নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ জানুয়ারি৷৷ সাজার হার নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগ উঠল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে৷ সোমবার বিধানসভা অধিবেশনে বিধায়ক রতনলাল নাথ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এবং আইনমন্ত্রী তপন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে তথ্যের গরমিলের অভিযোগ তুলেন৷ এনিয়ে বিধানসভা অধিবেশন উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ত্রাতার ভূমিকা নেন অধ্যক্ষ রমেন্দ্রচন্দ্র দেবনাথ৷ তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিরোধী দল কংগ্রেস অধিবেশন বয়কট করে বেরিয়ে যান৷
এদিন, আইপিসি ধারায় যে সমস্ত মামলা নথিভুক্ত হয় সেগুলির সাজার হার নিয়ে প্রশ্ণোত্তরে আইনমন্ত্রী জানান রাজ্যে ২০১৩ সালে ১০.৮৯ শতাংশ, ২০১৪ সালে ১৪ শতাংশ এবং ২০১৫ সালের সেপ্ঢেম্বর পর্যন্ত ১৬ শতাংশ সাজা হয়েছে৷ কিন্তু অতিরিক্ত প্রশ্ণে কংগ্রেস বিধায়ক রতনলাল নাথ দাবি করেন, আইনমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যের সাথে আগে অধিবেশনে তথ্যের গরমিল রয়েছে৷ তিনি ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫তে বিধানসভা অধিবেশনে প্রশ্ণের উত্তর তুলে ধরে জানান, ঐ সময় মুখ্যমন্ত্রী ২০১৪ সালে রাজ্যে সাজার হার ২০.৬ শতাংশ জানিয়েছিলেন৷ [vsw id=”qw45RbNepRw” source=”youtube” width=”325″ height=”244″ autoplay=”yes”]আবার একই অধিবেশনে আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন সাজার হার ১০ শতাংশ৷ একই বিষয়ে পৃথক পৃথক তথ্য বিধানসভায় উত্থাপন করা নিয়ে বিরোধী দলের রোষানলে পড়ে সরকার পক্ষ৷ এদিন, সভায় কংগ্রেসের রতনলাল নাথ উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি সাজার হারে ত্রিপুরার থেকে এগিয়ে রয়েছে বলে দাবি করেন৷ তিনি জানান, এনসিআরবি’র (ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো) সাম্প্রতিক রিপোর্টে প্রকাশিত মিজোরামে ৮৯ শতাংশ, নাগাল্যান্ডে ৮৫ শতাংশ, মণিপুরে ৭০ শতাংশ, মেঘালয়ে ৪৩ শতাংশ, সিকিমে ৩৮ শতাংশ এবং আসামে ১১ শতাংশ সাজার হার৷ অন্যদিকে জাতীয় গড় ৪১ শতাংশ৷ তাতে পূর্বোত্তরে এবিষয়ে আসাম ছাড়া বাকি সবকটি রাজ্যই সাজার হার ত্রিপুরার চাইতে অনেক বেশি৷ এবিষয়ে শ্রীনাথের যুক্তি, রাজনৈতিক রং বিচার করে পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ করার কারণেই এ রাজ্যে সাজার হার অত্যন্ত নগণ্য৷ তিনি দাবি করেন, পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ করার ক্ষেত্রে নূ্যনতম দশ বছরের অভিজ্ঞাতসম্পন্ন আইনজীবী প্রয়োজন৷ কিন্তু রাজ্য সরকার এই নিয়ম মানছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন৷ সাজার হার এবং পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ করা নিয়ে শ্রীনাথ ক্রমাগত রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করা শুরু করলে এবিষয়ে বক্তব্য রাখবেন বলে অধ্যক্ষকে অনুরোধ জানান বিরোধী দলনেতা সুদীপ রায় বর্মণ৷ কিন্তু অধ্যক্ষ বিরোধী দলনেতার আর্জি খারিজ করে দিয়ে পরবর্তী প্রশ্ণ করার জন্য বলেন৷ তাতে বিরোধী দলের সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন এবং বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য রাখার আর্জি জানাতে থাকেন৷ কিন্তু অধ্যক্ষ বিরোধী দলের দাবি খারিজ করে দিয়ে পরবর্তী কার্যসূচী চালানোর জন্য বলেন৷ তাতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে বিরোধী দলের সদস্যরা সভা বয়কট করে বেরিয়ে যান৷
তবে, সাজার হার বৃদ্ধির জন্য রাজ্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে বিধানসভায় প্রশ্ণের উত্তরে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী তপন চক্রবর্তী৷ তিনি জানান, সাজার হার বৃদ্ধির জন্য পিপি এবং এপিপিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা এবং তাদের জন্য রাজ্য ও বর্হিরাজ্যের আইনবিশেষজ্ঞ দ্বারা নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এছাড়া তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদেরও নিয়মিত চাকুরিকালীন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এরই পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রদপ্তর, আইনদপ্তর ও পুলিশের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে আইনসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে৷এই কমিটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সাজার হার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে বিচার বিশ্লেষণ করে থাকেন বলে আইনমন্ত্রী সভায় জানিয়েছেন৷
এদিন বিধানসভার বাইরে বিধায়ক রতন লাল নাথ ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট নিয়েও সওয়াল করেন৷ তিনি বলেন, ১লা অক্টোবর ২০১৩ সালে রাজ্যে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠিত হলেও সেখানেও সাজার হার অত্যন্ত নগন্য৷ গত তিন বছরে ৮৮টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে৷ তাতে সাতটি মামলায় সাজা ঘোষণা হয়েছে এবং ৮১টি মামলায় অভিযুক্তরা খালাস হয়েছেন৷ এখানেও সরকারী কৌসুলীদের ব্যর্থতার কারনেই সাজার হার অত্যন্ত কম হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ বলে দায়ী করেছেন শ্রী নাথ৷ তিনি এও বলেন, এভাবে চলতে থাকলে রাজ্যে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠন করার উদ্দেশ্য যথাযথভাবে সফল হবে না৷
2016-01-12