গাম্বুসিয়া

৷৷ সুবোধ ঘোষ৷৷

‘মশা মারতে কামান দাগা’- এ প্রবাদ বাক্যকে তৎকালীন বাম সরকারের অধীনে থাকা পুর নিগম কর্তৃপক্ষ সত্যে পরিণত করেছিলেন৷ সত্যি সত্যি মশা মারার জন্য কবে কামান দেগেছিলেন৷ তবে সেই কামান থেকে গুলি বের হত না৷ বের হত নিকষ কালো ধোঁয়া৷ সেই কালো ধোঁয়ার দাপটে আশেপাশের দোকান পাট এবং বাড়ি ঘরে থাকা মানুষ সহ পথচারীদের দমবন্ধ হবার উপক্রম ছিল৷ কিন্তু, এমন ভয়ংকর কামান দাগানোর পরও মশক কূল হৃষ্ট চিত্তে হাওয়ায় উড়ে বেড়াত৷ এবং মানবকুলকে  দংশনে জর্জরিত করত৷ তাই মশা মারতে কামান দাগা এক হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছিল৷ ডিডিটি পাউডার বিকল্প হিসাবে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার খঁুজে নিয়েছিলেন কামানকে৷ কিন্তু, সেই কামান বর্তমান পুর নিগমের মালঘরে ঠাঁই পেয়েছে৷ মাঝখানে বেশ কিছু টাকা গচ্ছা গেল৷ হাতিয়ে নিল একাংশ ধান্দাবাজরা৷ এরই মাঝে সরকার পরিবর্তন৷

নতুন কিছু করার তাগিদ অনুভব করল বিজেপি সরকার৷ রাজধানীবাসীকে মশার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিগমবাবুদের শুরু হল চিন্তা ভাবনা৷ শুরু হল খোঁজখঁুজির পালা৷ জুতো আবিস্কারের মত পেয়ে গেলেন গাম্বুসিয়ার হদিশ৷ এ গাম্বুসিয়া হল মশার লার্ভা খেকো এক ধরনের মাছ৷ পুর নিগমের কমিশনার শৈলেশ যাদবের উর্বর মস্তিস্ক থেকে এই মাছের হদিশ মিললো৷ যেই ভাবনা সেই কাজ৷ দিল্লী ও অন্য রাজ্য হইতে গাম্বুসিয়া মাছ আনা হচ্ছে৷ এতদিন রাজ্যবাসী জানতো মাছ পুকুরে ছাড়া হয়৷ এবার রাজ্যবাসী দেখবে মাছ ছাড়া হবে বিভিন্ন নর্দমায়৷ কেননা, মশার অধিকাংশ উৎপত্তিস্থল হল নর্দমা৷ নালার বদ্ধ জলাশয়ে মশা মনের হরিষে বংশ বিস্তার করে থাকে৷ বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে মশার ডিম হতে মশা জন্ম নেয়৷ এরই একটি ধাপ হল লার্ভা৷ আবার গাম্বুসিয়া মাছের অতি প্রিয় খাবার হল এই লার্ভা৷ লার্ভা দেখলে গাম্বুসিয়া হামলে পড়ে লার্ভার উপর৷ এবং লার্ভা নিধন করা হল নাকি গাম্বুসিয়ার কাজ৷ এবং এ নিধন  নিজ স্বার্থে৷ এবং স্বার্থটা হল উদর পূর্তি৷

কিন্ত, প্রশ্ণ হল গাম্বুসিয়া কি রাজধানীর মশা নিধন করতে পারবে? রাজধানীতে নর্দমার সংখ্যা কি হাতে গোনা যৎসামান্য? কটি নালাতে  গাম্বুসিয়া ফেলতে পারবেন? তাছাড়া মশার যন্ত্রণা শুধু রাজধানীতে সীমাবদ্ধ নয়৷ সারা রাজ্য জুড়ে মশা প্যান প্যান করছে৷ গাম্বুসিয়া এই মুশকিল আসান কতটুকু করতে পারবে তা কিন্তু প্রশ্ণাতীত নয়৷ কামানের মত গাম্বুসিয়াও শেষে গলদঘর্ম হবে নাতো? প্রশ্ণ হল মশা নিধনে এত মহাযজ্ঞের আয়োজন কেন? যে আয়োজনটা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কবিতা জুতা আবিস্কারের মত ঠেকছে৷ তার চেয়ে সেই পুরনো টোটকায় ফিরে গেলে কেমন হয়৷ সেই ডিডিটি পাউডার৷ তবে একটু কড়া ডোজের হতে হবে৷ আনুপাতিক হারে জল মেশাতে হবে৷ তারপর মশার বংশ বিস্তারের সব স্থানে মশা নিধন কর্মীরা স্প্রে করলে জন্ম নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে পড়ে যাবে মশককূল৷ বংশ বিস্তারে আর রমরমা ভাব থাকবে না৷ বাপ দাদার আমলের এই টোটকা ওষুধের কথা না ভেবে নতুন সরকারও কেন যে গাম্বুসিয়ার পেছনে ছুটছে তা বোধগম্য হচ্ছে না৷ মশা নিধনে কামান পেল৷ গাম্বুসিয়া এলো৷ ভাবছি- এবার কি আসবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *