নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ মে৷৷ ১৩ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করে পুণরায় আইনী গ্যাড়াকলে যাতে রাজ্য সরকারকে পড়তে না হয়, সতর্ক করেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ৷ শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তীর বক্তব্য, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে নিয়োগ নীতি সংশোধন করা হয়েছে৷ আইনী ঝামেলা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই৷ কিন্তু, শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে অসন্তুষ্ট সুদীপবাবু জানতে চান নয়া নিয়োগ নীতি সাড়ে সাত লক্ষ বেকারদের অধিকার খর্ব করছে না তো? এর জবাব অবশ্য দেননি শিক্ষামন্ত্রী৷
বৃহস্পতিবার বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে রাজ্য সরকার দ্বারা ১৩০০০ নতুন পদ সৃষ্টি করা সম্পর্কে জনস্বার্থে জরুরী নোটিশ আনেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন৷ এই নোটিশের উপর আলোচনায় সুদীপবাবু রাজ্য সরকার সমালোচনায় মুখর হন৷ তাঁর দাবি, ১৩ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে শর্ত আরোপ করা হয়েছে তা সংবিধানের ১৩ এবং ১৪ ধারাকে অবজ্ঞা করেছে৷ কর্মসংস্থানে সকলের জন্য সমান অধিকার যা সংবিধান প্রদত্ত, তা খর্ব করা হয়েছে৷ তাঁর বক্তব্য, অশিক্ষক পদের জন্য শিক্ষকতার যোগ্যতা চাওয়ার মাধ্যমে রাজ্যের সাড়ে সাত লক্ষ বেকারদের বঞ্চিত করার হচ্ছে৷ তিনি বলেন, কোন একটা অংশকে পাইয়ে দেবার জন্য, পাশে আছি প্রতিশ্রুতি রাখতে গিয়ে রাজ্যের সমস্ত বেকারদের বঞ্চিত করার ফন্দি এঁটেছে রাজ্য সরকার৷ তবে, নতুন পদ সৃষ্টি করে যাদের সুযোগ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে রাজ্য সরকার, সেক্ষেত্রেও তাদের বিপদের দিকেই ঠেলে দেওয়া হচ্ছে৷ কারণ সুদীপবাবু মনে করেন, আবারও আইনী গ্যাড়াকলে পড়বে রাজ্য সরকার৷ তিনি বলেন, যে নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতার প্রয়োজন রয়েছে৷ কিন্তু, নিয়োগ নীতিতে কোথাও তা উল্লেখ নেই৷ কেবল ৩ কিংবা ৫ বছরের শিক্ষকতা যোগ্যতা থাকলেই ঐ পদগুলিতে আবেদন করা যাবে, এমন নিয়োগ নীতি সংশোধন করা হয়েছে৷
সুদীপবাবু বলেন, বাজেটে এই নতুন ১৩ হাজার পদের ঘোষণা ছিল না৷ তাহলে টাকার সংস্থান কোথা থেকে হচ্ছে, প্রশ্ণ তুলেন তিনি৷ তিনি অনুরোধ জানান, চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের ভবিষ্যত যাতে অনিশ্চিয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া না হয়৷ কারণ, তিনি মনে করেন, রাজ্য সরকার আবারও ভুল করছেন৷ তাই তিনি নিয়োগ নীতি সংশোধনের দাবি জানান৷
এদিন এই নোটিশের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে কংগ্রেস বিধায়ক গোপাল রায় বলেন, একটা অপরাধ ঢাকতে আরেকটা অপরাধ যেন না হয় তা সুনিশ্চিত করা উচিৎ৷ রাজ্য সরকারের ভূলের খেসারত দিচ্ছেন ১০৩২৩ জন শিক্ষক৷ এখন আবার নতুন পদ সৃষ্টি তাদেরকে আবারও বিপদের মুখে ঠেলে না দেওয়া হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে রাজ্য সরকারকে৷ আলোচনায় অংশ নিয়ে কংগ্রেস বিধায়ক রতন লাল নাথও রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন এবং বলেন রাজ্যের সমস্ত বেকারদের জন্য ভাবা উচিৎ৷
জবাবে শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী দাবি করেন, খুবই যত্ন সহকারে আইনের সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে নিয়োগ নীতি সংশোধন করা হয়েছে৷ কোন ঝামেলা সম্ভাবনা নেই৷ তিনি বলেন, সকলকে দিয়ে সবরকম কাজ হয় না৷ সেজন্যই এই নতুন পদ সৃষ্টি করে নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শর্ত রাখা হয়েছে৷ তিনি জানান, রাজ্য সরকার চাকুরীচ্যুত শিক্ষক এবং বেকারদের বিষয়ে যথেষ্ট সংবেদনশীল৷ কিন্তু, শিক্ষামন্ত্রীর এই জবাব সন্তুষ্ট করতে পারেনি তৃণমূল বিধায়ক সুদীপবাবুকে৷ তাঁর পাল্টা প্রশ্ণ, নয়া নিয়োগ নীতি রাজ্যের সাড়ে সাত লক্ষ বেকারদের অধিকারকে খর্ব করছে না তো৷ শিক্ষা মন্ত্রী এই প্রশ্ণের কোন জবাব দেননি৷
2017-05-26

