গণহারে পদত্যাগ সুদীপ গোষ্ঠীর, এবারে মহিলা কংগ্রেস ও এস সি সেলের বিদ্রোহ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৪ এপ্রিল৷৷ রাজ্যের বিরোধি দলনেতা হিসেবে এআইসিসি গোপাল রায়ের নাম অনুমোদন দিয়েছে৷ বিরোধী দলনেতা নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছিল আপাতত সে সংকটের অবসান ঘটেছে৷ গোপাল রায়কে যখন বিরোধী দলনেতা হিসেবে এআইসিসি অনুমোদন দিয়েছে ঠিক সে সময়েই গোপালবাবুর খাস তালুকে  হানা দিয়েছে DSC_0035শাসক দল সিপিএম৷ এই ভাঙা গড়ার খেলায় কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা রীতিমত হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন৷ রবিবার সন্ধ্যায় শিবনগরে সিপিএমের এক সভায় বনমালীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ২৪০ জন কংগ্রেস সমর্থক দলত্যাগ করে শাসক দলে সামিল হয়েছেন৷  এলাকার বিধায়ক গোপাল রায় বিরোধী দলনেতা হিসেবে অনুমোদন পেলেও তার নির্বাচনী এলাকায় এধরনের ভাঙন তার অস্তিত্ব সংকটের সামিল৷ কারণ, ইতিপূর্বে কংগ্রেস দলে এত বড় ভাঙন দেখা দেয়নি৷ শুধু দলত্যাগই নয়, দলের শীর্ষ স্থানীয় বেশ কিছু নেতা নেত্রী সাংগঠনিক পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন৷ এক্ষেত্রেও নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে৷ এই সংকট নিরসনের তেমন কোন সুযোগ তাদের সামনে নেই৷ ফলে, এই রাজ্যে কংগ্রেস দল কার্যত সাইনবোর্ড সর্বস্ব হয়ে পড়তে শুরু করেছে৷
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও সিপিএমের আঁতাতের জের ত্রিপুরায় কংগ্রেস দলের একাংশের নেতা-নেত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ ঘটতে শুরু করেছে৷ অনেকেই দলীয়পথ ছেড়ে কংগ্রেস-সিপিএম আঁতাতের প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছেন৷ বিরোধী দলনেতার পদ থেকে সুদীপ রায় বর্মণের পদত্যাগের পর  প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি আশিস কুমার সাহা, যুব কংগ্রেস সভাপতি সুশান্ত চৌধুরী সহ বেশ কয়েকজন দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন৷ রবিবার আরো বেশ কয়েকজন নেতা নেত্রী দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন৷ প্রদেশ মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী কল্যাণী রায় এবং সহসভানেত্রী পান্না দে সহ রাজ্য কমিটির পাঁচজন সদস্যা ও জেলাস্তরের দুজন সদস্যা পদত্যাগ করেছেন৷ কংগ্রেসের এসসি ডিপার্টমেন্টের  রাজ্য কমিটির চেয়ারম্যান প্রকাশ দাস সহ চারজন সদস্য সাংগঠনিক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন৷ আরো বেশ কয়েকজন সাংগঠনিক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন৷ তারা প্রত্যেকেই বঙ্গে কংগ্রেস-সিপিএম আঁতাতের প্রতিবাদে দলীয় পদত্যাগ করেছেন৷  তাদের পদত্যাগ পত্রগুলো দলীয় সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর কাছেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ পদত্যাগের ফলে কংগ্রেস দলের ভাবমূর্তি অনেকটাই জনসমক্ষে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার সামিল হয়েছে৷ পদত্যাগীরা স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন, কংগ্রেস-সিপিএম আঁতাতের বিরোধিতা করেই তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে বাধ্য হয়েছেন৷ আজ আগরতলা প্রেস  ক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী কল্যাণী রায়, কংগ্রেসের এসসি সেলের চেয়ারম্যান প্রকাশচন্দ্র দাস প্রমুখ তাদের পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন৷ সাংগঠনিক পদ থেকে পদত্যাগের যে হিড়িক পড়েছে তাতে কংগ্রেস দলের ভাবমূর্তি জনগণের সামনে আরো স্পষ্ট হয়ে পড়তে শুরু করেছে৷ তাতে কংগ্রেস দলের ভবিষ্যৎ আরো অন্ধকারে দিকেই ধাবিত হচ্ছে৷ অবিলম্বে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে পরিণতি আরো করুণ আকার ধারণ করতে পারে৷ সে আশঙ্কাতেই দলীয় নেতাদের একাংশ ভাঙনরোধে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷
রবিবার ৯নং বনমালীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস দলে বড় ধরনের ধবস নেমেছে৷ কংগ্রেস বিধায়ক গোপাল রায়ের ঘনিষ্ট বলে পরিচিত ২৪৪ জন কংগ্রেস ছেড়ে শাসকদল সিপিআইএমে যোগ দিয়েছেন৷
শিবনগর লোটাস ক্লাব সংলগ্ণ এলাকায় রবিবার শাসকদল সিপিআইএমের এক সভায় কংগ্রেস দল ছেড়ে ২৪৪ জন সিপিআইএমে যোগদান করেছেন৷ সিপিআইএম পশ্চিম জেলা সম্পাদক পবিত্র কর, রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য গৌতম দাস সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নবাগতদের হাতে লাল গোলাপ তুলে দিয়ে বরন করে নেন৷
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিপিআইএম পশ্চিম জেলা কমিটির সম্পাদক পবিত্র কর বলেন, আমাদের দেশে কংগ্রেস একটি ডুবন্ত জাহাজ৷ যারা পালাতে পারেন, তারাই বাঁচেন৷ যারা পদত্যাগ করেছেন, তারা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বলছেন৷ তারাই আবার সাংবাদিকদের বলছেন তারা কংগ্রেস ছাড়েননি৷ কংগ্রেস ছেড়ে দিয়েছি বললে বিধায়ক পদ চলে যাবে৷ আর বিধায়ক পদ চলে গেছে কেউ তাদের প্রচারে আনবেন না৷ আবার অনেক আছেন তারা ভাবছেন সবাই যখন চলে যাচ্ছে তখন আমি থাকি৷ নেতা তো হতে পারবো৷ কংগ্রেসের নেতা হয়ে তারা বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বিজেপির পক্ষে কথা বলেছেন৷ তিনি বলেন, আপনারা যারা কংগ্রেস ছেড়ে সিপিএমে যোগ দিয়েছেন তাদের স্বাগত জানাই৷ কারন আপনারা আমাদের বিশ্বাস করেছেন৷ তাতে আমাদের দায়িত্ব আরও বাড়ল বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি৷ এই বিশ্বাসের মর্যাদা আমরা দায়িত্ব নিয়ে করব৷
পবিত্র বাবু বলেন, আমরা চাই মানুষে মানুষে যাতে বিভেদ না হয়৷ কেন্দ্র থেকে টাকা পেয়ে আমরা উন্নয়ন করি, প্রগতি করি, টাকা মানুষের মধ্যে ভাগ করে দিই৷ কারন মানুষ আমাদের ভোট দেয়৷ আমরা মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ যে কারনেই মানুষকে আনাহারে থাকতে হয় না৷
পবিত্র বাবু আরও বলেন, যারা খারাপ তাদের আমরা ভাল করতে চাই৷ আমরা উন্নতির জন্য প্রগতির জন্য সবাইকে নিয়ে চলতে চাই৷ আমাদের কোন চৈত্রমাস নেই৷ আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চাই৷ বনমালীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস দলে ভাঙন রোধে বিধায়ক গোপাল রায়ের যাবতীয় প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে৷ গোপাল রায়ের খাস তালুকে হানা দিয়েছে শাসক দল সিপিআইএম৷ অভিযোগ এলাকার বিধায়ক এলাকায় মানুষের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে দেখা যায় না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *