নিজস্ব প্রতিনিধি, বিরাশিমাইল / চুরাইবাড়ি / বিলোনীয়া, ১৬ এপ্রিল৷৷ ৪৮ ঘন্টায় রাজ্যে পৃথক স্থানে পাঁচটি খুনের ঘটনা ঘটেছে৷ লংতরাইভ্যালি মহকুমা মানিকপুরে তিন জন, চুরাইবাড়িতে এক মহিলা ও শান্তিরবাজারে এক যুবক খুন হয়েছেন৷ পৃথক খুনের ঘটনায় দুই জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে৷ ৪৮ ঘন্টায় পাঁচটি খুনের ঘটনায় রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ণ তুলেছে৷

মদের আসরে ঝগড়ার জেরে খুন হলেন তিন জন৷ ঘটনা লংতলাইভ্যালির মানিকপুরে৷ যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সে হল ছবিকান্ত চাকমা৷ তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ এই ঘটনা রবিবার রাতের৷ নিহত তিনজন হলেন, সুবল কান্তি চাকমা, কিনাচাঁদ চাকমা, এবং হেমাতি ত্রিপুরা৷ তাদের মধ্যে সুবল চাকমার বয়স ৪৫ এবং কিনাচাঁদ কান্তি চাকমার বয়স ৬৫ বছর৷ রবিবার ছিল চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষের বিজু উৎসব৷ এই উৎসব উপলক্ষ্যে এলাকার লোকজন মদ্য পান করেছিলেন৷ তারপর কোন ঘটনা নিয়ে কিছু লোকের মধ্যে ঝগড়া বাধে৷ পুলিশ এবং এলাকাবাসীর তরফে জানা গেছে অভিযুক্ত ছবিকান্ত চাকমা তারপর উন্মত্ত হয়ে দা দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপানো শুরু করে৷ যার জেরে তিন জনের মৃত্যু হয় বলে খবর৷ আহত হয়েছেন আরও দুজন৷ এরা হলেন মুরুছলা চাকমা ও গুণধর চাকমা৷ এদেরও আঘাত গুরুতর বলে জানা গেছে৷ এই দুজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন৷ এই ঘটনায় ঝর্নালু চাকমা নামে একজনের খোঁজ মেলে নি৷
জানা গিয়েছে, চৈত্র সংক্রান্তির দিনে গ্রামেই পুজো দিতে গিয়েছিলেন হেনাবতী ত্রিপুরা(৪৫) নামে এক মহিলা৷ পুজো সেরে বাড়িও ফিরছিলেন৷ এর মধ্যে গ্রামে পরিচিত সুবল কান্তি চাকমার বাড়িতে যান৷ ওই দিন তার বাড়িতে থাকার অনুরোধ জানিয়েছিল সুবল৷ রাতেই সুবলের হেনবেতি ত্রিপুরা (৪৫) স্বামী বিজয়নন্দ ত্রিপুরা, আপনবলি, কিনাচান চাকমা(৬৫) কামান (৪৫) পিতা শুক্ল কুমার ত্রিপুরা, পয়সা রায় কারবারী পাড়া৷ সেই আসরে গিয়ে উঠে এলাকার যুবক লক্ষ্মীময় চাকমা(২০)৷ মদের আসরে কোন একটি বিষয় নিয়ে তাঁর বচসা বাঁধে৷ আর এর জেরেই কুড়োল দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে শুরু করে লক্ষ্মীময়৷ কুড়োলের আঘাতে একে একে মাটিতে ঢলে পড়ে হেলাবতী আহত হয় গুণধর চাকমা(৪০) নামে এক প্রতিবেশী৷
মানিকপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে৷ পুলিশ একটি হত্যা মামলা করে অভিযুক্ত লক্ষ্মীময় চাকমাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে৷
চৈত্র সংক্রান্তির রাতে তিনজন নৃশংস খুন হওয়ায় ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল লংতলাইভ্যালি মহকুমার মানিকপুরে৷
এদিকে, চার সন্তানের জননি সোমবার দুপুরে খুন হয়েছেন৷ চুরাইবাড়ি থানাধীন লক্ষ্নীনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সেফালি সিন্হা জঙ্গলে লাকড়ি সংগ্রহে গেলে খুন হন৷ তাকে জঙ্গলের ভেতরে একটি গাছের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে মাটিতে পড়ে থাকতে পাওয়া গেছে৷ এই ঘটনায় অভিযুক্ত বিষ্ণু নাথকে মঙ্গলবার চুরাইবাড়ি থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে৷
জানা গেছে, সোমবার দুপুরে লাকড়ি সংগ্রহে জঙ্গলে গিয়েছিলেন সেফালি সিন্হা৷ তার সাথে প্রতিবেশী যুবক বিষ্ণু নাথকে দেখা গিয়েছিল৷ দীর্ঘ সময় জঙ্গল থেকে বাড়ি ফিরে না আসায় সেফালি সিন্হার খোঁজ শুরু হয়৷ জঙ্গলে তাকে একটি গাছের সাথে গলায় দড়ি লাগানো অবস্থায় মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে৷ খবর পেয়ে পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়৷ এদিকে, প্রতিবেশী যুবক বিষ্ণু নাথকে ওই মহিলার সাথে অন্তিমবার দেখা গিয়েছিল৷ এরই সূত্র ধরে পুলিশ তাকে খোঁজতে শুরু করে৷ সোমবার গভীর রাতে কদমতলা থানাধীন ঝেরঝেরি এলাকা থেকে অভিযুক্ত বিষ্ণু নাথকে গ্রেপ্তার করে চুরাইবাড়ি থানার পুলিশ৷ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে ওই বৃদ্ধাকে গলা টিপে হত্যা করেছে৷ আজ তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়৷ পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল আদালতের কাছে৷ কিন্তু আদালত বৃদ্ধা খুনে অভিযুক্ত বিষ্ণু নাথকে জেল হেপাজতে পাঠিয়েছে৷
অন্যদিকে, বন্ধুদের সাথে বিবাদের জেরেই একজনের মৃত্যু৷ ঘটনার বিবরণে জানা যায় মঙ্গলবার সকালবেলা শান্তির বাজার মহকুমার অন্তর্গত বাইখোড়া থানার অধিনে পশ্চিম চড়কপাই এলাকায় মঙ্গাইমগ পাড়ায় মারামারির ফলে মৃত্যুর মুখে ঢলে পরে রঞ্জিত দেবনাথ (৪০) নামে এক ব্যাক্তি৷ জানা যায় রঞ্জীত দেবনাথের বাড়ি বাইখোড়ার কুশালঘাট এলাকায়৷ রঞ্জীত দেবনাথ গতকাল পশ্চিম চড়কপাই মঙ্গাই মগ পাড়ায় উনার এক নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে রেরাতে আসেন৷ সেখানে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে রাত্রিবেলায় তিন বন্ধু মিলে মদ্যপানে বসে৷ পরবর্তী সময় মদ্যপান শেষে দুই বন্ধু মিলে রঞ্জিত দেবনাথকে আক্রমণ করে বলে অভিযোগ৷ আক্রমণের শিকার রঞ্জীত দেবনাথ গুরুতর আহত হয়ে একটি জঙ্গলে পরে থাকে৷ আজ সকালে উনার আত্মীয় বাড়ির লোকজন ও এলাকাবাসী রঞ্জীত দেবনাথকে অর্ধমৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে বাইখোড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাবার পথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রঞ্জীত দেবনাথ৷ মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনা তদন্তের জন্য রঞ্জীত দেবনাথের আত্মীয় বাড়িতে ছুটে যান শান্তির বাজারের পুলিশের এসডিপিও নির্দেশ দেব ও বিশাল পুলিশ বহিনী৷ উনারা স্পষ্ট ভাষায় জানান লসিঙ্গা মগ ও সুজিত দেবনাথ নামে দুই ব্যক্তি রঞ্জীত দেবনাথকে আক্রমণ করেছে৷ নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে এই ধরনের আক্রমণে কোনোপ্রকার রহস্য আছে কিনা তানিয়ে তীব্র গুঞ্জন চলছে এলাকাবাসীর মধ্যে৷ অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তে নেমেছে বলে জানান এসডিপিও নির্দেশ দেব৷