কট্টর ইসলামপন্থীরা ছড়াচ্ছে বিদ্বেষ, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে যুব সমাজ;

ঢাকা, ৬ জানুয়ারি (হি.স.): ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল, বিনোদনের প্রায় সমস্ত স্থান বন্ধ হওয়ার পথে। বিনোদন স্থান দখল করে, সেখানে অপপ্রচারের মাধ্যমে কট্টর ইসলামপন্থীরা বাংলাদেশে ছড়াচ্ছে বিদ্বেষ! ইসলাম প্রচারের নামে উস্কানিমূলক মন্তব্য করা হচ্ছে, ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে পাকিস্তানী ভাবধারা প্রচার করা হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের মুসলিম যুব সমাজ ধীরে ধীরে জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে। বহুভাষী সংবাদ সংস্থা হিন্দুস্থান সমাচার-এর সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সামগ্রিক এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্টরা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের কবি, লেখক, সাংবাদিক-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। প্রত্যেকেরই অভিমত, কিছু মৌলানা ইসলাম প্রচারের নামে বাংলাদেশের মুসলিম যুব সমাজের মধ্যে ভারত-বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে।

বাংলাদেশে কমছে সিনেমা হলের সংখ্যাবাড়ছে জঙ্গিবাদউদ্বিগ্ন বিশিষ্টরা  

বাংলাদেশের সিনেমা হল মালিক সমিতির তথ্য মতে, বাংলাদেশের বরিশালের ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল ‘লিপি টকিজ’-কে এখন ‘লিপি কমিউনিটি’ সেন্টার করা হয়েছে। বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশকে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল প্রায় ১,৪৩৫টি। কিন্তু, চলতি বছরে বাংলাদেশে সিনেমা হলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬১টিতে। এ প্রসঙ্গে হিন্দুস্থান সমাচার-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সিনেমা হল মালিক সমিতি-র প্রাক্তন সভাপতি ও প্রযোজক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ জানিয়েছেন, “বাংলাদেশের সিনেমা এখন লাইফ সাপোর্টে আছে। হলিউড-বলিউডের সিনেমা আমদানি করতে না-দিলে এগুলিও বন্ধ হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষের বিনোদনের স্থান দখল করে নিচ্ছে ইসলামের অপব্যাখাকারীরা। যুবসমাজকে আকৃষ্ট করতে ইসলামের প্রচারকরা গান গাইছে, অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নানা কুরুচিকর মন্তব্য করছে। এতে সাধারণ মুসলিমদের অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ বাড়ছে।’

বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক এবং গবেষক লায়েকুজ্জামানের মতে, “আমাদের সংস্কৃতির একটি বড় শুন্যতা তৈরি হয়েছে মূলত ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর থেকে। ধর্মের নামে তৈরি পাকিস্তানের শাসকেরা শুরুতেই ছিল বাঙালির সংস্কৃতি-বিরোধী। তারা এক সময়ে রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করেছিল, নজরুলকে প্রচার করতো খন্ডিত করে। তাই নতুন করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাতিলের দাবি জানানোর সুযোগ পাচ্ছে কট্টর ইসলামপন্থীরা।” তিনি বলেন, ৪৭ সালের পরে বাঙালি সংস্কৃতির বিপরীতে মূলত ইসলামি সংস্কৃতি তারা গড়ে তুলতে চেয়েছিল। এ সময় থেকে ইসলামের নানা পদের অপব্যাখ্যা দেওয়া শুরু হয় এবং এক শ্রেনীর অর্ধ শিক্ষিত-জ্ঞানহীন মৌলবীদের মাঠে নামানো হয় যুব সমাজকে ভ্রান্ত পথে নিয়ে যেতে। 

উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি জানান, বাংলাদেশে সিনেমা হলগুলি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আগে গ্রামে যাত্রা পালা হতো, ইসলামিক অপপ্রচারে তাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিনোদনের জায়গা না পেয়ে যুব সমাজ মাদকাসক্ত হচ্ছে। সিনেমা হলের বদলে তারা অশিক্ষিত ইসলামের অপব্যাখ্যা দেওয়া মৌলানাদের কথা শুনে উগ্রবাদী হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের যুব সমাজ জেহাদের নামে ‘আইএস’ বা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিকর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশের আফগানিস্তান ফেরত জঙ্গিরা আফগান ‘ফেরত মুজাহিদ’ নামে একটি সংগঠন করেছে। যুব সমাজকে বিনোদনমুখী করতে হবে আমাদের। যাতে তাঁরা জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে না পড়ে। তিনি জানান, গোটা মানব সভ্যতাকে জঙ্গিবাদের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাঙালী সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। সিনেমা হলে শুধু ভারত নয়, বিশ্বের সকল দেশের ভালো মানের সিনেমা দেখা ও আগের মতো গ্রামেগঞ্জে যাত্রা পালার সুযোগ করে দিতে হবে।

বাংলাদেশের এই সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহ্মুদ বলেছেন, চলচিত্র শিল্পকে বাঁচানোর জন্য একহাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ‘শিল্পী সমিতির’ বাধার কারণে শুধু হিন্দি ফিল্ম আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে তথ্য মন্ত্রকের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে পরিস্থিরি উন্নতি হবে।