নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ মার্চ৷৷ লোকসভা নির্বাচনের মুখে রাজ্যের পৃথক স্থানে আগ্ণেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় জনমনে শংকা বাড়িয়ে দিয়েছে৷ শুধু তাই নয় রাজ্যের আভ্যন্তরীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে৷ বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনাও ঘটে চলেছে৷ যেখানে নির্বাচন কমিশনের কাছে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের জন্য দাবী জানিয়ে আসছে বিরোধী দলগুলি সেখানে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা সম্ভব নয়৷ কংগ্রেসের তরফ থেকে ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবী জানানো হয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য৷ এক্ষেত্রে প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবীও জানানো হয়েছে কংগ্রেসের তরফ থেকে৷

জ্বালানি খড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে নদী থেকে উদ্ধার হল আগ্ণেয়াস্ত্র৷ এই ঘটনা সিপাহিজলা জেলার সোনামুড়া মহকুমার রামকৃষ্ণপল্লি এলাকার নদীতে ঘটেছে৷শনিবার দুপুরে এলাকার তিন যুবক সোনামুড়া থানার পেছনে গোমতী নদীতে খড়ি সংগ্রহ করতে যান৷ তখন তাঁরা একটি বন্দুক দেখতে পান নদীর বালুচরে৷ সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা খবর দেন সোনামুড়া থানায়৷ খবর পেয়ে সোনামুড়া থানার ওসি মিলন দত্তের নেতৃত্বে পুলিশ নদীতে পৌঁছে বন্দুকটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন৷ সোনামুড়া থানার ওসি মিলন দত্ত জানান, এটি কারবাইন সিরিজের বন্দুক৷তিনি জানান, বিশেষজ্ঞদের খবর দেওয়া হয়েছে৷ তাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিপোর্ট দিলে এর আসল রহস্য উন্মোচন হবে৷ তবে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে বলেও জানান ওসি মিলন দত্ত৷ এদিকে স্থানীয় লোকজনদের ধারণার সূত্রে ওসি জানান, ১৯৯৩ সালে এক বিএসএফ জওয়ানের গোমতী নদীর জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছিল৷ এই বন্দুকটি তাঁর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তাই বিএসএফ কর্তৃপক্ষকেও খবর দেওয়া হয়েছে৷ বন্দুক উদ্ধারের খবর সোনামুড়া এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে কৌতূহলী জনতা থানায় ভিড় জমান বন্দুকটি দেখার জন্য৷
এদিকে, লোকসভা নির্বাচনের প্রাকমুহূর্তে গভীর জঙ্গল থেকে উদ্ধার হল একটি গাদা বন্দুক৷ ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, শনিবার সকালে শান্তিরবাজার মহকুমার অন্তর্গত কলষি গঙ্গাজয় পাড়ায় অবস্থিত গভীর জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয়েছে ওই গাদা বন্দুক৷ বন্দুক উদ্ধার ষম্পর্কে তথ্য দিতে গিয়ে বাইখোড়া থানার এসআই সুমন সিংহ জানান, কলষিগঙ্গা জয় পাড়ার লোকজন বাইখোড়া থানায় প্রথমে এই খবর দেন৷ তিনি জানান, আজ সকাল প্রায় সাড়ে সাতটা নাগাদ এলাকার লোকজন বন্দুকের গুলির শব্দ শুনতে পান৷ তা শুনে তাঁরা পুলিশকে খবর দেন৷ খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তল্লাশি চালায়৷ কিন্তু সে-সময় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ কিছুই পায়নি৷ কিছুক্ষণ পর ফের পুলিশ তল্লাশি চালায় এলাকায়৷ তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ওই জঙ্গল থেকে একটি গাদা বন্দুক উদ্ধার করে৷এষআই সুমন সিংহের নেতৃত্বে এই অভিযানটি চালানো হয়৷ তিনি জানান, পুলিশের ভাষায় এ ধরনের বন্দুককে বলা হয় কান্িন্ট মেড গান৷ এই বন্দুকের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ ফুট৷ বন্দুক উদ্ধারের পর ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে৷ এখনও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি৷
লোকসভা নির্বাচনে ত্রিপুরার সমস্ত বুথে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা সম্ভব নয়৷ তবে, অন্যান্য বারের মতোই ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার বন্দোবস্ত করা হয়েছে৷ রাজ্য মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক এই তথ্য দিয়েছেন৷ তিনি জানান, শান্তিপূর্ণ ভোট সুনিশ্চিত করা হবে৷
মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক শ্রীরাম তরণিকান্তি জানান, সারা দেশে নির্বাচন৷ ফলে পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী পাওয়া মুশকিল৷ কয়েকটা রাজ্যে নির্বাচন হলে চাহিদার থেকেও বেশি কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী পাওয়া যায়৷ তবে তিনি ভোটারদের অভয় দিয়ে বলেন, ভোট শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হবে৷ কারণ, বরাবরের মতোই ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
তাঁর কথায়, কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি প্রতি নির্বাচনে পুলিশ ও টিএসআর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে৷ এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না৷ তাঁর দাবি, যে-সমস্ত বুথে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা সম্ভব হবে না সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ ও টিএসআর জওয়ান মোতায়েন করা হবে৷
তিনি আরও জানিয়েছেন, নির্বাচনে রাজ্যে অবস্থানরত বিএসএফ, সিআরপিএফ, আসাম রাইফেলস নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সহযোগিতা করবে৷ শ্রীরাম তরণিকান্তি জানান, পুলিশ, সিআরপিএফ, বিএসএফ-এর আইজি-দের সাথে এবং সমস্ত জেলার পুলিশ সুপার, জেলাশাসক ও অবজারভারদের সঙ্গে ভোটে নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক করেছি৷ ফলে, নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই বলে অভয় দিয়েছেন তিনি৷তাঁর বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় কম আসবে৷