আবার জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত ত্রিপুরা৷ রেগায় সেরার সেরা৷ গত দোসরা ফেব্রুয়ারী দিল্লীতে অনুষ্ঠিত রেগা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সর্বভারতীয় সম্মেলনে ত্রিপুরাকে ভারত সরকার এই সম্মান প্রদান করে৷ এমজিএন রেগায় গোটা দেশে সেরার সেরা শিরোপা পাওয়ায় বিরোধী দলগুলির জেহাদি হুঙ্কার কিছুটা হইলে স্তিমিত হইতে পারে৷ দিল্লীতে রেগা দিবসের সর্বভারতীয় সম্মেলনে রেগার সাফল্য হিসাবে চারটি পুরস্কার পায় ত্রিপুরা৷ ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষের কাজের নিরিখে এই পুরস্কার পায় ত্রিপুরা৷ ২০১৫-১৬ অর্থবছরেও রেগায় ৮৬ শ্রমদিবসের কাজ করাইয়া প্রথম স্থানে রহিয়াছে ত্রিপুরা৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় মহাকরণে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিপুরার সাফল্যের বিস্তৃত তথ্য তুলিয়া ধরেন গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব ডঃ জি এস জি আয়েঙ্গার৷
রেগার এই সাফল্যের চাবিকাঠি কি তাহা নিশ্চয়ই কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক নিশ্চয়ই খতাইয়া দেখিবেন৷ কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমলেও ত্রিপুরা রেগায় সাফল্যের পুরস্কার লাভ করে৷ বিজেপি সরকারের আমলেও ত্রিপুরার সাফল্যকে খাটো করিয়া দেখিবার কোনও সুযোগ নাই৷ বিরোধী কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ কেন্দ্রের সরকার কাগজেপত্রের হিসাব দেখিয়াই পুরস্কার তুলিয়া দেন৷ বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্নতর৷ তাহা তদন্ত করিয়া দেখা হয় না৷ যন্ত্রের মাধ্যমে কাজ করিয়া কৃতিত্ব নেওয়া হয়৷ বিরোধীদের এই অভিযোগ সম্পর্কে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার কী জবাব দিবেন তাহা বলা মুশকিল৷ কিন্তু, এ সম্পর্কে তথ্য সহ সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রকে অভিযোগ না জানাইয়া বিবৃতি যুদ্ধে রাজনীতি করা যায়৷ তর্কের খাতিরে ধরিয়াই নেওয়া গেল কাগজে পত্রে সাফল্যের চিত্র আছে বাস্তবে ভিন্ন চিত্র৷ অভিযোগকারীকে তাহা প্রমাণ করিতে হইবে৷ হিসাব তথ্য তো কাগজে পত্রেই দিতে হয়৷ ইহাই পদ্ধতি৷ যদি কেন্দ্রীয় সরকার অন্য পদ্ধতি চালু করে, বা কি পদ্ধতি চালু করা সরাসরি তথ্য যুক্তি সহ পেশ করা যাইতে পারে৷ রেগায় পুকুর চুরির বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তো অনেক কড়াকড়িও করা হইয়াছে৷ ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা বিলি ইত্যাদি ব্যবস্থা তো চালু হইয়াছে৷ জানা গিয়াছে সরাসরি দিল্লী হইতে বেনিফিসিয়ারীদের ব্যাংকে টাকা দেওয়ার উদ্যোগ চলিতেছে৷ একথা ঠিক, রেগায় কারচুপি রুখিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হইয়াছে এবং বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে পর্য্যবেক্ষণ চলিতেছে৷ সমাজের দরিদ্র অংশের মানুষের কল্যাণে এই রেগা প্রকল্প চালু হইয়াছে৷ কেন্দ্রে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠার পর রেগা প্রকল্প বন্ধ হইয়া যাইবে এমন আশংকা দেখা দিয়ািিছল৷ কিন্তু না, রেগা বন্ধ হয় নাই, তবে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা কড়াকড়ি চালু হইযাছে৷ একথা ঠিক, অতীতে রেগা নিয়া অনেক কেলেংকারীর অভিযোগ ত্রিপুরাতেও ছিল না এমন নহে৷ দলবাজীর অভিযোগ তো আছেই৷ সমাজের দারিদ্র দূরিকরণে বা গরীব অংশের মানুষকে সহায়তা দেবার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকল্প চালু হয়৷ ষাটের দশকে কেন্দ্রীয় সরকার চালু করিয়াছিল কাজের বদলে খাদ্য প্রকল্প৷ তখন দেশে খাদ্য সংকট ছিল৷ বিদেশ হইতে খাদ্য আমদানি করিয়া সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা হইত৷ মনুষ্য খাদ্যের অনুপযোগী চাল আসিত আমেরিকা হইতে৷ সেই দূর্যোগ অতিক্রম করিয়া ভারত এখন খাদ্যে স্বয়ম্ভর৷ খাদ্যের মজুত এত বেশী যে এক সময় বিশাল পরিমান খাদ্য শস্য সমুদ্রে ফেলিবার চিন্তাভাবনা করিতে হইয়াছিল৷ সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের সহায়তায় রেগা প্রকল্প আরও বেশী কার্যকরী ভূমিকা নেওয়ার উদ্যোগের তাগিদ বাড়িয়াছে৷ সারা দেশে যে নজীর সৃষ্টি হইয়াছে, তাহা অক্ষুন্ন রাখার মধ্য দিয়া ত্রিপুরার সাফল্য প্রেরণা দিতে পারে৷ সে বিষয়ে বোধহয় সন্দেহ নাই৷