BRAKING NEWS

ঋণ দিয়ে কোটি কোটি টাকা গচ্ছা, রাজনৈতিক স্বার্থে রাজ্য সরকার পথ প্রশস্ত করেছে ঃ রতন নাথ

Ratan Lal Nathনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ ফেব্রুয়ারী৷৷ কোটি কোটি টাকা ঋণ দিয়ে গচ্ছা গেছে৷ আর একারণেই রাজ্যে সিডি রেশিও তলানিতে৷ সোমবার এই অভিযোগ করেন বিধায়ক রতন লাল নাথ৷ এক সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রী নাথ তথ্য তুলে ধরে জানান পিএমইজিপি প্রকল্পে ৫০ কোটি ২২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা এবং স্বাবলম্বন প্রকল্পে ৩০ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ঋণ বাবদ গচ্ছা গেছে৷ এই টাকা ঋণ গ্রহিতাদের কাছ থেকে আদায় করা সম্ভব নয়৷ তবে, রাজ্য সরকার উদ্দেশ্যমূলক ভাবে আইন করে ঋণের অর্থ গচ্ছা যাওয়ার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছে বলে এদিন তিনি অভিযোগ করেছেন৷
তিনি জানান, ২০০০ সালে আইন করে ঋণের অর্থ আদায়ের সমস্ত দায়িত্ব আদালতের বদলে নিজেদের দখলে নেয় রাজ্য সরকার৷ ফলে ঋণ গ্রহিতাদের এক বিরাট অংশ আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ এই বিষয়ে রতন লাল নাথের ব্যাখ্যা, ঋণ গ্রহিতারা মারা গেলে কিংবা তাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে জমি-সম্পত্তি ক্রোক না করা গেলে ঋণের টাকা ফেরত পাওয়া অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে৷ তিনি জানান, আইন মোতাবেক কোন ব্যাক্তি ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে না পারলে যদি ঐ ব্যাক্তি জায়গা-সম্পত্তি কিছু না থাকে তাহলে কোন কিছুই সরকার ক্রোক করতে পারবে না৷ ফলে ঐ ঋণ গ্রহিতার ঋণের টাকা ফেরত পাওয়ার আর কোন সম্ভাবনাই থাকছে না৷
শ্রী নাথের অভিযোগ, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের গঠিত কমিটি দলবাজী করছে৷ যদি কোন ব্যাক্তির ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা না থাকে সেক্ষেত্রে বিষয়টি কমিটির নজরে আসা উচিত৷ অথচ দেখা গিয়েছে রাজনীতি করার লক্ষ্যে কমিটির হাত দিয়ে এমন অনেক ব্যাক্তিকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে যারা পরবর্তী সময়ে পরিশোধ করছেন না৷ আইন মোতাবেক, ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে আইনী ব্যাবস্থা গ্রহণ করা যাবে৷ কিন্তু, পিএমইজিপি প্রকল্পে ৬ হাজার ২৪২ জন এবং স্বাবলম্বন প্রকল্পে ১ হাজার ৩৬৯ জন ঋণ পরিশোধ না করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনী ব্যবস্থা আজ অবদি রাজ্য সরকার গ্রহণ করেনি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রতনবাবু৷ এক তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত ২,৫১৩টি মামলা মহকুমা মেজিস্ট্রেটের কাছে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে৷ পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে এমন মামলার সংখ্যা ১,০৯১টি৷ এছাড়াও আইন প্রণয়নের পরবর্তী ২০০০, ২০০১, ২০০২ এবং ২০০৩ সালের মামলাগুলিও এখনও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে৷ শ্রী নাথ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মহকুমা শাসকের দরবারে মামলাগুলি ঝুলে থাকলেও নিষ্পত্তির বিষয়ে চরম উদাসীন রাজ্য সরকার৷ তিনি বলেন, ঋণ প্রদানে এবং আইন প্রণয়ন করে ঋণ আদায়ের বিষয়ে রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ উদাসীন মনোভাব পোষণ করছে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার লক্ষ্যে৷
এদিন তিনি ঋণ প্রদানে দলবাজী হচ্ছে এর সপক্ষে তথ্য তুলে ধরে জানান, পিএমইজিপি প্রকল্পে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১,৫০০ জনকে ঋণ প্রদানের৷ অথচ দেখা গিয়েছে কমিটি সুপারিশ করেছে ৪,২৭২জনকে এবং ঋণ দেওয়া হয়েছে ১,৪৭৭জনকে৷ একই ভাবে এই প্রকল্পে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১,৫০০ জনকে ঋণ প্রদানের৷ কিন্তু কমিটি সুপারিশ করেছে ৪,৪৭৪ জনকে এবং ঋণ দেওয়া হয়েছে ১,৩৫৮ জনকে৷ ফলে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২,৭৯৯ জন এবং ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৩,১১৬ জন যারা ঋণ পাননি তারা রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার বলে শ্রী নাথ অভিযোগ করেন৷ স্বাবলম্বন প্রকল্প নিয়ে তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২,৫০০ জনকে ঋণ প্রদান করার৷ কমিটি সুপারিশ করেছে ৪,৬৮১ জনকে এবং ঋণ প্রদান করা হয়েছে ২,০৩৮ জনকে৷ একই ভাবে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে এই প্রকল্পে ঋণ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩,০০০ জন৷ কমিটি সুপারিশ করেছে ৫,২৩২ জনকে এবং ঋণ প্রদান করা হয়েছে ২,২২৩ জনকে৷ স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রকল্পে যারা ঋণ পাননি তারাও রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন রতন লাল নাথ৷
এদিন তিনি বলেন, রাজ্যের প্রকৃত বেকারদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে দলবাজী না করা হলে এবং ঋণ গ্রহিতাদের কাছ থেকে ঋণের টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা নিলে সিডি রেশিও স্বাভাবিক ভাবেই বৃদ্ধি পেতে সহায়ক হবে৷ রাজ্যের ব্যাঙ্কগুলি ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অনিহার পেছনে রাজ্য সরকারের ভূমিকাই দায়ি বলে শ্রী নাথ মন্তব্য করেন৷ ঋণ গ্রহিতাদের কাছ থেকে ঋণের টাকা আদায় করা সম্ভব হলে ব্যাঙ্কগুলি সর্বসাধারণকে ঋণ প্রদানে উৎসাহী হবে৷ ঋণের টাকা আদায়ের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে রাজ্য সরকারকেই নিতে হবে বলে তিনি দাবি জানান৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *