প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে ‘কবর’ স্লোগান বিতর্ক: সোনিয়া গান্ধীর ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে সরব বিজেপি

নয়াদিল্লি, ১৫ ডিসেম্বর : রাজস্থানের জয়পুরে কংগ্রেসের একটি সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ঘিরে বিতর্কিত স্লোগান ওঠার জেরে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছে শাসক দল বিজেপি।

রবিবার জয়পুরে অনুষ্ঠিত ‘ভোট চোর গদি ছাড়ো’ কর্মসূচিতে কংগ্রেসের জয়পুর মহিলা জেলা সভানেত্রী মঞ্জু লতা মীনার নেতৃত্বে একদল কর্মী প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘কবর’ স্লোগান তোলেন। বিরোধীদের অভিযোগ, এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ তুলে ধরা হচ্ছিল।

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মঞ্জু লতা মীনা নিজের মন্তব্যের সাফাই দিয়ে বলেন, ভোট চুরি নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ রয়েছে, তিনি সেটাই প্রকাশ করেছেন। তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান, যুবসমাজ, মহিলা ও কৃষকদের সমস্যার কথা না বলে মূল ইস্যু থেকে নজর ঘোরাচ্ছেন।

তবে এই মন্তব্য ঘিরেই শুরু হয় প্রবল বিতর্ক। রাজ্যসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজেপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নাড্ডা বলেন, “কংগ্রেসের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যে স্লোগান উঠেছে, তা দলের মানসিকতা ও চিন্তাধারারই প্রমাণ। দেশের প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুকামনা করা অত্যন্ত নিন্দনীয়।” তিনি দাবি করেন, কংগ্রেস সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী এবং রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গেকে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

এদিকে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজুও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “উভয় সংসদের মেঝেতে এই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। কংগ্রেস কর্মীরা প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রীর কবর খোঁড়ার কথা বলছে—এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”

রিজিজু আরও বলেন, কংগ্রেস ও বিজেপি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে, কিন্তু শত্রু নয়। “আমরা একে অপরের বিরোধিতা করি নীতিগতভাবে, কিন্তু একে অপরকে হত্যা করার কথা কখনও ভাবি না বা বলি না। প্রকাশ্যে এমন হুমকি দেওয়ার মানসিকতা কোন ধরনের রাজনীতির পরিচয় দেয়?”—প্রশ্ন তোলেন তিনি।

এদিকে কংগ্রেস সাংসদ মানিকম টাগোরে বিজেপির প্রতিক্রিয়াকে কটাক্ষ করে বলেন, “আমাদের সমাবেশে বিজেপি নেতারা এতটাই বিচলিত হয়ে পড়েছেন যে তারা রাতে ঘুমোতে পারেননি।”

এই ঘটনার পর কংগ্রেসের শরিক দলগুলিও মন্তব্য থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ রাজীব রাই বলেন, “রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে, কিন্তু সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে কথা বলার সময় সংযম থাকা জরুরি।”

এনসিপি (এসপি) নেতা জয়ন্ত পাটিলও বলেন, এ ধরনের স্লোগান তোলা ঠিক নয়। “যাই হোক না কেন, নরেন্দ্র মোদি দেশের প্রধানমন্ত্রী,”—তিনি মন্তব্য করেন।
______

Leave a Reply