পণ্যবাহী গাড়ির দালালি, চুরাইবাড়িতে পুলিশ-জনতা খন্ডযুদ্ধ, যাত্রীবাহি গাড়ি ভাঙচুর ও জাতীয় সড়ক অবরোধে দিনভর উত্তেজনা অসম-ত্রিপুরা সীমান্তে

নিজস্ব প্রতিনিধি, চুরাইবাড়ি, ২০ ডিসেম্বর৷৷ পণ্যবাহী গাড়ির দালালিকে কেন্দ্র করে অসম ত্রিপুরা সীমান্ত চেকগেট এলাকার পরিস্থিতি থমথমে৷ অসমের করিমগঞ্জ জেলার অন্তর্গত বাজারিছড়া পুলিশের হাতে বৃহস্পতিবার ভোরে গাড়ি অ্যান্ট্রির কয়েকজন দালালকে গ্রেফতার হয়েছিল৷ তারা সকলেই উত্তর ত্রিপুরা চোরাইবাড়ি এলাকার বাসিন্দা৷ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পড়শি দুই রাজ্যের সীমান্তবর্তী জিরো পয়েন্ট চোরাইবাড়িতে ঘটে ধুন্ধুমার কান্ড৷ কথিত দালালদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে সীমান্তের ওপারে তাদের অনুগামী ত্রিপুরার কতিপয় উত্তেজিত যুবক অসমের যাত্রীবাহী যানে ভাঙচুর, অগ্ণিসংযোগ ঘটিয়েছে৷ জাতীয় সড়কে টায়ার পুড়িয়ে অবরোধ গড়ে তুলে তারা৷ প্রায় আট ঘন্টা পর উত্তর ত্রিপুরার সদর ধর্মনগর থেকে পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী এবং এসডিপিও জ্যোতিষ্মান দাসচৌধুরী ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করে তুলতে সক্ষম হন৷

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত মাস দুয়েক ধরে ত্রিপুরার চোরাইবাড়ি এলাকার কতিপয় গাড়ি অ্যান্ট্রি দালাল অসমের বাজারিছড়া হাতিখিরার ২০ নম্বর এলাকার শর্মা লাইন হোটেলের পাশে বসে বিভিন্ন পণ্য বোঝাই লরিকে ত্রিপুরার প্রবেশমুখে বিদ্যমান চেকগেট পার করে দেওয়ার নামে অবৈধ উপায়ে টাকার বিনিময়ে দালালি করে আসছিল৷ এতে হোটেল মানিলক পিএম সর্মার হোটেলে নাকি গ্রাহকদের আনাগোনা কমে আসতে থাকে৷

অন্যান্যদিনের মতো বুধবার রাতেও দালাল হিসেবে চিহ্ণিত কতিপয় যুবক শর্মা হোটেলে এসে বিভিন্ন লরি চালকদের কাছ থেকে গাড়ি পার করে দেওয়ার কথা বলে৷ বিনিময়ে টাকার অঙ্ক নিয়ে একাংশ লরি চালকের সঙ্গে দালালদের ঝগড়া বাধে৷ ফলে বহু লরি চালক এদের খপ্পর থেকে রক্ষা পেতে শর্মা হোটেলে খাবার না খেয়ে অন্যত্র চলে যান৷ তখন ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে দেখে হোটেল মালিক শর্মা বিষয়টি বাজারিছড়া থানার ওসি গৌতম দাসকে অবগত করেন৷ ওসির পরামর্শে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পিএম শর্মা৷ প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল প্রায় ছয়টা নাগাদ ওসিগৌতম দাস শর্মা হোটেলেপ হানা দিয়ে দশ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যান৷ থানায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছয়জনকে নির্দোষ বলে বিবেচনা করে বাকি চারজনকে লকআপে পুরে রাখেন ওসি৷ এদের টিঙ্কু দেব, বিকাশ সিংহ, শিবা দেব এবং সুমন দেব৷ বাড়ি চোরাইবাড়ি এলাকায়৷

এই খবর মুুহূর্তের মধ্যে চাউর হলে পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরা দালাল সিন্ডিকেট প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে৷ ওই সিন্ডিকেটের বেশ কয়েকজন সদস্য সকাল প্রায় আটটা নাগাদ অসম-ত্রিপুরা সীমান্ত চেকগেটের চোরাইবাড়ি জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়ে অসম পুলিশের প্রতি বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করে৷ সে সময় লোয়াইরপোয়া থেকে চোরাইবাড়িগামী দুটি যাত্রীবাহী অটো রিকশোয় বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর চালিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলে৷ বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভিড় বাড়তে থাকে৷ এক সময় ত্রিপুরা দালালচক্র ও তাদের সমর্থকরা আট নম্বর জাতীয় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবেশী দুই রাজ্যের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম অচল করে দেয়৷

খবর পেয়ে ধর্মনগরের এসডিপিও জ্যোতিষ্মান দাসচৌধুরী, অসমের বাজারিছড়া ও চোরাইবাড়ি থানার ওসি যথাক্রমে গৌতম দাস এবং সুপ্রিয় ভট্টাচার্য ঘটনাস্থলে উপস্থিথ হয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেন৷ কিন্তু জমায়েত মারমুখি জনতা কর্তব্যরত উভয় রাজ্যের পুলিশকর্মীদের সঙ্গে দু দফায় খন্ডযুদ্ধ বাধিয়ে লঙ্কাকান্ড ঘটিয়ে দেয়৷ তাদের দাবি, ধৃতদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ তুলবে না তারা৷

এদিকে অবরোধের ফলে রাে্যজর প্রবেশদ্বারে অসংখ্য দূরপাল্লার পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন আটকে পড়ে৷ চরম লাঞ্ছনার শিকার হন অসংখ্য যাত্রীকুল৷ অবশেষে বিকেল প্রায় চারটে নাগাদ উত্তর ত্রিপুরার পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী  এসে জবরদস্তি সড়ককে অবরোধমুক্ত করতে সক্ষম হন৷

অন্যদিকে কথিত দালালদের পক্ষে কয়েকজনের অভিযোগ, বাজারিছড়া পুলিশ তাদের অকারণে ধরে নিয়ে বেদম মার মেরেছে৷ পুলিশের মারে জখম হয়েছেন জাকির হোসেন নামের এক যুবক৷ তিনি নাকি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাজারিছড়ার ওসি গৌতম দাস জানান, কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকারের আমলে চেকগেইটের প্রচলন তুলে দেওয়া হয়েছে৷ এই পদক্ষেপ দালাল রাজত্বের অবসান ঘটেছে৷ তা হলে নতুন করে এই সব দালান এলো কোথা থেকে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *