কংগ্রেস-তৃণমূল-সিপিএমের মিলিঝুলি রাজনীতির সম্ভাবনা, রাজ্যে অবিজেপি ঐক্যের তাগিদ বাড়ছে

৷৷ দেবাশীষ ঠাকুর৷৷
বিধানসভার নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজ্যের রাজনৈতিক তৎপরতা বেড়ে চলেছে৷ কংগ্রেস, তৃণমূল ও সিপিএমের নেতা কর্মীরা যখন বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন তখন স্বাভাবিক ভাবেই সিপিএমের একচ্ছত্র আধিপত্যে আঘাত এসেছে একথা বলা যেতেই পারে৷ এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে সিপিএম, কংগ্রেস ও তৃণমূল অঘোষিত ভাবে হলেও নির্বাচনী সমঝোতায় যাওয়া ছাড়া উপায় নেই৷ এরাজ্যে যদি অ-বিজেপি সরকারও প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে আশ্চর্য্য হবার নয়৷ সেই স্বপ্ণ দেখা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই অবিজেপি দলগুলির সামনে৷ কংগ্রেসের তাবড় নেতা বিধায়কদের বাম সরকারের সঙ্গে তলে তলে যে সখ্যতা রয়েছে সেখানে যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে তাহলে তো সব বিলীন হয়ে যেতে পারে৷ কংগ্রেসের নেতারা কি কম সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন সিপিএম সরকারের কাছ থেকে? দশ হাজার শিক্ষকের চাকুরীর মধ্যে কতগুলি পেয়েছেন তাঁরা? চাকুরী যাওয়ার পর কংগ্রেস ও তৃণমূল নেতাদের মুখে তো একেবারে কুলুপ আঁটাই দেখছে মানুষ৷ চাকুরী কেলেংকারী নিয়ে বিজেপিই চিৎকার দিয়ে চলেছে৷ কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের কন্ঠ তো প্রায় স্তব্ধ৷ সুতরাং ত্রিপুরার মানুষ এটা অন্তত জানে বিজেপিকে আটকাতে হলে অবিজেপি সব দলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই৷
ত্রিপুরায় সিপিএমকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে তো কংগ্রেসের অবদান সব সময়ই ছিল৷ ১৯৭৭ সালে কংগ্রেস ভাঙ্গিয়া সিএফডি ও জনতা দলে যোগ দিয়েছেন তাবড় কংগ্রেস বিধায়করা৷ তখন দলত্যাগ বিরোধী আইন ছিল না৷ সমীর বর্মণরা তো সিপিএমের সঙ্গে কোয়ালিশন সরকার করেছিলেন৷ কেন্দ্রে বিজেপিকে রুখিতে একসময় সিপিএম যেমন কংগ্রেস সরকারকে সমর্থন দিয়ে টিকিয়ে রেখেছিলেন তেমনি ত্রিপুরাতে বিজেপি আটকাতে কংগ্রেস- তৃণমূল-সিপিএম মিলিঝুলি সরকার গড়ার স্বপ্ণও কি উড়িয়ে দেওয়ার মতো৷ অন্তত তৃণমূল নেতা সুদীপ বর্মনরা তো প্রার্থী দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই৷ কংগ্রেস সবকটি আসনেই লড়াই করবে৷ এই যখন পরিস্থিতি তখন রাজ্যে এখনই রাজনৈতিক সমীকরণ দেখা দিতে পারে৷ প্রদেশ বিজেপি সভাপতি ঘোষণা দিয়েছেন তাঁর দল কোনও আতাঁত বা সমঝোতায় যাবে না৷ একাই ষাট আসনে লড়াই করবে৷ বিজেপির ঘোষণায় সিপিএম নেতৃত্বের খুশী হবার মতো কারণ আছে৷ তৃণমূল বা কংগ্রেসের যেসব বিধায়ক রয়েছেন তাঁরা বিজেপিতে গেলেই টিকিট পাবেন এমন গ্যারান্টি তো নেই৷ সুতরাং নিজেদের আসন বাঁচাতে মরণপণ লড়াই তো তাঁদের করতেই হবে৷ পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসকে সিপিএম’র সঙ্গে যৌথ ‘রণকৌশল’ নেওয়া ছাড়া সামনে কোনও পথ নেই৷ তৃণমূল বা কংগ্রেসের কয়েকজন বিধায়ক বিজেপি’র দিকে পা বাড়িয়ে রেখেছেন বলে যে প্রচার তাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ কিন্তু তবু, কংগ্রেসের ভোট, তৃণমূলের সামান্য ভোটও তো বিজেপি’র প্রার্থীদের পরাজয় ঘটিয়ে দিতে পারে৷ কথা আছে পঁচা শামুকেও পা কাটে৷
একথা ঠিক, ত্রিপুরায় বাম বিরোধী অধিকাংশ ভোটাররাই বিজেপিতে যোগ দেয় নাই৷ যেমন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট তো সিপিএম, কংগ্রেস বা তৃণমূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী৷ একথাও সত্যি যে, বাম বিরোধী ভোটার এমন আছেন যারা বিজেপিকে পছন্দ করেন না৷ এইসব বিভিন্ন বিতর্কের মাঝেই রাজ্যের রাজনীতির মঞ্চ সরগরম৷ বিজেপি’র একলা চলো নীতি অবিজেপি সব দলকেই ঐক্যের তাগিদ বাড়িয়েছে৷