BRAKING NEWS

কং-এআইইউডিএফ সম্পর্কে মৌন, বিজেপিকে ভোট না-দেওয়ার আহ্বান অসমের বুদ্ধিজীবীদের, ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার ঝড়

assam mapগুয়াহাটি, ৩ এপ্রিল (হি.স.) : অসম বিধানসভা ভোটের হাওয়া যখন উত্তপ্ত, তখন বিজেপিকে একটিও ভোট না-দিতে রাজ্যের কতিপয় বুদ্ধিজীবীর আহ্বানকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার ঝড় উঠেছে। গতকাল ড. হীরেন গোহাঁই-সহ রাজ্যের ৪২ জন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে বিজেপিকে ভোট না-দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। বিজেপিকে ভোট না-দেওয়ার আহ্বান জানালেও তাঁরা ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ কংগ্রেস কিংবা ‘সাম্প্রদায়িক’ এআইইউডিএফ সম্পর্কে একটি বাক্যব্যয় না-করায় তাঁদের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সরাসরি নানা প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বুদ্ধিজীবীর তকমা পরে নিরপেক্ষতার ধারে-কাছেও না গিয়ে কাকে ভোট দিতে হবে, কাকে না সেই আহ্বান জানানোর অধিকার তাদের কে দিয়েছে। কেউ কেউ এমনও বলছেন, তাঁদের সবাই যে বাম আদর্শে গড়া, তা আর গোপন রাখতে পারেননি, এবার তা ফাঁস হয়ে গেছে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক এবং পুঁজিপতিদের এজেন্ট বলে আখ্যা দিয়ে গতকাল মহানগরীর লক্ষ্মীরাম বরুয়া সদনে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে আসন্ন রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে এই দলকে ভোট না-দিতে জনসাধারণের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন ড. গোহাঁই প্রমুখ বুদ্ধিজীবীরা। সাংবাদিক সম্মেলনে ৪২ জন সাহিত্যিক, শিল্পী-কলাকুশলি বুদ্ধিজীবী স্বাক্ষরিত এক আবেদনপত্র বিলি করেছেন তাঁরা। আশ্চর্যের বিষয়, বিতরিত ওই আবেদনপত্র বা সাংবাদিক সম্মেলনে ড. হীরেন গোহাঁই, ড. উদয়াদিত্য ভরালি কিংবা অন্যান্য বুদ্ধিজীবীরা বিজেপিকে তাঁদের আক্রমণের লক্ষ্য করলেও বিগত পনেরো বছরের কংগ্রেস আমলে সংঘটিত ব্যাপক দুর্নীতি, ভ্রষ্টাচার, অপশাসন, স্বজনপোষণ, গোষ্ঠী সংঘর্ষ, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ইত্যাদি নিয়ে টু-শব্দও করেননি। মৌন ছিলেন বদরুদ্দিন আজমল নেতৃত্বাধীন এআইইউডিএফ-এর মৌলবাদী ভূমিকা সম্পর্কেও। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের প্রান্তে প্রান্তে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়ার ঢেউ উঠছে, প্রকারান্তরে এইসব বুদ্ধিজীবীরা ভ্রষ্টাচারী কংগ্রেসকে ফের ক্ষমতায় আনতে কৌশলী পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে। বিতরিত আবেদনপত্রে যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন তাঁরা যথাক্রমে ড. হীরেন গোঁহাই, উদয়াদিত্য ভরালি, নীলমণি ফুকন, নলিনীধর ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান, ড. শিবনাথ বর্মন, অবনী বরঠাকুর, অণিমা গুহ, অদীপকুমার ফুকন, লোকনাথ গোস্বামী, নিরুপমা বরগোহাঞি, অখিলরঞ্জন দত্ত, পদ্মলোচন নাথ, দীনেশ বৈশ্য, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, হাফিজ আহমেদ, দেবব্রত দাস, দিলীপ বরা, শরৎ ফুকন, সঞ্জয় বরবরা, অম্লানজ্যোতি দেউরি, অরূপজ্যোতি শইকিয়া, অঙ্কুর তামুলি ফুকন প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে আবেদনপত্রখানা বিতরণ করে ড. হীরেন গোহাঁই বলেছিলেন, ‘অসমের জনগণকে গোষ্ঠীগত এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় মত্ত করে অর্থনৈতিকভাবে রাজ্যকে শোষণ ও লণ্ঠন করার সকল ষড়যন্ত্র রচনা করা হয়েছে। একদিকে জনতার মধ্যে বিভাজন, অন্যদিকে দেশের সম্পদ ও বাজারকে পুঁজিপতির হাতে তোলে দেওয়াই বিজেপি ও তাদের দলের প্রকৃত উদ্দেশ্য। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি এবং আরএসএস ভারতীয় সংসদীয় রাজনীতিতে দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু।’ ‘এমন এক জটিল সন্ধিক্ষণে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিভেদকামী, সাম্প্রদায়িক, ফ্যাসিবাদী এবং কর্পোরেট-এজেন্ট বিজেপিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করতে’ আহ্বান জানান তিনি। রাজ্য এমন দলের অগ্রগতি মানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়া, বহুজাতিক কোম্পানির আগ্রাসন ঘটা।
আরেক বুদ্ধিজীবী উদয়াদিত্য ভরালি বলেন, ‘বিজেপি উগ্র দেশপ্রেমের দ্বারা পরিচ্ছন্ন দেশপ্রেমকে ধূলিস্যাৎ করতে চাইছে। এই দল যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে দেশে তথা জাতির অন্ধকার নিশ্চিত।’ হিন্দি বলয়ের প্রভাবও রাজ্যে বিস্তারিত হবে বলে মনে করেন ভরালি। সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য পেশ করেন দীনেশ বৈশ্য, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, মুকুটলোচন কলিতা হাফিজ আহমেদ, ইসমাইল হোসেন সীতানাথ লহকর, সবিতা লহকর, সুপর্ণা লাহিড়ী প্রমুখ। তাঁরা বলেন, মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে দেশকে পঙ্গু করতে নেমেছে বিজেপি সরকার। অসম তথা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ পুঁজিপতিদের দ্বারা লুণ্ঠন করে স্থানীয় শ্রমজীবী মানুষের জীবনে অন্ধকার নামানোর চক্রান্ত করছে এই দল। নিম্ন সুবনশিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বাঁধ নির্মাণ করতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সংকল্পবদ্ধ। তাই এই দলকে ভোট দিয়ে রাজ্যে সরকার গড়ার পথ সুগম করা মানে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়োল মারার সমান বলে বক্তব্য পেশ করেন তাঁরা।
গতকালের ওই সাংবাদিক সম্মেলনের বিরুদ্ধাচরণ করে রাজ্যের অসংখ্য বিশিষ্ট ব্যক্তি বলছেন, ‘এবার অসমের এই বুদ্ধিজীবীদের মুখোশ খুলে গেছে, এঁদের পক্ষপাতদুষ্ট চেহারা প্রকট হয়ে গেছে। বামপন্থী এইসব বুদ্ধিজীবীরা যেহেতু কোনও রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য প্রকাশ করেননি, সেইহেতু এমন আহ্বান জানানোর অধিকার তাঁদের কে দিয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *