নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ এপ্রিল৷৷ বাধারঘাটের বিধায়ক ও প্রাক্তন মন্ত্রী প্রয়াত দিলীপ সরকারের মরদেহ আজ সকালের বিমানে দিল্লি থেকে রাজ্যে এসে পৌঁছুয়৷ প্রয়াত দিলীপ সরকারের মরদেহ আগরতলার মহারাজা বীরবিক্রম বিমানবন্দর থেকে শববাহী শকটে করে নিয়ে আসা হয় রাজ্য বিধানসভা ভবন প্রাঙ্গণে৷ সেখানে প্রয়াত বিধায়ক দিলীপ সরকারের মরদেহে পুপস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ রেবতী মোহন দাস, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুুদীপ রায় বর্মণ, বিধায়ক আশিস সাহা, বিধায়ক সুুশান্ত চৌধুরী, বিধায়ক ডা. দিলীপ দাস, বিধায়ক তথা বিধানসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায়, বিধানসভার সচিব সুুভাষ শিকদার এবং উপস্থিত অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ৷ বিধানসভা ভবন প্রাঙ্গণে আরক্ষা দপ্তরের জওয়ানদের পক্ষ থেকে প্রয়াত বিধায়কের সম্মানে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়৷ এরপর প্রয়াত বিধায়কের মরদেহ নিয়ে আসা হয় মহাকরণে৷ সেখানে পুপস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা ’াপন করেন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুুদীপ রায় বর্মণ, রাজস্বমন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা, বিধায়ক আশিস সাহা, বিধায়ক সুুশান্ত চৌধুরী, বিধায়ক ডা. দিলীপ দাস, বিধায়ক তথা বিধানসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায় সহ সচিবালয় প্রশাসনের সচিব টি কে চাকমা৷ মহাকরণের অন্যান্য কর্মীরাও প্রয়াত দিলীপ সরকারের মরদেহে পুপার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান৷

প্রয়াত বিধায়ক দিলীপ সরকারের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন বলেন তিনি ছিলেন রাজনৈতিক আঙ্গিনায় একজন ব্যক্তিত্ব৷ দিলীপ সরকারের প্রয়াণে যারা রাজনৈতিক আঙ্গিনায় রয়েছেন শুধু তারাই নন, সমাজ একজন দারুণ মানুষকে হারিয়েছে৷ তিনি ছিলেন খুবই বড় মনের মানুষ৷ গরীব, মেহনতী, দুঃখী যারাই বিপদে পড়ে তার কাছে গেছেন সাধ্যমত তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন৷ বিয়ে, শ্রাদ্ধানুষ্ঠান, বই কেনা যে কোনো ব্যাপারে তিনি মানুষের পাশে দাঁড়াতেন৷ তার মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে৷ সুদীপবাবু বলেন জানিনা কিভাবে এই ক্ষতি পূরণ হবে৷ বিধায়ক দিলীপ সরকার খুব মজাদার ব্যক্তি ছিলেন৷ কারো প্রতি কোন ঈর্ষা ছিল না৷ সকলকে নিয়ে চলতে তিনি ভালোবাসতেন৷ এমন একটা মানুষকে হারানো মানেই সমাজ একটা বিশাল মনের মানুষকে হারিয়েছে বলে উল্লেখ করেন সুদীপ রায় বর্মন৷
প্রয়াত বিধায়ক দিলীপ সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন একজন বিধায়ক বা জনপ্রতিনিধি কি তা বোঝা যায় যখন তিনি ইহলোক ছেড়ে চলে যান৷ রতন বাবু বলেন, তিনি যখন মন্ত্রী ছিলেন তখন যেভাবে মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করতেন, ঠিক তেমনি বিরোধী দলের বিধায়ক হয়েও সেই রকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ প্রত্যেক মানুষের পাশে তিনি দাঁড়াতেন৷ তিনি ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব৷ প্রকৃত জনপ্রতিনিধি বলতে গেলে দিলীপ সরকারকেই বুঝায় বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন৷ তিনি ছিলেন মানবিক ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব৷ প্রয়াত ও দিলীপ সরকারকে তিনি আপাদমস্তক ভদ্রলোক বলে আখ্যায়িত করেন৷
রাজস্ব মন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মাও প্রয়াত বিধায়ক দিলীপ সরকারের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন৷ তিনি প্রয়াতের পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন৷
বিধানসভা থেকে প্রয়াত সরকারের মরদেহ নিয়ে আসা হয় কৃষ্ণনগরে বিজেপি-র দলীয় প্রদেশ সদর কার্যালয়ে৷ সেখানে প্রয়াত নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেব৷ তাছাড়া বিজেপির অন্যান্য নেতা ও কর্মীরা প্রয়াত বিধায়ক দিলীপ সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন৷ দলীয় কার্যালয় থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় আগরতলায় চারিপাড়া এলাকার নিজের আবাসনে৷ সেখান থেকে প্রয়াতের নির্বাচনি কেন্দ্র তথা গৃহভূমি বাধারঘাটে তাঁর নিজস্ব বাসভবনে৷ সেখানে এলাকার বাসিন্দা এবং দলীয় কর্মীরা তাঁর মরদেহে মাল্যদান এবং শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন৷ প্রয়াত বিধায়কের বড় ভাই রাজকুমার সরকার জানান, তাঁর ভাইয়ের সৎকার হবে তাঁদের বাড়ির সামনেই৷ তিনি জানান, মরদেহ তাঁর বাড়িতে প্রায় দুই ঘণ্টা রাখা হয়৷ পরে বিকালে শেষ কৃত্য সম্পন্ন করা হয়৷
উল্লেখ্য, প্রয়াত বিধায়ক দিলীপ সরকার দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন৷ পরবর্তী সময়ে আরও নানান সমস্যায় আক্রান্ত হন তিনি৷ জানা গেছে, বিগত ১৫-২০ দিন আগে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে তাঁকে ভরতি করানো হয়৷ সেখানে বিধায়ককে ভেল্টিলেশনে রাখে সুস্থ করতে চিকিৎসকরা সবরকম চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু তাঁদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে রবিবার রাত দুটো ৩৭ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিধায়ক দিলীপ সরকার৷