পুণে, ২৫ ফেব্রুয়ারি (হি.স.): টানা ৪২ মাস কারাবাসের পর অবশেষে জেল থেকে মুক্তি পেলেন বলিউড অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত| বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা ৩৮ মিনিট নাগাদ পুণের ইয়েরওয়াড়া জেল থেকে বেরিয়ে আসেন মুন্নাভাই| কঁাধে ঝোলানো ব্যাগ, বঁা হাতে বুকের কাছে ধরা পাইল| পুণের ইয়েরওয়াড়া জেলের বাইরে এসে জেলের দিকে ঘুরে মাটিতে হাত ছুঁয়ে প্রণাম করলেন| তার পরে স্যালুট| জেলের বাইরে সঞ্জুবাবাকে স্বাগত জানান প্রচুর ভক্তরা| উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী মান্যতা দত্ত ও পরিচালক রাজকুমার হিরানিও| জেল থেকে সোজা পুণে বিমানবন্দরে চলে যান সঞ্জয় দত্ত| সেখান থেকে চার্টার্ড বিমানে মুম্বই উড়ে যান তিনি| এদিন ভক্তদের উদ্দেশে সঞ্জুবাবার প্রতিক্রিয়া ছিল, `ফ্যানেদের জন্যই আজ আমি এখানে|’
১৯৯৩ সালের ১২ মার্চ পরপর ১৩টি বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে বাণিজ্যনগরী মুম্বই| এর পরই বেআইনিভাবে নাইন এমএম পিস্তল ও একে-ফিফটি সিক্স রাইফেল রাখার অপরাধে টাডা আইনে গ্রেফতার হন সঞ্জয় দত্ত| ২০০৬ সালে সঞ্জয় দত্তকে ৬ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় টাডা আদালত| ২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জামিনে মুক্তি পান| ২০১৩ সালে সঞ্জয় দত্তর কারাদণ্ডের মেয়াদ ৬ বছর থেকে কমিয়ে ৫ বছর করে সুপ্রিম কোর্ট| ওই বছরেরই ১০ মে সাজা পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে সঞ্জয় দত্তকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত| ২০১৩-র ১৬ মে টাডা কোর্টে আত্মসমর্পণ করেন সঞ্জয় দত্ত| শেষ পর্যন্ত সংশোধনাগারে ভাল আচরণের জন্য সঞ্জয়কে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় মহারাষ্ট্র সরকার|
তবে সঞ্জয় দত্তর মুক্তি নিয়েও বিক্ষোভ এবং বিতর্ক শুরু হয়েছে দেশের নানা মহলে| তাঁর বার বার প্যারোলে মুক্তি পাওয়া নিয়ে এর আগেই সরব হয়েছিলেন দেশের একাধিক বুদ্ধিজীবী মানুষ| কারণ, ২০১৩-র মে থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ১১৮ দিন তিনি প্যারোলে জেলের বাইরেই কাটিয়েছেন| এদিন সঞ্জয়ের ছাড়া পাওয়ার প্রতিবাদে জেলের বাইরে বিক্ষোভ দেখান কিছু মানুষ| মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সঞ্জয়ের মুক্তির বিরুদ্ধে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন| তবে অল্প সময়ের মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ|
কারাদণ্ড হওয়ার পর প্রথমে মুম্বইয়ের আর্থার রোড জেলে থাকাকালে কয়েদিদের পোষাক পরতে চাইতেন না সঞ্জয় দত্ত| একথা জানালেন ডেপুটি ইনসপেক্টর জেনারেল (কারা) স্বাতী শাঠে| সাজাপ্রাপ্ত মুন্নাভাইয়ের প্রথম দিকের জেল জীবনে কেমন আচরণ ছিল তা জানিয়ে শাঠে বলেছেন, আর্থার রোড জেলে থাকাকালে উনি জেলের কয়েদিদের নির্ধারিত পোশাক পরতে অনিচ্ছুক ছিলেন| কিন্তু কড়া কথায় বোঝানোর পর তিনি রাজি হন|
প্রসঙ্গত, পুনের জেলে পাঠানোর আগে সঞ্জয়কে রাখা হয়েছিল আর্থার রোড জেলে| পুনের জেলেই পাঁচ বছরের কারাবাসের বেশিরভাগ সময় ছিলেন সঞ্জয়| ইয়েরওয়াড়া জেলে তাঁর দৈনিক রুটিন কী ছিল? শাঠে বলেছেন, সব বন্দিদের জন্য যা নিয়ম তাই মানতেন তিনি| ভোর সাড়ে ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে সকালের প্রার্থনা, শরীর চর্চা, চা পান, প্রাতঃরাশ, তারপর ছিল সারাদিনের কাজকর্ম| তবে অন্য বন্দিরা যেমন ওয়ার্কশেডে গিয়ে যাঁর যাঁর নির্দিষ্ট কাজ করতেন, সঞ্জয় নিরাপত্তাজনিত কারণে নিজের সেলে বসেই বেতের জিনিসপত্র, কাগজের ঠোঙা বানাতেন|
পাশাপাশি সহবন্দিদের বিনোদনেও সময় দিতেন তিনি| এত বড় পর্দার নায়ককে এত কাছে পেয়ে বাকিরা ছাড়বেন কেন? তাদের আবদার মেটাতে ইনার সার্কিট ওয়াইসিপি রেডিওর জন্য তাঁকে রেডিও জকি-র দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে| ইয়েরওয়াড়ায় ৪২ মাস ছিলেন তিনি| পুনের ইয়েড়ওয়াড়া জেলে ভাল ছেলে হয়েছিলেন| সেজন্য পুরস্কারও পেয়েছেন| মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার অনেক আগেই জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সঞ্জয় দত্তকে| কিন্তু
৫৬ বছর বয়সি এই অভিনেতা গ্রেফতার হওয়ার সময় ১৮ মাস জেল খেটে ফেলেছিলেন| ২০১৩-র মে মাসে তিনি ৫ বছরের কারাবাসের বাকি মেয়াদ খাটার জন্য আত্মসমর্পণ করেন| বৃহস্পতিবার কারাবাসের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১০৩ দিন আগে ছাড়া পেলেন সঞ্জয় দত্ত|