ফের আত্মসমর্পণ নাটক

sarrounderআবার আত্মসমর্পণ৷ ১২ জন এনএলএফটি বৈরী অস্ত্রশস্ত্র ও বউ বাচ্চা সহ আত্মসমর্পণ করিয়াছেন৷ ত্রিপুরা উগ্রপন্থী মুক্ত রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি পাইবার পর আবার এই আত্মসমর্পণের ঘটনাকে কী বলা যাইবে? ত্রিপুরায় এই রকম নাটক তো অনেক হইয়াছে৷ আর কত নাটক চলিবে, এই প্রশ্ণ উঠিতেই পারে৷ রবিবার ১২জন জঙ্গী আত্মসমর্পণ করে৷ সোমবার রাজ্য পুলিশের ডিজি সাংবাদিক সম্মেলনে এই আত্মসমর্পণকারীদের্ হাজির করিয়াছেন৷ পুলিশ যে বিরাট এক কর্ম সম্পাদন করিয়াছেন সেই কৃতিত্বের কথাই তো প্রচার করা হইল৷ আত্মসমর্পণকারীর যেসব তথ্য প্রদান করিয়াছেন তাহা যদি সত্যি হয় দেখা যাইবে বাংলাদেশ সরকার ভারতের জঙ্গীদের সব ঘাঁটি ভাঙ্গিয়া দিতে পারে নাই৷ আত্মসমর্পণকারীরাই জানাইয়াছেন, সেদেশে আরও পঁচিশটি জঙ্গী ঘাঁটি বিদ্যমান৷ বহু জঙ্গী দীর্ঘ দিন বাংলাদেশে থাকিয়া সে দেশের নাগরিকত্বই নিয়া ফেলিয়াছেন৷ সোজা কথায়, মৃত সৈনিকদের আবার বীরের মর্যাদা দেওয়া৷ এরাজ্যে দীর্ঘ দিন বহু আত্মসমর্পণ নাটক মঞ্চস্থ হইয়াছে৷ রাজ্য সরকারের কোটি কোটি টাকা ঢালা হইয়াছে এই স্বভাবিক জীবনে ফিরিয়া আসা জঙ্গীদের পিছনে৷ আত্মসমর্পণের নাটক তো অনেক আগেই বন্ধ করিবার দাবী উঠিয়াছিল৷ কিন্তু না, এই নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার অর্থই হইল উগ্রপন্থাকে পরোক্ষে বীরত্বের মর্যাদা দেওয়া৷ এইসব উগ্রপন্থীরা কোনও সময়ই স্বাধীন ত্রিপুরার জন্য, উপজাতিদের মুক্তির জন্য অস্ত্র হাতে তুলিয়া নিয়াছে ভাবিলে ভুল হইবে৷ স্রেফ নিজেদের অর্থ উপার্জনের ধান্দায় তাহারা এই লাইনে ছুটিয়াছে৷ এক সময় বহু মানুষের টাকা নিয়াছে৷ প্রাণ নিয়াছে৷ লক্ষ লক্ষ টাকার মুক্তিপণ নিয়াছে৷ তাহারা বাংলাদেশে রাজার হালে দিন কাটাইয়াছেন৷ একথা সত্যি যে, শেখ হাসিনা ভারতের জঙ্গীদের বিষ দাঁত ভাঙ্গিয়া দিয়াছেন৷ বাংলাদেশের মাটিতে ভারত বিরোধী কাজ করিতে না দেওয়ার ফরমান সত্বেও বৈরীরা এখনও কিভাবে বহাল তবিয়তে থাকিতে পারেন, সেই প্রশ্ণ উঠিতেই পারে৷
আত্মসমর্পণকারী জঙ্গীরা জানাইয়াছেন যে, তাঁহারা খুব আর্থিক সংকটের মধ্যে আছেন৷ তীব্র যন্ত্রণায় তাহারা বুঝিতেছেন যে এই পথ ভ্রান্ত পথ৷ জনৈক আত্মসমর্পণকারী জঙ্গী জানাইয়াছেন, তিনি ১৯৯৫ সাল হইতে এই জঙ্গী জীবনে রহিয়াছেন৷ এই চরম অর্থ কষ্ট না থাকিলে তিনি আত্মসমর্পণ করিতেন কি সন্দেহ৷ প্রশ্ণ উঠিয়াছে, ১২ জন জঙ্গী বউ বাচ্চা সহ বাংলাদেশে সংসার পাতিয়াছিলেন৷ যাহারা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেন তাহাদের কাছে তো সংসার তুচ্ছ৷ সেই সংগ্রামীদের আত্মসমর্পণের নাটক করাইয়া বীরের মর্যাদা দেওয়ার মধ্যে কী লক্ষ্য কাজ করিতেছে বুঝা মুশকিল৷ যাহারা বন্দুক হাতে বিপথগামী হইয়াছিল তাহারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়া আসিতেছে, তাহা তো খুব ভাল কথা৷ এতদিন পর বন্দুকধারীরা বুঝিতে পারিলেন যে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে যাইতে হইবে৷ বিপথগামী যুবকদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরাইয়া আনা রাজ্য সরকারের নীতি৷ এই নীতি নিঃসন্দেহে ভাল৷ কিন্তু বিপথগামী এমন বীরের সম্মানের কোনও যুক্তি নাই৷ অন্যান্য অপরাধীদের মতোই তাহাদের বিরুদ্ধে লুন্ঠন, খুনের মামলা হইবে না কেন? এইসব ঝুট ঝামেলা হইতে মুক্তি পাইবার নিমিত্তই আত্মসমর্পণের এই নাটক করা হইয়াছে৷ অতীতেও এই আত্মসমর্পণ নাটক করা হয়৷ অতীতে এই আত্মসমর্পণ নাটক উপজাতি যুবকদের উগ্রপন্থায় কার্য্যত উৎসাহিত করিয়াছিল৷ বহু মানুষের রক্ত যাহারা পান করিয়াছেন উগ্রপন্থী বলিয়া তাহা মাপ হইয়া যাইবে? উগ্রপন্থীদের আত্মসমর্পণের এই নাটক বন্ধ না হইলে সমস্যা বাড়িবেই৷ যুগ যুগ ধরিয়া এই গুটিকয় বৈরীদের জন্য আমাদের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হইবে? সরকারকে কঠোর হইতে হইবে৷ এই আত্মসমর্পণের নাটক বন্ধ করিতে হইলে সরকারের নীতির পরিবর্তন করিতে হইবে৷ মনে রাখিতে হইবে, যতদিন খুনীদের খুনী হিসাবে পরিচয় দেওয়া না যাইবে ততদিন বৈরী সমস্যার চির নির্বাসন হইবে না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *