আগরতলা, ৮ জুলাই : ত্রিপুরার আইনের শাসন বর্তমানে প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির উপর ধারাবাহিক হামলা ও পুলিশ প্রশাসনের নীরবতা বা মদতদাতা ভূমিকায় থাকা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিপিআই(এম)। তাই বিরোধীদের উপর দমননীতি অবিলম্বে বন্ধ করা এবং পুলিশকে আইন অনুযায়ী কাজ করার দাবি জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডা.) মানিক সাহাকে চিঠি দিয়েছে সিপিআই(এম)।
ওই চিঠিতে সিপিআই(এম)-র নেতৃত্বরা লেখেন, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়ঙ্করভাবে অবনতি ঘটেছে। প্রশাসনের একাংশের পক্ষপাতদুষ্ট ও উদাসীন ভূমিকাই বিরোধীদের দমন করার প্রধান অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের এই নির্লিপ্ত আচরণ শুধু বিরোধী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে রুদ্ধ করছে না, বরং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তাও সংকটাপন্ন করে তুলেছে।তারা আরও উল্লেখ করেছে, ত্রিপুরা পুলিশ ‘প্রেসিডেন্ট কালার’ অর্জনের গৌরব অর্জন করেছিল, আজ তাদেরই একটি অংশ শাসকদলের কথায় চলা ও বিরোধীদের দমনে ব্যবহৃত হচ্ছে — যা গোটা বাহিনীর ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করছে।
সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া কিছু ভয়াবহ ঘটনার উল্লেখ করে বলে, ১৭ জুন, ২০২৫ – বিশালগড়ে প্যালেস্টাইনের প্রতি সংহতির সভায় হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। সিপিআই(এম)-এর বিশালগড় ইউনিট আয়োজিত একটি শান্তিপূর্ণ সভায় বিজেপি যুব মোর্চার দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। পুলিশ, এসডিপিও ও ওসি উপস্থিত থাকলেও, ৫০-৬০ জন অস্ত্রধারী দুষ্কৃতী সভায় ইট-পাটকেল ছুঁড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং পার্টি অফিসে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। প্রায় ২০টি বাইক ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ মধ্যে উপস্থিত থেকেও কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। এফআইআর-এ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হলেও আজও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। তেমনি, একই দিনে করাইমুড়ায় সিপিআইএম নেতা মো. মুশাররফ হোসেনের বাড়িতে হামলা:
বাড়িতে ঢুকে মহিলাদের মারধর, সম্পত্তি ভাঙচুর ও লক্ষাধিক টাকার সামগ্রী লুটপাট করা হয়। এফআইআর দায়ের হলেও পুলিশ এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
তাছাড়া, ২১ জুন, দতারাম বাজারে কংগ্রেস সভায় হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতকারী। সদ্য পুলিশ অনুমোদিত সভায়, কংগ্রেস নেতা ও বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণকে বিজেপি কর্মীরা মারধর করে। পুলিশ উপস্থিত থাকলেও বাধা দেয়নি। ২৪ জুন, টাকারজলা কমিউনিটি হলে জিতেন্দ্র চৌধুরীর সভায় ইট ছোঁড়া হয়েছে। তিপরা মথার সমর্থকরা মুখে কাপড় বেঁধে ইট ছুঁড়ে সভা পণ্ড করে দেয়। পুলিশ কার্যত নিশ্চুপ থাকে। ২৯ জুন, কাকরাবান মোটরস্ট্যান্ডে সিপিআইএম সভা বানচাল করে। বিজেপি দুষ্কৃতীরা সভাস্থল দখল করে নেয়, সিপিআই(এম) -এর অফিসে হামলা চালায়। পুলিশ সাহায্য না করায় সভা স্থগিত করা হয়।
তাছাড়া, ৬ জুলাই বিলোনিয়া বিধায়ক দীপঙ্কর সেনের উপর হামলা চালিয়েছে। এসপি-র বাসভবনের সামনে দুষ্কৃতীরা চলন্ত বাইক থেকে তাঁকে টেনে ফেলে মারধর করে। পাশাপাশি, ৭ জুলাই, কমলপুরে ক্যাম্পেইন স্থগিত:বিজেপি কর্মীদের হুমকিতে ও পুলিশের অসহযোগিতায় সিপিআইএম তাদের কর্মসূচি বাতিল করতে বাধ্য হয়।
এই ধারাবাহিক ঘটনায় প্রমাণিত হয়, রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে এবং প্রশাসনের একাংশের নিস্ক্রিয়তা ও পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব দুষ্কৃতীদের আরও বেপরোয়া করে তুলেছে। বিরোধী রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানো কার্যত অসম্ভব করে তোলা হচ্ছে। তাই আইনভঙনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পুলিশ যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে মুখ্যমন্ত্রীর নিকট চিঠি আবেদন জানিয়েছে।

