠন বিস্তারে নামিয়া দলকে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই’র উপযোগী করিয়া তোলা খুব বেশী কঠিন হইবে৷ একজন জনপ্রিয় নেতা প্রদেশ নেতৃত্বে না থকিলে সেই দলের প্রতি মানুষের বিশ্বাসের ভিত তেমন গড়িয়া উঠে না৷ এরাজ্যে দ্বিতীয় সম্ভাবনা তৃণমূল কংগ্রেস৷ যদি কংগ্রেসের বিদ্রোহী গোষ্ঠী এই দলে যোগ দিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যের ময়দানে নামাইতে পারেন এবং ত্রিপুরায় একজন স্বচ্ছ ভাবমূর্ত্তির নেতাকে রাজ্য নেতৃত্বের শীর্ষে বসাইতে পারেন তাহা হইলে শক্তিশালী বিরোধী দল গঠনের সম্ভাবনা প্রবল হইতে পারে৷
ত্রিপুরার অবাম রাজনীতির গতিপ্রকৃতি কি হইবে তাহা উনিশ মের আগে বলা মুশকিল৷ সোজা কথায়, পশ্চিমবঙ্গের ভোটের ফলাফলের উপরই ত্রিপুরার বিরোধী রাজনীতির ভবিষ্যত নির্ভর করিতেছে৷ পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের সঙ্গে জোটের প্রতিবাদে ত্রিপুরায় কংগ্রেসের বেশীরভাগ নেতারাই পদ ছাড়িয়া দিয়া প্রতিবাদ করিয়াছেন৷ ইহাতে ত্রিপুরায় কংগ্রেস প্রায় নিশ্চিহ্ণ হইয়া যাইতেছে৷ এই ঘটনায় রাজ্যের সিপিএম বা বাম নেতারা প্রমাদ গুনিবেন খুব স্বাভাবিক কারনে৷ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব স্তরে সিপিএম নেতৃত্বের বুঝাপড়ার বিষয়টি জনমনে স্পষ্ট হইয়া গিয়াছে৷ দলনেতার পদ হইতে ইস্তফা দিয়া সুদীপ বর্মন দীর্ঘ চিঠিতে কংগ্রেস হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে যে সিরিজ অভিযোগ আনিয়াছেন তাহার জবাব তো দল দেয় নাই৷ এমন কি যাহারা হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে সরাসরি আঙুল তুলিয়াছেন তাহাদের বিরুদ্ধেও কোনও ক্ষোভ ইত্যাদি দেখানো হয় নাই৷ পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় কংগ্রেসের ক্ষমতারোহণের সমস্ত পথ রুদ্ধ করিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে গোপন ভূমিকা নিতেন দলের হাইকমান্ড৷ যুক্তি তথ্য তুলিয়া ধরিয়া সুদীপ বর্মন যেভাবে দলের হাইকমান্ডকে বিদ্ধ করিয়াছেন, যেভাবে মুখোশ খুলিয়া দিয়াছেন ইহার পর কোনও কংগ্রেস নেতা কর্মীর পক্ষে এই দলে থাকা যে সম্ভব নহে তাহাই তো স্পষ্ট হইয়াছে৷ এরাজ্যে কংগ্রেস সিপিএম দুই দলের সংঘর্ষে কম খুন হইয়াছে? পশ্চিমবঙ্গের সাঁইবাড়ির ঘটনা কি বাংলার মানুষ ভুলিতে পারেন? পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় কংগ্রেসের গোপন সমঝোতার কারণে বামফ্রন্টের শাসন দীর্ঘায়িত হইয়াছে৷ মমতা ব্যানার্জীর মতো নেত্রীই পশ্চিমবঙ্গে বামদূর্গ তছনছ করিয়া দিয়াছেন৷ কেন্দ্রের ক্ষমতায় টিকিয়া থাকিতে কংগ্রেস হাইকমান্ড নিজের দলকে দিনের পর দিন বলি দিয়াছেন৷ সেই ইতিহাসের আজ হিসাব নিবার সময় বাছিয়া নিয়াছেন ত্রিপুরার সুদীপ বর্মনরা৷ পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের সঙ্গে জোট করাতেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ত্রিপুরায় জোর বিদ্রোহ আছড়াইয়া পড়িয়াছে৷
এখন অপেক্ষার পালা৷ ত্রিপুরা কোন পথে হাটিবে৷ ভবিষ্যতে কি সেই জল্পনার অবসান হইবে পশ্চিমবঙ্গের ভোট ফল প্রকাশের পরই৷ সুদীপ বর্মনরা সময় থাকিতেই বিদ্রোহে সামিল হইয়া ভবিষ্যত পদক্ষেপের জোর প্রস্তুতি চালাইয়াছেন৷ তবে, দলে থাকিয়া দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করিবার পরও কোনও শাস্তির খড়গ নামিয়া আসে নাই৷ এমন বিদ্রোহ শতবর্ষ প্রাচীন দলে সম্ভবত নজীর বিহীন৷ ত্রিপুরায় বিদ্রোহী কংগ্রেসীরা এরাজ্যে সিপিএমের সঙ্গে জোট সরকার গড়িয়াছিল৷ সেই সিপিএম প্রেমীরা পরবর্তী সময়ে কংগ্রেসে যোগদান করিয়া এবং যুব সমিতির সঙ্গে জোট সরকার গড়িয়াছিল৷ রাজনীতির এই হিসাবই বলিয়া দিতেছে নিকট ভবিষ্যতে ত্রিপুরার অবাম রাজনীতি নতুন খাতে বহিবে৷ বাম রাজনীতি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িবার সম্ভাবনা উড়াইয়া দেওয়া যায় না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *