BRAKING NEWS

শত্রু যখন মিত্র

Congress CPIMরাজনৈতিক ক্ষেত্রে শত্রু মিত্রের ঘটনা চিরস্থায়ী হয় না৷ এক দলের প্রতি অন্য দলের প্রেম ভালবাসার ঘটনা খুব ক্ষণস্থায়ী৷ তবে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে রাজনৈতিক জোট বা ফ্রন্ট বছরের পর বছর টিকিয়াছে৷ যেমন বামফ্রন্ট৷ কংগ্রেসকে পরাস্ত করিতে বাম দলগুলি যে জোট বা ফ্রন্ট গড়িয়াছে তাহা সম্ভবত বিশ্ব রেকর্ড করিয়াছে৷ তবে, বাম দলগুলি যদি সমশক্তির অধিকারী হইত তাহা হইলে এই জোটের আয়ুস্কাল কতদিন থাকিত বলা মুশকিল৷ সিপিএম বড় শরিক৷ অন্যান্য বাম দলগুলি যেমন সিপিআই, আরএসপি ও ফরোয়ার্ড ব্লকের মতো বাম দলগুলির দূর্বল অস্তিত্বের কারণে দীর্ঘ সখ্যতার ইতিহাস তৈরীর সুযোগ হইয়াছে৷ তবু, ছোট শরিকরা বঞ্চনা, উপেক্ষার অভিযোগ তুলিতে ও বিদ্রোহের পথ ধরিতে চান না৷ কারণ, বড় শরিক সিপিএম’র সঙ্গ ছাড়িলে ছোট শরিকদের অস্তিত্ব টিকাইয়া রাখাই মুশকিল হইবে৷ সূর্য্যের আলোতে যেমন চাঁদ আলোকিত হয়, এক্ষেত্রেও বোধহয় এমনই পরিস্থিতি৷ সিপিএমই শেষ কথা বলিবার শক্তি রাখে, অন্য বাম শরিকরা নতমস্তকে তাহাই মান্য করিয়া বাম ও গণতান্ত্রিক ঐক্যের জয়যাত্রাকে বাঁচাইয়া রাখিয়াছে৷ তৃণমূল কংগ্রেসকে হটাইতে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের দোস্তির বিষয়ে ছোট বাম শরিকরা কার্য্যত বিরোধীতাই করিয়াছেন৷ কিন্তু পছন্দের না হইলে বা নীতি বিরুদ্ধ হইলেও সিপিএম এর সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করিবার ‘দুঃসাহস’ দেখাইবে না ছোট বাম শরিকরা৷ ইতিহাসের কী নির্মম পরিহাস৷ যে কংগ্রেসকে হটাইতে বামফ্রন্ট তৈরী হইয়াছিল সেই বামেরাই এখন কংগ্রেসের সঙ্গে গলাগলি করিতেছেন- ইতিহাসের কী নির্মম অভিজ্ঞতা৷ রাজনীতির এই নীতিহীনতায় সাধারণ মানুষ আজ অনেক বেশী বিচলিত৷ বিচলিত এই কারণে যে, যদি রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষমতা দখলই মুখ্য হয়, সমস্ত নীতিবোধকে বিসর্জন দিয়া, সেখানে ভবিষ্যত তো অনেক বেশী বিপদের৷ যদি রাজনীতির মধ্যে নীতিবোধ না থাকে সেখানে সাধারণ মানুষ কোথায় দাঁড়াইবে? স্বাধীনতার পরে দীর্ঘদিন সিপিএম ক্ষমতাসীন ছিল না৷ তাই বলিয়া নীতির সঙ্গে তো আপোষ করে নাই৷ পাঁচ বছর তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনেই এই বাম দলের নিঃশেষ হইয়া যাইবার অবস্থা৷ যে কংগ্রেসকে চোর, স্বৈরতন্ত্রী, দুর্নীতিবাজ, দেশের সর্বনাশের হুতা, সেই দলকেই বুকে টানিয়া নেওয়ার মতো ইতিহাসও দেশের মানুষকে দেখিতে হইল?
রাজনীতিতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের ঢেউ বহিয়া যাওয়ার মধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্য দেখা যায়৷ কিন্তু, এই পরিবর্তনশীলতা কোনও নীতিহীনতায় আচ্ছন্ন হইলে সাধারণের মনে তেমন গ্রহণযোগ্যতা পায় না৷ এখন এই ত্রিপুরাতেও কংগ্রেস সম্পর্কে সিপিএম সঙ্গত কারণেই নমনীয় হইবে৷ অন্যদিকে কংগ্রেসকেও বন্ধুত্বের হাত বাড়াইতে হইবে৷ বিমল সিনহা হত্যার দায়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের পদত্যাগ ও সিবিআই তদন্তের দাবীতে কংগ্রেস আঠারই এপ্রিল চবিবশ ঘন্টার ত্রিপুরা বন্ধ ডাকিয়াছে৷ সেই বন্ধকে কি কংগ্রেস হাইকমান্ড অনুমোদন দিয়াছে? আর হাইকমান্ডের অপছন্দের সিদ্ধান্ত কি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানিয়া নিতে পারিবেন? যদি হাইকমান্ড ত্রিপুরায় কুস্তি বঙ্গে দোস্তির প্রতি অবিচল থাকেন তাহাকে তো বলা হইবে দ্বিচারিতা৷ একটি দল কি এমন দ্বৈত নীতি নিতে পারে? আসলে, এই ত্রিপুরায় বীরজিৎ সিনহা দলকে চাঙ্গা করিতেই বন্ধের পথ ধরিয়াছেন৷ কিন্তু সাধারণ কর্মীরা সমর্থকরা তো এই দুই মুখো রাজনীতিতে অংশ নিবেন না৷ কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়া পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন যুদ্ধে নামিয়া সিপিএম নয়া ইতিহাসের পথে পা বাড়াইয়াছেন৷ এই ঘটনায় আগামী দিনে ত্রিপুরায় কংগ্রেসও ইতিহাস হইয়া যাইবে৷ এক সময় কংগ্রেসের অশোক ভট্টাচার্য্য বকুল তলায় মোমবাতি জ্বালাইয়া সভাপতির চেয়ার ধরিয়া রাখিয়াছিলেন৷ কিন্তু, সেদিন কংগ্রেস ছিল সিপিএমের শত্রু৷ উঠিতে বসিতে কংগ্রেসের বাপান্ত না করিয়া জল স্পর্শ করিতেন না সিপিএম নেতারা৷ আর আজ?
বিমল সিনহা হত্যার বিষয়ে ইউসুফ কমিশনের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে সিপিএম দল ও সরকারকে বড় বেশী বিপাকে ফেলিয়া দিয়াছে৷ কিন্তু, এরাজ্যে এই ইস্যুতে রাজ্যব্যাপী গণআন্দোলনের পথে পা বাড়াইবার শক্তি তো কোনও বিরোধী দলের নাই৷ কংগ্রেস এ রাজ্যে সাইনবোর্ড হইয়া যাইতেছে আর নতুন ভাবে আগাইয়া যাওয়ার চেষ্টা করিতেছে বিজেপি৷ কিন্তু, এই দল শত চেষ্টা করিলেও সর্বত্র শিকড় পরিব্যাপ্ত করিতে পারিবে না৷ রাজ্যের সিপিএম খুব শীঘ্রই স্ট্রেটেজী পরিবর্তন করিতে যে প্রয়াসী হইয়াছে তাহাও ক্রমেই স্পষ্ট হইতেছে৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সভা সমাবেশে এখন বিজেপির বিরুদ্ধে অনেক বেশী আক্রমণাত্মক দেখা যায়৷ অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসার জবাব দিতে সিপিএমের গণসংগঠনগুলি মাঠে নামিয়া গিয়াছে৷ কংগ্রেস সেখানে নীরব নিস্তব্ধ৷ বন্ধ ডাকিয়াই যেন কর্তব্য শেষ৷ পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্ব গাঢ় করিয়া ত্রিপুরায়ও তাহার ব্যতিক্রম করার ঘটনা আরও হাস্যাস্পদ হইতে পারে৷ সুতরাং ত্রিপুরাতেও কংগ্রেস- সিপিএম ভাই ভাই’র ডাক তো সহসাই শোনা যাইবে৷ বন্ধের বিপ্লব, এইভাবে খতম হইবার সম্ভাবনা আছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *