চিকিৎসায় বিলম্বতা করোনাক্রান্তের মৃত্যুর অন্যতম কারণ : মুখ্যমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ সেপ্ঢেম্বর৷৷ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে দেরিতে আনার জন্য করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলে দাবি করেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ আজ ত্রিপুরা বিধানসভায় কোভিড-১৯ সম্পর্কে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে তিনি দাবি করেন, ১৯ সেপ্ঢেম্বর পর্যন্ত মোট কোভিড পজিটিভ রোগীর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৩৯ জনের৷ তার মধ্যে ১৬০ জন রোগী অর্থাৎ মৃতদের ৬৭ শতাংশের অন্যান্য রোগের সমস্যা ছিল৷ ৩৩ শতাংশ ছিলেন ৬০-৭০ বছরের বৃদ্ধ৷ বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, রাজ্যে মোট মৃতের সংখ্যার মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে ভরতির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই৷ এতে বোঝা যাচ্ছে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে দেরিতে আনা হয়েছে৷ রাজ্যের মোট মৃত্যুর নিরিখে মৃত্যর হার হচ্ছে ১.১০ শতাংশ, যেখানে জাতীয় গড় ১.৬২ শতাংশ৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে জানা গেছে, স্বল্প সংখ্যক মানুষ রোগের লক্ষণ আড়াল করে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হাসপাতালে ভরতির ক্ষেত্রে অনীহা দেখিয়েছেন৷ পরিস্থিতির বিবেচনা করে রাজ্য সরকার রোগীদের হোম আইসোলেশন বা বাড়িতে নিভৃতবাসে থাকার অনুমোদন দিয়েছে৷ ১৮ সেপ্ঢেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে হোম আইসোলেশনে রোগীর সংখ্যা ৫,৪৫৬৷ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে হোম আইসোলেশনে থাকা আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিদের ১,৫০০ টাকা করে সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তাঁর দাবি, সঠিকভাবে তাঁদের পর্যবেক্ষণ করার জন্য মেডিক্যাল টিম, প্রতিটি রোগীর জন্য রেজিস্টার নিবন্ধন করেছেন৷ এই রোগীদের ওষুধ ও পালস অক্সিমিটার দেওয়া হয়েছে৷ সাধারণ মানুষকে তথ্য সরবরাহ করার জন্য রাজ্য সরকার জেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষিত কর্মচারীদের নিয়ে জেলাভিত্তিক কল সেন্টার স্থাপন করেছে৷

তিনি জানান, সম্প্রতি ত্রিপুরায় কোভিড-১৯ জনিত প্রস্তুতি পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি বিশেষজ্ঞ দল ১০ দিনের সফরে রাজ্যে এসেছিলেন৷ সফরকালে বিশেষজ্ঞ দল আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ সহ বিভিন্ন জেলা পরিদর্শনে যায়৷ বিশেষজ্ঞ দলের রিপোর্ট অনুসারে পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের প্রস্তুতি সন্তোষজনক৷ পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ দল কিছু পরামর্শ দিয়েছে, যা রাজ্য সরকার গ্রহণ করেছে৷ প্রাথমিক রিপোর্ট অনুসারে সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান না করা এবং সামাজিক দূরত্ব না মানায় রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এগুলির ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে৷


যে কোনও ধরনের গুজবকে যাতে প্রশ্রয় না দেওয়া হয় তার জন্য রাজ্যের সর্বস্তরের জনগণ এবং সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছে বিনম্র অনুরোধ জানানো হয়েছে৷ এমনিতেই করোনা সংক্রান্ত কোনও রকম অসমর্থিত এবং ভুল তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে তা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে মহামান্য সুপ্রিমকোর্টের আদেশনামা রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও জনমনে অযথা ভীতি ও আতঙ্ক তৈরি করতে নানা কায়েমি স্বার্থ, ভুল তথ্য পরিবেশনের নজির রয়েছে৷ তার ফলে গুরুতর অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও অনেক রোগীর হাসপাতালে ভরতির ক্ষেত্রে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে৷ দেরিতে ভরতি হওয়ার কারণে অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে মৃত্যু হার বেশি৷


তিনি বলেন, এটা দেখা গেছে, জিবি হাসপাতাল নিয়ে যতই ভুল ধারণা সৃষ্টি করা হোক না-কেন মানুষ ভরতি হওয়ার জন্য জিবি হাসপাতালকেই বেছে নিচ্ছেন৷ এমন-কি কোভিড-১৯-এর মৃদু লক্ষণযুক্ত মামলাগুলিও ডাক্তারের পরামর্শ মতো ভগৎ সিং কোভিড হেলথ সেন্টারে না গিয়ে এজিএমসি ও জিবি হাসপাতালের বেড দখল করে রেখেছেন৷ যার জন্য আগরতলা মেডিক্যাল কলেজ ও জিবি হাসপাতালে সব ধরনের পরিষেবায় কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে৷ জেলা হাসপাতালগুলিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি কোভিডের জন্য জেলা হাসপাতালে পৃথক ব্যবস্থাপনা রাখার ফলে মৃদু লক্ষণযুক্ত কোভিড রোগীদের প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা সম্ভব হয়েছে৷


তিনি ক্ষোভের সুরে বলেন, দেখা গেছে কোনও রকমের অনুমতি না নিয়ে সামাজিক দূরত্ব না মেনে, সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার না করে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ, মিছিল, সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে, যা কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ৷ এই বিষয়টি রাজ্যে পরিদর্শনকারী কেন্দ্রীয় দলের নজরে এসেছে৷
তিনি বলেন, উচ্চ আদালত রাজ্যে কোভিড পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কিছু তথ্য জানতে চেয়েছে৷ এর উত্তরে রাজ্য সরকার হাইকোর্টের কাছে হলফনামা জমা দিয়েছে৷ প্রদত্ত তথ্যে আদালত সন্তুষ্ট হয়েছে এবং এর বাইরেও উচ্চ আদালত আরও কিছু তথ্য রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে, যা যথাসময়ে জমা দেওয়া হবে৷

কোনও প্রকার বিভ্রান্তি বা গুজবে কান না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমাদের সকলের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের পাশে থেকে দৃঢ়ভাবে এর মোকাবিলা করা৷ রাজ্য সরকার জনগণের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে অক্ষুণ্ণ্ রাখতে দায়বদ্ধ৷ এই সময় আমাদের প্রয়োজন ধৈর্য ও সংযমের৷ চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মী এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মীরা যেভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তাঁদেরকে মুখ্যমন্ত্রী আন্তরিক অভিনন্দন জানান৷