ভূমিকম্পের কারণে ভয়ানক বিপদের সম্ভাবনা যতো বাড়িতেছে সেই তুলনায় কিন্তু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হইতেছে না৷ বাংলা নববর্ষের প্রাক্ লগ্ণে মায়ানমার হইতে যে ভূকম্পনের উৎপত্তি তাহা গোটা দেশ সহ এই পার্বতী রাজ্য ত্রিপুরাকেও ঝাকুনি দিয়াছে৷ বাংলাদেশে এই কম্পনের পরিণতিতে বেশ ক্ষয়ক্ষতিও হইয়াছে৷ ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার মধ্যে ত্রিপুরা অন্যতম৷ অথচ এরাজ্যে এই ভূমিকম্পের বিপদ হইতে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যাইতে পারে, সে বিষয়ে তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাইতেছে না৷ শুধু ত্রিপুরা নহে অন্যান্য ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায়ও তেমন সতকর্তা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ আছে মনে হয় না৷ ত্রিপুরা ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসাবে চিহ্ণিত হইয়াছে৷ গত কিছুদিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার ভূমিকম্পন হইয়াছে৷ দিনে দিনে কম্পনের মাত্রাও বাড়িতেছে৷ ইহাই আজ বিপদের সম্ভাবনা বাড়াইয়া দিতেছে৷ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করিয়া রাজধানী আগরতলাতে বহুতল বাড়ী নির্মাণ হইতেছে৷ এইসব বিল্ডিংগুলির বেশীরভাগ ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি রোধে তেমন কোনও সাবধানতা নিতেছে না৷ আর এই কারণে রাজ্যের সামনে ভয়ানক বিপদের ঝঁুকি বাড়িতেছে৷ শহর আগরতলায় বিশেষ করিয়া পুর এলাকায় পুর নিগমকে পাত্তা না দিয়াই সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক ভাবে ভবন নির্মাণ হইয়া চলিয়াছে৷ এই ভবন নির্মিত হইলেও নিগম সেখানে নতজানু থাকিয়া মানুষের জীবন নিয়া ছেলেখেলা চালাইয়াছে৷ এই পরিস্থিতিকে খুব খাটো করিয়া দেখিবার সুযোগ নাই৷
লক্ষ্য করিবার বিষয় যে, রাজ্যে সাম্প্রতিক কালে ইট কংক্রিটের অট্টালিকা নির্মাণ বাড়িয়াছে৷ চার বা পাঁচ দশক পূর্বে এরাজ্যে হাতে গোনা দালানবাড়ী ছিল৷ অধিকাংশই ছিল ছন বাঁশের৷ দরিদ্রশ্রেণীর মানুষ ছিলেন নববুই শতাংশ৷ দিন আনিয়া দিন খাওয়া পরিবারের সংখ্যাই ছিল বেশী৷ গত এক দেড় দশকে রাজ্যে দারিদ্র্যসীমার উপরের পরিবারের সংখ্যা বাড়িতে থাকে৷ সরকারী কর্মচারীদের হাতেও পয়সা আসে৷ বিভিন্ন ব্যবসায় ও কালো ব্যবসার কারণে মানুষের হাতে কাড়ি কাড়ি টাকা আসে৷ দালান তৈরীর হিড়িক পড়িয়া যায়৷ ভূমিকম্পের বিপদ আসে বেশী এইসব দালান বাড়ীগুলিতেই৷ শহর আগরতলায় পুর নিগমের নিয়ম নীতি এবং যথাযথ সাবধানতা না নিযাই যেসব দালান বাড়ী তৈরী হইয়াছে সেগুলি বিপদ ডাকিয়া আনিতে পারে৷ পুর নিগমে বেআইনী দালান নির্মাণের দায়ে দালান মালিককে জরিমানা করিয়াই ক্ষমা করিয়া দিতেছে৷ কিন্তু বিপদের বিরুদ্ধে, সতর্কতা নেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখা যাইতেছে না৷ যদি ভূমিকম্পে এইসব দালানগুলি বিপদ ডাকিয়া আনে, মানুষের প্রাণ নিয়া টানাটানি করে তখন কে দায়ী হইবে? পুর নিগম কি এই ক্ষেত্রে দায় অস্বীকার করিতে পারিবে? একথা অনেক বেশী সত্যি যে, ভূমিকম্পের বিপদ নিয়া রাজ্য সরকার তেমন সজাগ সতর্ক নহে৷ অনতিবিলম্বে, রাজ্য সরকারকে রাজ্যের দালান বাড়ীগুলির সার্ভে করিয়া, যেগুলি বিপদ এড়াইতে পারে সেগুলির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতেই হইবে৷ এইসব দালানগুলি যেমন বিপদ ডাকিয়া আনিতে পারে, তেমনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে আজ ভাবিতে হইবে৷ এক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ও পুর নিগমের নীরবতা, ভয়ানক বিপদকে আরও বেশী ত্বরান্বিত করিবে৷