BRAKING NEWS

বিজেপি-অগপ জোট : ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে অসম, উভয় দলই ভাঙনের মুখে

assam mapগুয়াহাটি, ০৬ মার্চ, (হি.স.) : বিজেপি-র সঙ্গে নির্বাচনী গাঁটছড়া বাঁধায় রাজ্যের অন্যতম প্রথমসারির আঞ্চলিক দল অসম গণ পরিষদ (অগপ) ফের ভাঙনের মুখে| একইভাবে বিভিন্ন আসনে অগপ-র জন্য ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বিজেপি-র কতিপয় কর্মী দল ছেড়ে তৃণমূল বিজেপি নামে নয়া দল গড়ে সংশ্লিষ্ট আসনে প্রার্থী দেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন| এদিকে দুটি দলের প্রদেশ ও কেন্দ্রীয় সভাপতি যথাক্রমে সর্বানন্দ সনোয়াল এবং অতুল বরা রাজ্য থেকে কংগ্রেসকে হটাতে এবং সুপশাসন ফিরিয়ে আনতে আবেগ ও উত্তেজনার বশে কোনও ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্তে না-যেতে দলীয় কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন|
দিল্লিতে বিজেপি-র সঙ্গে চূড়ান্ত মিত্রতা হওয়ার পর অগপ-র বিভিন্ন জেলা ও আঞ্চলিক সমিতির পাশাপাশি দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাও ক্ষুব্ধ| তাঁরা এরজন্য সরাসরি দলের সভাপতি অতুল বরা নেতৃত্বাধীন দলের সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্তের বিপরীতে চলে গিয়েছেন| সে অনুযায়ী আজ অগপ-র ভ্রাতৃ সংগঠন অসম যুব পরিষদ এক সভার ডাক দিয়েছে| ওই সভায় অগপ-র সাধারণ পরিষদের বিরুদ্ধাচরণ করে বিজেপি-র সঙ্গে জোটে যাওয়ার অগ্রণী নেতা দলের সভাপতি অতুল বরা, জ্যেষ্ঠ নেতা তথা প্রাক্তনমন্ত্রী প্রদীপ হাজরিকা, কেশব মহন্ত, ডা. কমলা কলিতা এবং প্রাক্তনমন্ত্রী তথা সাংসদ বীরেন্দ্রপ্রসাদ বৈশ্য-সহ দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতার বহিষ্কারের দাবি ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে| তা না-হলে তাঁরা পৃথক দল গড়ে রাজ্যের ১২৬টি আসনে প্রার্থী দেবেন বলে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর এক সূত্রের খবরে জানা গেছে| উল্লেখ্য, এর আগেও নির্বাচনের প্রাক-মুহূর্তে অগপ ভেঙে নতুন গণ পরিষদ নামে দল গঠিত হয়েছিল| পরবর্তীতে ফের তারা মূল অগপ-র সঙ্গে মিশে যায়| কিন্তু এর পর আবার দলে বিসংবাদ সৃষ্টি হওয়ায় নয়া দল গঠন হয় তৃণমূল গণ পরিষদ| একসময় এই দলও মিশে যায় অগপ-র সঙ্গে| এবার ফের এই দল বিভাজনের দিকে এগোচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে|
এদিকে অগপ-র সঙ্গে জোটের বিরুদ্ধাচরণ হচ্ছে বিজেপিতেও| দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকের মধ্যে প্রতিক্রিয়া-প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে| দলের বেশ কয়েকটি জেলা কমিটি জোট সম্পর্কে পুনর্বিবেচনা না-করলে প্রয়োজনে গণহারে বিজেপি ছাড়া-সহ নয়া তৃণমূল বিজেপি দল গঠনের হুমকি দেওয়া হয়েছে| সে অনুসারে সরুপথার জেলা বিজেপি কর্মীরা গণহারে ইস্তফাও দিয়েছেন বলে জানা গেছে| এদিকে সংখ্যালঘু অধু্যষিত দলগাঁও বিধানসভা আসনে তাদের কোনও ভিত্তি নেই, অথচ এই আসন অগপকে ছেড়ে দেওয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে| বলা হচ্ছে, গত বিধানসভা নির্বাচনে দলগাঁওয়ে অগপ প্রার্থী পেয়েছিলেন মাত্র দু-হাজার ভোট| বিপরীতে বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ২০ হাজারেরও কাছাকাছি| তারপরও কোন কারণে এই আসন অগপকে ছেড়ে দেওয়া হল বলে প্রশ্ন তুলেছেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতারা| তাঁরা বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার গঠন হওয়ার পর দলগাঁওয়ে আরও মজবুত স্থিতি হয়েছে দলের| দিল্লিতে মোদির সরকার গঠিত হওয়ার পর স্থানীয় পুরনির্বাচনে বিপুল সংখ্যায় আসনে জয়ী হয়ে খারুপেটিয়া নগর সমিতি গঠন করে বিজেপি| এলাকায় অসংখ্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন| তিনদিন আগে ওখানে আয়োজিত পদযাত্রায় কয়েক হাজার বিজেপি সমর্থক পা মিলিয়েছিলেন| বহু সংখ্যালঘু জনতা বলছেন, এই আসন গণভিত্তিহীন অগপকে ছেড়ে দিয়ে বিজেপি নেতারা তাঁদের আবেগে কুড়োল মেড়েছেন|
একই পরিস্থিতি বঙাইগাঁওয়েও| এই আসন অগপকে ছেড়ে দেওয়ায় সারা অসম ছাত্র সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি, নব্য-বিজেপি শংকরপ্রসাদ রায় বেজায় অসন্তুষ্ট| তিনিও বিকল্প সন্ধানের চেষ্টায়| তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে স্থিতি খুব শিগগির স্পষ্ট করবেন বলে বলে জানিয়েছেন শংকর|
কেবল তা-ই নয়, অগপ-বিজেপি জোট গড়ায় উভয় দলের তৃণমূল কর্মীরা নিজের নিজের দলীয় কার্যালয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছেন| চলছে ভাঙচুর| এরই মধ্যে অগপ-র আমবাড়ির সদর দফতর এবং বিজেপি-র হেঙেরাবাড়িতে প্রদেশ সদর দফতরে বিভিন্ন জেলা থেকে দলীয় কর্মীরা এসে তাঁদের ক্ষোভ প্রদর্শন করছেন| এই বিক্ষোভ-ক্ষোভ কমছেন না, বাড়ছে| এ-ধরনের ক্ষোভের আগুন নেভাতে দুই দলের নেতৃবর্গের কালোঘাম ছুটছে|

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *