নিজের মাতৃভাষাকে ভালবাসতে হবে, অন্যের মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে ঃ মেয়র

Mayorনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ ফেব্রুয়ারি৷৷ অমর একুশ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মর্যাদার সাথেই আজ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজ্যজুড়ে উদযাপিত হয়েছে৷ বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে রাজ্য ভিত্তিক এই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ২নং প্রেক্ষাগৃহে৷
ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়৷ উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র ড প্রফুল্লজিৎ সিনহা৷ উদ্বোধনী সংগীতে বেলাবর সুকলের ছাত্রীদের পরিবেশনা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলতে পারি’ এই মহতি সংগীত হলভর্তি বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা, অভিভাবকদের মধ্যে মাতৃভাষার প্রতি গভীর অনুরাগই জানান দিয়েছে৷ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বক্তাদের ভাষণে উচ্চারিত হয়েছে ‘ককবরককে সংবিধানের অষ্টম তপশিলে অন্তর্ভুক্তি করা হোক৷ উদ্বোধকের ভাষণে মেয়র ড প্রফুল্লজিৎ সিনহা বলেন, ২০০০ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের অনেক আগে থেকেই আমাদের রাজ্যে মাতৃভাষা দিবস পালন করা হত সকল ভাষাভাষীর মানুষ ও তাদের ভাষাকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য৷ তিনি বলেন, একটি ভাষাকে কেন্দ্র করে একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে৷
যার ভাষা বাংলা ভাষা৷ উপমহাদেশে নিজের মায়ের ভাষাকে ভালোবেসে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের শ্রদ্ধা জানাতে এই দিনটি উদযাপন করা হয়৷ তিনি আরো বলেন, নিজের মাতৃভাষা যদি না জানা থাকে তবে নিজস্ব সংসৃকতি চর্চা ও করা যাবে না৷ তাই রাজ্য সরকার সংখ্যালঘু জাতি গোষ্ঠীর ভাষার চর্চা ও বিকাশের জন্য একটি পৃথক অধিকারও তৈরি করেছে৷ নিজের মাতৃভাষাকে ভালবাসার সাথে সাথে অন্যের মাতৃভাষার প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হতে তিনি আহ্বান জানান৷
তবেই বিশ্বমানের মানুষ হওয়া যায় বলে মেয়র সিনহা অভিমত ব্যক্ত করেন৷
অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার মহম্মদ মরুিজ্জমান পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মাতৃভাষা রক্ষায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণ করেন৷ তিনি পূর্ব পাকিস্তানে উর্দু ভাষাকে চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে সেখানকার ছাত্র সমাজ সহ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের গৌরবোজ্জ্বল আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরেন৷পর্যায়ক্রমে কিভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন হয় তা নিয়ে বক্তব্য রাখেন৷ মহম্মদ মনিরুজ্জমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে ভারত ও এ রাজ্যের মানুষের সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণের জন্য ধন্যবাদ জানান৷ ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক মিহির দেব বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের প্রেক্ষিত সুদূর বিস্তৃত৷ পৃথিবীর অনেক ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে৷ তাকে রক্ষা করতে আমাদের এই দিবসেই আবারও নতুন করে শপথ নিতে হবে৷ রাজ্য শিক্ষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ পর্ষদের অধিকর্তা রতিশ মজুমদার বলেন, ত্রিপুরায় ককবরক ও অন্যান্য ভাষাভাষীর মানুষ হাতে হাত ধরে ঐক্যবদ্ধভাবে সাহিত্য রচনা করছেন৷ তিনি কবি মন্ত্রী অনিল সরকারকে স্মরণ করে বলেন, তাঁর উদ্যোগেই রাজ্যে অনেক আগে থেকেই মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে৷ অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব এস কে রাকেশ, বুনিয়াদি শিক্ষা অধিকর্তা উত্তম কুমার চাকমা৷ সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা ডা পি কে গোয়েল৷ স্বাগত ভাষণ দেন দপ্তরের যুগ্ম সচিব নির্মল অধিকারী৷ এদিন অনুষ্ঠানের অতিথিগণ রাজ্য ভিত্তিক আকস্মিক বত্তৃণতা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরসৃকত করেন৷ দ্বিতীয় পর্যায়ে আয়োজিত হয় বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মনোজ্ঞ সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *