রাজনীতির সহজ অর্থ দাঁড়ায় রাজার নীতি ইংরেজিতে বলা হয় পলিটিক্স৷ এই রাজনীতি নামটাই পরিবর্তন হওয়ার সময় আসিয়াছে৷ এই রাজনীতি শব্দটা বহুল ব্যবহারের কারণে জনমনে অর্থগত ভাবগত দিক যেভাবে দাঁড়াইয়াছে সেখানেই এখন নতুন প্রশ্ণ আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে৷ যাহারা সততা, নীতি ও আদর্শের প্রশ্ণে অবিচল থাকেন তাঁহারই শ্রদ্ধা, সম্মান ও বিশ্বাসের ভিতকে মজবুত করিতে পারেন৷ সেই বিশ্বাস যখন ভাঙ্গিয়া খান খান হইয়া যায়, তখনই ভ্রষ্টাচার, অবক্ষয়, নীতিহীনতায় আক্রান্ত হয় সেই রাজনীতি বা পলিটিক্স৷ এই পলিটিক্সে প্রকৃত দেশপ্রেমিক, সৎ সজ্জন বিশ্বাসী নেতার স্থান হয় না৷ আর তাহার জ্বলন্ত প্রমাণ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু৷ কংগ্রেসে তিনি অচ্যুত হইলেন৷ মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধী যিনি অহিংসার প্রতিমূর্ত্তি হিসাবে প্রচারিত, তিনিই সুভাষ বসুকে কংগ্রেসের নেতৃত্বের বিরোধীতা করিয়াছিলেন৷ সভাপতি পদে সুভাষ দাঁড়াইয়াছিলেন৷ কিন্তু গান্ধীর প্রার্থী ছিলেন সীতারামাইয়া৷ গান্ধী বলিয়াছিলেন সীতারামাইয়ার পরাজয় মানে আমার পরাজয়৷ সুতরাং সুভাষকে কংগ্রেস ছাড়িতেই হইয়াছিল৷ সেই স্বাধীনতার পূর্বে, সৃষ্টির কাল হইতেই কংগ্রেস কার্য্যত নীতিহীন ভ্রষ্টাচারী দল হিসাবে ইতিহাসে কলংক লেপন করিয়া আছে৷ জওহরলাল নেহেরুর প্রধানমন্ত্রীত্ব পাওয়ার লোভ দেশকে দ্বিখন্ডিত করিয়াছে৷ লক্ষ লক্ষ মানুষকে রিক্ত নিঃস্ব পথের ভিখারী করিয়াছে এই কংগ্রেস৷ আর এই স্বাধীনতার সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা তো ছিল বৃটিশের দালালী করা৷ সুভাষ বসু ও গান্ধীর মতাদর্শগত বিস্তর ফারাক ছিল৷ দেশের জন্য সুভাষ যে আত্মত্যাগের নজীর রাখিয়াছেন, যেভাবে বৃটিশকে উৎখাত করিতে আজদ হিন্দ বাহিনী নিয়া ঝাপাইয়া পড়িয়াছিলেন, সেই স্মরণীয় ইতিহাস কংগ্রেসের কি ছিটেফোঁটা আছে? এই দল বারবার ক্ষমতার জন্য নীতি আদর্শের ধারে কাছেও থাকে নাই৷ কমিউনিস্টরা নেতাজী সুভাষকে জার্মানীর কুত্তা, সাম্রাজ্যবাদের দালাল বলিয়া গালাগাল দিয়াছে৷ এই ভুল স্বীকার করিয়া কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসু অবশ্য পাপ স্খলনের চেষ্টা করিয়াছিলেন৷ কমিউনিস্টরা যেমন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের কার্য্যত সহযোগী ছিলেন না, তেমনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও সিপিএম সমর্থন দেয় নাই৷ অথচ স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের নাম বেচিয়া তাহারা সম্মান কুড়াইতেছেন৷ রাজনীতির এত বড় ভ্রষ্টাচার যেখানে সেখানে মানুষ কোথায় দাঁড়াইবে, জ্বলন্ত প্রশ্ণ আজ ইহাই৷
অনেকেই বলিয়া থাকেন রাজনীতিতে শেষ কথা বলিয়া কিছু নাই৷ কিন্তু ন্যুনতম নীতি থাকিবে না? ক্ষমতার জন্য সমস্ত কিছুকেই বিসর্জন দিতে হইবে? এই নীতি তো সুবিধাবাদী, ভ্রষ্টাচারী৷ ইহাকে ‘রাজনীতি’ বলিবার সংগত কারণ নাই৷ যদিও বহুল প্রচলিত এই শব্দটার মধ্যে এখন মানুষের অবিশ্বাস ও ঘৃণা মিশ্রিত আছে৷ স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের সামান্য আলোচনা সংগত কারনেই আসিয়া পড়িল৷ কারণ, মুণি ঋষিদের দেশ এই ভারতের রামায়ণ মহাভারতেও রাজনীতির মধ্যে নীতির বড় অভাব ছিল না৷ রাম রাবণের যুদ্ধ, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সূচনাই তো হইয়াছিল দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে৷ সেই যুদ্ধেরই এখন খুব বেশী প্রয়োজন অনুভুত হইতেছে৷ এইভাবে নীতিহীনতা মানুষকে বড় বেশী বিড়ম্বনায় ঠেলিয়া দিতেছে৷ পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে হটাইতে কংগ্রেস জোট করিল সিপিএমের সঙ্গে৷ কোনও নীতিবান মানুষ তাহা মানিয়া নিতে পারে? বঙ্গে ও ত্রিপুরার ইতিহাসে কী দেখা যায়? এই দুই দল একে অপরের রক্ত পান করিয়াছে৷ বঙ্গে কংগ্রেস- সিপিএম জোটকে ত্রিপুরায় কোনও দলই মানিয়া নিতে পারে নাই৷ বিপদে পড়িয়া ঢোক গিলিবার অবস্থা৷ পরিস্থিতি এমন যে, এরাজ্যে কংগ্রেস ভাঙ্গিয়া চুরমার হইয়া যাইবে৷ পলিটিক্সের হিসাবে কোথায় দাঁড় করাইবে কংগ্রেসের তাবড় নেতারা? যে নেতারা এতদিন সিপিএমের বিরুদ্ধেই লড়াই করিয়া আসিয়াছেন, এই দল খারাপ খুনী৷ এখন কংগ্রেস কিভাবে বন্ধুত্বের হাত বাড়াইবে? গভীরতর অস্তিত্বের সংকটের মুখে এরাজ্যের কংগ্রেসের নেতারা৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা বন্ধ ডাকিয়াও সুবিধা করিতে পারিবেন না৷ বঙ্গে প্রেম, রাজ্যে সংঘাত, এই দুই নীতি নিয়া কংগ্রেস বা সিপিএম নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন করিবে না? সারা দেশেই আজ দুই দলই তো প্রশ্ণের মুখে পড়িয়া গিয়াছে৷ কথায় আছে একই অঙ্গে বহুরূপ৷ কেরলে ও ত্রিপুরায় সংঘাত বঙ্গে দোস্তি৷ এমন নীতিহীনতাকে রাজনীতি বলা যায় না ইহা চরম সুবিধাবাদী স্বার্থবাদীতার নগ্ণ নজীর৷ সেই দিন আসিতেছে, যেদিন মানুষ জাগিয়া উঠিবে৷ সেই বিপ্লবের সময় আসন্ন৷ তাহা না হইলে দেশ, মানুষ বাঁচিবে কি করিয়া?
2016-04-04