নয়াদিল্লি, ২৩ নভেম্বর (হি.স.) : “আমার জীবনে কখনই এমন প্রতারিত বোধ করিনি … যাকে আড়াল করেছি, ভালবেসেছি … দেখুন বদলে কী পেলাম |” মহারাষ্ট্রে মহা চমক দেখিয়ে শপথ নিয়েছেন দেবেন্দ্র ফড়ণবিশ।উপ মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন এনসিপি নেতা অজিত পওয়ার। আর এই অজিত পাওয়ারের উদ্দেশ্যেই উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন তাঁর তুতো বোন তথা শারদ পাওয়ারের কন্যা সুপ্রিয়া সুলে | বরাবর কাকা শরদ পওয়ারের ছায়ায় থাকা অজিত পওয়ার আচমকা বিদ্রোহী হয়ে, দল ভেঙে বিজেপির হাত ধারায় যেমন দুঃখ পেয়েছেন বড়ামতির সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে, তেমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কাকা শরদ পওয়ার | তাঁর হুঁশিয়ারি ভাইপোকে মজা দেখাবেন, বহিষ্কার করবেন দল থেকে। যা থেকে স্পষ্ট, ফের ভাঙছে পরিবার | তবে ভারতীয় রাজনীতিতে পারিবারিক বিবাদ এই প্রথম নয় | এইভাবে এর আগে দেবীলাল, গান্ধী, ঠাকরে, বাদল, করুণানিধি পরিবার সহ আরও একাধিক পরিবারে ভাঙন ধরে | নিচে দেখে নেওয়া যাক এমনই কিছু পরিবারের ঘটনা।
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2017/12/BL02_SHARAD_PAWAR__3181035f.jpg)
দেবীলাল পরিবার : ১৯৮৯-এ বিশ্বনাথপ্রতাপ সিং সরকারের উপ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন হরিয়ানার একচ্ছত্র নেতা দেবীলাল। তার আগে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। দেবীলাল উপ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী করে যান বড় ছেলে ওমপ্রকাশ চৌতালাকে। তাঁর ছোট ছেলে রণজিৎও মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে ছিলেন, রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে ঝামেলার জেরে পরিবারে ভাঙন ধরে। রণজিৎ দল ছেড়ে দেন, যোগ দেন কংগ্রেসে। এখন অবশ্য তিনি মনোহরলাল খট্টর মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। আর ওমপ্রকাশ দুর্নীতির দায়ে জেলে। গত বছর ওমপ্রকাশের দুই ছেলে অভয় ও অজয়ও পৃথক হয়ে যান। অজয় ছেলে দুষ্যন্তের সঙ্গে তৈরি করেছেন জননায়ক জনতা পার্টি, অভয় সামলাচ্ছেন ভারতীয় জাতীয় লোকদলের দায়িত্ব। দুষ্যন্ত এখন খট্টর মন্ত্রিসভায় উপ মুখ্যমন্ত্রী।
গান্ধী পরিবার : ইন্দিরা গান্ধীর ছোট ছেলে সঞ্জয়ের স্ত্রী মানেকা ও ছেলে বরুণ গান্ধী আজ বিজেপির সাংসদ। তাঁদের পরিবারে ভাঙন নিয়ে এক সময় তীব্র জলঘোলা হয়।
ঠাকরে পরিবার : বাল ঠাকরের পরিবার ভেঙে যায় প্রায় ১৫ বছর আগে। ভাইপো রাজ ঠাকরে ছিলেন কাকা বাল ঠাকরের প্রতিরূপ, উঠে আসেন শিবসেনার আগামী মুখ হয়ে। শোনা যেত, তিনিই পাবেন দলের দায়িত্ব। কিন্তু ২০০৪ সালে বালাসাহেব বড় ছেলে উদ্ধবকে দলের কার্যকরী অধ্যক্ষ করে দেন। এর পরের বছর দল ছেড়ে বেরিয়ে যান রাজ ঠাকরে, তৈরি করেন মহারায্ট্র সব নির্মাণ সেনা।
বাদল পরিবার : ২০১০-এ ভেঙে যায় পঞ্জাবের বাদল পরিবার। ২০০৭ সালে প্রকাশ সিং বাদল তাঁর ছেলে সুখবীর বাদলকে উপ মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করেন, অর্থ দফতর পান ভাইপো মনপ্রীত বাদল। কিন্তু প্রকাশ ভাইপোর বদলে ছেলেকে নিজের উত্তরসূরী ঘোষণা করায় অসন্তুষ্ট হন মনপ্রীত। ২০১০ সালে তিনি শিরোমণি অকালি দল ছেড়ে দিয়ে পিপিপি তৈরি করেন। ২০১৪-য় যান কংগ্রেসে, এখন তিনি অমরিন্দর সিংহ সরকারে মন্ত্রী।
করুণানিধি পরিবার : ১৯৬৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ৫ বার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হন এম করুণানিধি। তাঁর পছন্দ ছিলেন ছোট ছেলে স্টালিন। কিন্তু ভাইয়ের হাতে বেশি দায়িত্ব যাওয়া বড় ছেলে আলাগিরির পছন্দ হয়নি। অশান্তির জেরে করুণানিধি দল থেকে আলাগিরিকে বহিষ্কার করেন, দলের দায়িত্ব পুরোপুরি সঁপে দেন স্টালিনের হাতে।
মুলায়ম পরিবার : ২০১৬-য় ভেঙে যায় মুলায়ম সিং যাদব পরিবার। ছেলে অখিলেশ যাদবের কিছু সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট মুলায়ম সপার অধ্যক্ষ করেন ভাই শিবপাল যাদবকে। অখিলেশ তখন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, তিনি বাবার সিদ্ধান্ত মানেননি। সিংহভাগ বিধায়কের সমর্থনের জোরে দলীয় বৈঠক ডেকে নিজেকে দলীয় সভাপতি ঘোষণা করেন তিনি।
সিন্ধিয়া পরিবার : মাধবরাও সিন্ধিয়ার বোন বসুন্ধরা বিজেপিতে, মা বিজয়ারাজেও বিজেপি নেত্রী ছিলেন। আবার মাধবরাওয়ের ছেলে জ্যোতিরাদিত্য কংগ্রেস নেতা।
এই একই ক্ষমতার লোভে চন্দ্রবাবু নাইডুও ছাড়েন পরিবার | ১৯৮২-তে অভিনেতা এনটি রামা রাও অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন। তাঁর মেয়ের বিয়ে হয় চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে। ১৯৯৪-এ নাইডু এনটিআরকে দলীয় সভাপতির পদ থেকে হটিয়ে দেন, ১৯৯৫-এ নিজে হন মুখ্যমন্ত্রী। এনটিআরের স্ত্রী লক্ষ্মী এতে অসন্তুষ্ট হয়ে নিজের দল গড়েন। কিন্তু সাফল্য পাননি তিনি।
উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্রের মসনদ নিয়ে মহাজট চলার মধ্যে গতকাল রাতের বৈঠকেই সরকার গড়া নিয়ে একপ্রকার সহ মত হয় তিন দল শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস | এই অবস্থায় শনিবার সকালে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নাটকীয় মোড়। দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন দেবেন্দ্র ফড়ণবিশ। উপ মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন এনসিপি নেতা অজিত পওয়ার। সকাল ৬টার আগেই রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহারের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। সূত্রের খবর, ৩০ এনসিপি-র বিধায়ক এবং ৪ শিবসেনা বিধায়ক বিজেপির সঙ্গে আছেন।