BRAKING NEWS

কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতার পদ থেকে ইস্তফা দিলেন সুদীপ, সোনিয়াকে পত্র বোমা, বঙ্গে বামেদের সাথে জোটের বিরুদ্ধে ত্রিপুরায় কংগ্রেসে বিদ্রোহ

CLP Resignনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ এপ্রিল৷৷ পশ্চিবঙ্গে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটের প্রতিবাদে ত্রিপুরায় কংগ্রেসে বিদ্রোহ প্রকাশ্যে আছড়ে পড়ল৷ প্রতিবাদে কংগ্রেস পরিষদীয় নেতার পদ থেকে পদত্যাগ করলেন সুদীপ রায় বর্মণ৷ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা আগামীকাল কংগ্রেস ভবনে এক বৈঠক ডেকেছেন৷ এদিকে, সুদীপ বর্মণ দলবল নিয়ে খুব শীঘ্রই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে চলেছেন বলে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷
আজ তিনি বিধানসভায় লবিতে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সাথে সখ্যতাকে ঘিরে কংগ্রেস হাইকমান্ডের ব্যবহারে প্রচন্ড হতাশ হয়েছেন৷ তিনি দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে এক চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনে কংগ্রেসের নাটকীয় পটপরিবর্তনে তিনি মারাত্মকভাবে হতাশ হয়েছেন৷ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বামেদেরে সাথে সমঝোতার কি এমন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তা নিয়ে তিনি প্রশ্ণ তুলেছেন৷ ত্রিপুরা এবং কেরেলায় এক অবস্থান কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে অন্য অবস্থানকে ঘিরে জনমনে ভুল বার্তা পৌঁছেছে৷ তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ত্রিপুরা এবং কেরেলাতে বামেদের সাথে বিরোধীতা করছে কংগ্রেস৷ অথচ পশ্চিমবঙ্গে সেই বামেদের সাথেই সমঝোতা করে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে৷ তাতে ত্রিপুরায় রাজ্যবাসীর মনে কংগ্রেসের নীতি আদর্শ নিয়ে নানা প্রশ্ণ উঠতে শুরু করেছে৷ তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং কেরেলা এবং ত্রিপুরাতে রাজনৈতিক শত্রুতার সম্পর্ক এই তত্ত্ব মানুষ বিশ্বাস করে না৷ কংগ্রেস হাইকমান্ডের পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে বামেদের সাথে সমঝোতা শুধু এই তিনটি রাজ্য নয় জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে বলে শ্রীবর্মণ দাবি করেন৷ তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য বামেদের সাথে কোনভাবেই আপোষ করা যাবে না৷ কংগ্রেস হাইকমান্ড নীতি আদর্শ বিসর্জন দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সাথে সমঝোতার পথে হাঁটলেও এই সিদ্ধান্ত কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না৷
এদিন, তিনি আরো বলেন, সস্তা রাজনীতির স্বার্থে হয়তবা পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতৃত্বরা বাম আমলের অত্যাচার ভুলে গেছেন৷ যার কারণে এই বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সাথে হাত ধরাধরি করে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন৷ দলীয় হাইকমান্ডের বামেদের সাথে সখ্যতার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই শ্রীবর্মণ কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি পাঠিয়ে তাঁর আপত্তির কথা জানিয়েছেন৷ পাশাপাশি দলের এই ভুল সিদ্ধান্তের সাথে কোনভাবেই আপোষ করবেন না বলে বিরোধী দলনেতার পদ থেকে ইস্তফা মঞ্জুর করার আর্জি জানিয়েছেন৷ এদিন তিনি, বিধানসভার অধ্যক্ষ রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথের কাছে বিরোধী দলনেতার পদ থেকে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন৷
এদিকে, শ্রীবর্মণ জানিয়েছেন, বিরোধী দলনেতা পদ থেকে আরো কয়েকদিন আগেই পদত্যাগ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ কিন্তু রাজ্য বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ায় কয়েকদিন তিনি এই পদ থেকে পদত্যাগ করা থেকে বিরত থেকেছেন৷ আজ বাজেট অধিবেশন শেষ হতেই তিনি বিরোধী দলনেতা পদ থেকে পদত্যাগ করবেন বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷
তবে, কংগ্রেস বিধায়কের পদ থেকে এখনই পদত্যাগ করছেন না বলে তিনি জানিয়েছেন৷ শীঘ্রই দল ত্যাগ করবেন কিনা সে প্রশ্ণেও সরাসরি কোন উত্তর দেননি তিনি৷ এবিষয়ে শ্রীবর্মণ জানিয়েছেন, রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর বিচার বিবেচনা করে আগামী দিনে সিদ্ধান্ত নেবেন৷ তাতে খুবই শীঘ্রই কংগ্রেস ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে৷ প্রশ্ণ উঠেছে, কংগ্রেস ছেড়ে সুদীপ রায় বর্মণ সহ দলের মোট ৭ বিধায়ক এক সাথে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন কিনা৷ যদি একত্রে ৭ বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেন তাহলে তাদের বিধায়ক পদ বহাল থাকবে৷ সেক্ষেত্রে প্রশ্ণ উঠেছে সুদীপ রায় বর্মণের সাথে বিদ্রোহী আর কারা হচ্ছেন৷ এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে সুদীপ রায় বর্মণের সাথে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক বিশ্ববন্ধু সেন, আশিস কুমার সাহা এবং দিবাচন্দ্র রাঙ্খল৷ অধ্যক্ষের কাছে যখন শ্রীবর্মণ পদত্যাগ পত্র জমা দিতে যান তখন তার সাথে ছিলেন বিধায়ক আশিস কুমার সাহা এবং বিশ্ববন্ধু সেন৷ তাতে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন উঠেছে সুদীপ রায় বর্মণের সাথে কংগ্রেসের বিদ্রোহী ৭ বিধায়কের তালিকায় আশিস কুমার সাহা এবং বিশ্ববন্ধু সেন রয়েছেন৷ এদিকে, বিধানসভা অধিবেশনে রাজ্য বিধানসভার নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে পাবলিক একাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদে শ্রীবর্মণ বিধায়ক জীতেন্দ্র সরকারের নাম সুপারিশ করেছেন এবং তিনি মনোনীতও হয়েছেন৷ তাতে এও গুঞ্জন উঠেছে হয়তবা বিধায়ক গোপাল চন্দ্র রায় বিদ্রোহের খাতায় নাম না লেখালেও বিধায়ক জীতেন্দ্র সরকার সুদীপ রায় বর্মণের প্রতি আনুগত্য দেখাবেন৷ এদিকে, বিধায়ক প্রণয়জিৎ সিংহ রায় বরাবরই বর্মণপন্থী৷ ফলে, বিদ্রোহী কংগ্রেস বিধায়কের তালিকায় শ্রীসিংহ রায়ের নামও ঠাঁই পাবে বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে৷ ফলে, শ্রীবর্মণ সহ মোট ছয় জন বিধায়ক ইতিমধ্যেই অঘোষিত বিদ্রোহী বিধায়কের তালিকায় রয়েছেন৷ বাকি প্রয়োজন একজন বিধায়কের৷ সূত্রের খবর, সাত বিধায়কের কোটা পূরণ করতে বর্মণ শিবির বিধায়ক দিলীপ সরকারকে দলে টানার আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করেছেন৷ যতদূর জানা গেছে, দিলীপবাবু হয়তবা বর্মণ শিবিরের ডাকে সাড়া দিতে পারেন৷
এদিকে, দলে বিদ্রোহের আঁচ পেয়ে পিসিসি সভাপতি বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা শুক্রবার কংগ্রেস ভবনে জরুরি বৈঠকের আহ্বান করেছেন বলে সূত্র অনুসারে জানা গেছে৷ কারণ, এদিন শ্রীবর্মণের সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেসের যুব ব্রিগেডের কান্ডারিরা উপস্থিত ছিলেন৷ যুব কংগ্রেস সভাপতি সুশান্ত চৌধুরী এবং প্রাক্তন এনএসইউআই সভাপতি ভিকি প্রসাদ বরাবরই সুদীপ রায় বর্মণের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে থাকেন৷ তাদের আজ শ্রী বর্মণের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিতি রাজ্যে কংগ্রেসের যুব শিবির ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যাওয়ার আভাষ দিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ ফলে, রাজ্যে মারাত্মক অস্তিত্ব সংকটের মুখে প্রদেশ কংগ্রেস৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *