জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী নেতাদের সিপিএমের সাথে জোট না করার পরামর্শ সমীর বর্মনের

Samir Ranjan Barmanনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ ফেব্রুয়ারী৷৷ সংকীর্ণ রাজনীতির উর্দ্ধে গিয়ে সিপিএমের সাথে জোট না করার জন্য বঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বদের নীতি-আদর্শ বিসর্জন না দেওয়ার বার্তা দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রদেশ কংগ্রেস এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য সমীর রঞ্জন বর্মন৷ জোটের প্রশ্ণে নীতিগত ভাবে সিপিএমের সাথে সমঝোতা করা কোন মতেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ তাই তিনি কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি দিয়ে সিপিএমের সাথে জোটে সম্মত না হতে আবেদন জানাবেন বলে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন৷ পাশাপাশি সিপিএমকে অতীতের ঘটনাপ্রবাহ প্রসঙ্গে তাদের বিশ্বাসঘাতক এবং সুবিধাবাদী বলে কটাক্ষ করেন তিনি৷ কমিউনিস্টরা ভারতের স্বাধীনতাও মেনে নেননি বলে তিনি তীব্র সমালোচনা করেন৷
সাংবাদিক সম্মেলনে সমীর রঞ্জন বর্মন আরও জানান, সিপিএমের সাথে জোটের প্রশ্ণে দলের সভানেত্রী যাতে সম্মত না হন তার জন্য তিনি চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ জানাবেন৷ পাশাপাশি বঙ্গের কংগ্রেস নেতৃত্বদের উদ্দেশ্যে বলেন, জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী নেতা কর্মীদের সিপিএমের সাথে জোট করার কথা ভাবাই উচিত না৷ চৌত্রিশ বছর যারা সিপিএমের অত্যাচার, অবিচার, হত্যা, বঞ্চনা, অপমান সহ্য করেও জাতীয়তাবাদী আদর্শ আগলে রেখেছেন তারা যেন তথাকথিত কয়েকজন দিগ্ভ্রান্ত নেতার কথায় সিপিএম দলকে কোন অবস্থায় সমর্থন না করেন বলে তিনি আহ্বান জানান৷
এদিকে কমিউনিস্টদের দেশদ্রোহী কটাক্ষ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর কমিউনিস্টরা ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়’ বলে আওয়াজ তুলেছিল৷ শুধু তাই নয় কমিউনিস্টরা চীনের পক্ষেও আওয়াজ তুলেছিল৷ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকেও গালাগাল করত৷ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও বুর্জোয়া কবি বলত৷ তিনি বলেন, চীন অন্যায় ভাবে ভারতে চল্লিশ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা দখল করে রেখেছে৷ অরুণচাল প্রদেশকে চীন তাদের অংশ বলে দাবী করে ও প্রায়শই অনুপ্রবেশ ঘটায়৷ কিন্তু, এই বিষয়ে কমিউনিস্টদের কখনও সুর চড়াতে দেখা যায়না৷ তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেসের আন্দোলন নীতির বরাবর বিরোধী ছিল কমিউনিস্টরা৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বামপন্থীরা নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করল মহাত্মা গান্ধী, নেহরুর লড়াই- আত্মত্যাগকে কটাক্ষ করে৷ বিকল্প মত, বিকল্প পথের নামে চরম সুবিধাবাদী রাজনীতি নির্ভর হয়ে সংসদীয় রাজনীতিতে এদের পা রাখার ইতিহাস মানুষ ভুলে যায়নি৷ শ্রী বর্মনের দাবি স্বাধীন ভারতে যখনই সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ঘনিয়ে এসেছে তখনই কংগ্রেস দল বুক চেতিয়ে মোকাবিলা করেছে৷ কংগ্রেসের হাজার হাজার সমর্থক যখন উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সারা দেশে লড়াই করছে, তখন সিপিএম লড়াই করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে৷ তাঁর বক্তব্য সারা দেশে কমিউনিস্টদের কোন প্রকার অস্তিত্ব নাই৷ বিকল্প অর্থনীতির কথা বলে মিথ্যাচার, কুৎসা, বিশ্বাসঘাতকতা, হত্যা, গণহত্যা করে মুখ লুকিয়ে আছে ত্রিপুরাতে৷ ১৯৮০ সালে ত্রিপুরায় ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গার পিছনে সিপিএমকেই দায়ি করেন তিনি৷
শ্রী বর্মন আরও বলেন, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধেও কুৎসা রটিয়েছে কমিউনিস্টরা৷ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীদের সাথে কংগ্রেসের সমঝোতা রয়েছে বলে তারা অভিযোগ করত৷ ২০০৮ সালে পরমাণু চুক্তির বিরোধীতা করতে গিয়ে তাদের অভিযোগ ছিল ঐ চুক্তির মাধ্যমে কংগ্রেস ভারতকে আমেরিকার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে৷ তবে, এখন অবশ্য এই অভিযোগ তাদের ঐতিহাসিক ভুল বলে কমিউনিস্টরা মেনে নিয়েছেন৷ এই প্রসঙ্গে বঙ্গের কংগ্রেস নেতৃত্বদের কটাক্ষ করে শ্রী বর্মন বলেন, কয়েকজন জনভিত্তিহীন নেতা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় কমিউনিস্টদের সাথে জোট করার জন্য দিল্লী গিয়ে দরবার করছেন৷ ঐসব জোটপন্থী নেতারা একবারের জন্যও সিপিএম দলকে বলছেন না তারা যেন সালকিয়া প্লেনামের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে৷ ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী সম্পর্কে মিথ্য ও কুৎসা রটানোর জন্য বামপন্থীদের ভুল স্বীকার করে দুঃখ করার জন্য বলতে বঙ্গের কংগ্রেস নেতৃত্বদের তাগিদ নজরে আসছে না৷ তিনি কটাক্ষ করে বলেন, ঐসব কংগ্রেসী নেতাদের আদর্শ বিচ্যুতি ঘটেছে৷ তাই তিনি তাদের জাতীয়তাবাদী আদর্শ আগলে রাখার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *