BRAKING NEWS

ভুল স্বীকারের রাজনীতি

CONGRESS CPIMভুল আর ভুল৷ রাজনীতিতে একের পর এক ভুল৷ রাজনৈতিক নেতারা ভুল করিতে যেমন সময় লাগে না তেমনি ভুল স্বীকার করিতেও বিন্দুমাত্র সময় লাগে না৷ ভুল করা আর স্বীকারের জন্য সিপিএম দল বিখ্যাত হইয়া আছে৷ এখন দেখা যায় সেই পথের অনুসারী কংগ্রেসও৷ কংগ্রেস ভুল স্বীকার করে৷ পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের সঙ্গে জোটবদ্ধ হইয়া তৃণমূল হঠাইবার সংগ্রামে সামিল হইয়াছে কংগ্রেস৷ নির্বাচনী প্রচারে আসিয়া কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি রাহুল গান্ধী বলিয়াছেন পাঁচ বছর আগে মমতাকে সমর্থন কংগ্রেসের বড় ভুল ছিল৷ সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করিতে সিপিএমের সঙ্গে সখ্যতায় মাতিয়াছেন৷ কংগ্রেস তো অজস্র ভুল করিয়াছে৷ বড় ভুল করিয়াছে ভারত বিভাজনকে মানিয়া নিয়া৷ কংগ্রেসের জওহরলাল নেহেরু ও জিন্নার ক্ষমতা লিপ্সাই দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে ভারতকে দ্বিখন্ডিত করা তো আরেক ভুল৷ যে ভুলের কোনও ক্ষমতা নাই৷ লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুদের জীবনে সেই রিক্ত নিঃস্বতার ঘটনা অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টের জন্য কাহারা দায়ী এই প্রশ্ণ তো বার বার উঠিয়াছে৷ সেই ভুলের ইতিহাস ভুলিয়া গেলে বর্তমান বুলের ফলে কতখানি মাশুল দিতে হইয়াছে তাহার হিসাব কে করিবে? সিপিএম দল তো একের পর এক ভুল করিয়াছে৷ এই দলের ঐতিহাসিক ভুলের কারণে জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী হইতে পারিলেন না৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির বিরোধীতা করিয়া ইউপিএ সরকারের উপর হইতে সমর্থন প্রত্যাহার করার কারণে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট গঠনের প্রক্রিয়া সহজ হয়৷ যদি ইউপিএ সরকারের উপর হইতে সিপিএম সেদিন সমর্থন প্রত্যাহার না করিতেন হয়তো কংগ্রেস মমতাকে সমর্থন করিত না৷
আজ রাহুল গান্ধী ভোটের রাজনীতিতে নামিয়া ভুল স্বীকারের রাজনীতি চালাইয়াছেন৷ কিন্তু আজ সিপিএমের সঙ্গে জোট করিয়া কংগ্রেস কি কোনও ভুল করে নাই? আবার পাঁচ বছর পর কি তিনি বলিবেন না ‘সিপিএমের সঙ্গে জোট করিয়া ভুল করিয়াছি৷’ বুজে৩ায়া পার্টি কংগ্রেসকে যেখানে উঠিত বসিতে গালাগাল চালইত, সেই সিপিএম এখন কি সৎ স্বচ্ছ হইয়া যাইবে! আজ ভাবিবার সময় আসিয়াছে৷ কংগ্রেসের ভবিষ্যত পরিণতি কোন্ পথে আগাইতে থাকে সেই প্রশ্ণও আছে৷ সুতরাং রাজনীতিতে কোনটা ভুল আর শুদ্ধ তাহা ভবিষ্যতই বলিতে পারে৷ আজ রাহুল গান্ধী যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে বিদ্ধ করিয়াছেন, আগামী দিনে পথ কতদূর যাইবে?
রাজনীতিতে কোনও নীতি নাই৷ যাহারা নীতির বুলি নিয়া আকাশ বাতাস কাঁপাইতে থাকেন তাহারা কি জানেন না আজকের যুব সমাজ কতখানি বিপন্ন, বিপথে চাতি হইতেছে৷ আজকের সুনাগরিকই তো দেশের ভবিষ্যত৷ কিন্তু রাজনীতির কালো থাবা তো ভবিষ্যত নাগরিকদের, দেশের কর্ণধার যাঁহারা হইবেন তাহাদের সর্বনাশ সাধন করিতেছে৷ এই ভুলের মাশুল তো দেশবাসীকে দিতে হইবে৷ কংগ্রেসের দূর্দিনের ইতিহাসও তো দেশবাসী দেখিয়াছে৷ ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধীর পতন হয়৷ কেন্দ্রে অকংগ্রেসী সরকার প্রতিষ্ঠা হয়৷ এই ত্রিপুরায় কংগ্রেসীরাই রাতারাতি দল বদল করেন৷ তখন ত্রিপুরায় কংগ্রেস বিরোধী সিএফডি ও জনতা পার্টির সঙ্গে সরকার গঠন করে৷ কিন্তু সিপিএম দুইটি সরকার হইতেই বিপ্লব করিয়া সরিয়া পড়ে৷ সেইদিন হইতেই ত্রিপুরার ক্ষমতার মসনদে সিপিএমের জয়যাত্রার সূচনা হয়৷ এরাজ্যে সিপিএম ক্ষমতার মসনদে অভিষিক্ত হইবার ক্ষেত্রে শচীন্দ্রলাল সিংহ, সমীর রঞ্জন বর্মন, রাধিকা রঞ্জন গুপ্ত প্রমুখদের অবদান তো অস্বীকার করিবার সুযোগ নাই৷ সেই ইতিহাস ভুলিয়া গেলে বর্তমান ও ভবিষ্যত রাজনীতির সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা করা কঠিন হইবে৷ রাজনীতিতে ভুল স্বীকার ও সুবিধাবাদী নীতি৷ এই সুবিধাবাদ যুগ যুগ ধরিয়াই প্রবাহমান৷ রাজনীতির এই ঐতিহ্য সহজে মুছিয়া যাইবার নহে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *