বাংলাদেশে নতুন সহিংসতার আগুনে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য শহর অচল, ১৭ নভেম্বরের গুরুত্বপূর্ণ রায়ের আগে উত্তেজনা তুঙ্গে

ঢাকা, ১৩ নভেম্বর : গত দুই দিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও কাঁচা বোমা হামলার ঘটনায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) দেয়া রায়ের দিনকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন থেকে যে সহিংসতার স্মৃতি এখনও দেশবাসীর মনে তাজা, সেই প্রসঙ্গ আবার ফিরে এসেছে।

বৃহস্পতিবার, ঢাকা শহর একটি দুর্গে পরিণত হয়েছে, যেখানে পুলিশ এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ব্যাপক সংখ্যায় মোতায়েন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ডাকা ঢাকা লকডাউন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে বিপুল পরিমাণ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং যানবাহন কঠোরভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের রাস্তাগুলো আজ চিরচেনা ব্যস্ততার তুলনায় অনেকটাই শূন্য ছিল। গণপরিবহন প্রায় অর্ধেক পরিমাণে চলাচল করছে।

আইসিটির দফায় দফায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, যেখানে ১৭ নভেম্বরের রায় ঘোষণা করা হবে শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড, ষড়যন্ত্রসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।

ঢাকা শহরে আবারও সহিংসতা বেড়ে গেছে, বিশেষ করে অগ্নিসংযোগ ও কাঁচা বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে গাজীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ অন্যান্য শহরেও এই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের একটি শাখা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ব্যাংকের বেশ কিছু আসবাবপত্র ও নথিপত্র আগুনে পুড়ে গেছে। এছাড়া রাজধানী ঢাকায় বেশ কিছু বাসও আগুনে পুড়ে গেছে, যার মধ্যে একটি ছিল ব্যবসায়িক এলাকা একটি বাজারের কাছে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়েতেও বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। এছাড়া, রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় একটি ট্রেন কোচও আগুনে পুড়ে গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অন্তত ১৭টি স্থানে বোমা হামলা ঘটেছে, যার মধ্যে তিনজন আহত হয়েছে। একটি শপিং মল এবং একটি স্থানে ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী চলছিল, সেখানেও হামলা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের ৪৪ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে নেতৃবৃন্দ ও দলের সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে ২৯ জন নেতাকর্মী আটক করা হয়েছে।

পুলিশ আরো দাবি করেছে, রাজধানী ঢাকার এক বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ কাঁচা বোমা ও পেট্রোল বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।

বর্তমানে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা তীব্র হচ্ছে। সম্প্রতি শেখ হাসিনার ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকার ও উসকানিমূলক বক্তব্য রাজনৈতিক অস্থিরতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বুধবার, বাংলাদেশ ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনারকে তলব করে।

শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে গত বছরের ছাত্র আন্দোলনের সহিংসতায় তাদের ভূমিকার জন্য পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকারের কর্মকর্তারা নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর গণহত্যা, হত্যাচেষ্টা ও অমানবিক আচরণে জড়িত ছিল। দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ছাত্রদের হত্যার জন্য শেখ হাসিনা ক্ষতিকর অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তৃতীয় অভিযোগে হাসিনার বিরুদ্ধে একজন ছাত্র, আবু সায়েদের হত্যার অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ার এবং আগস্ট ২০২৪ সালে ঢাকার চানখারপুলে ছয়জন নিরস্ত্র ছাত্রের হত্যার অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশের সামনে ১৭ নভেম্বরের রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই রায় দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে, যা দেশের ভবিষ্যৎকে আকস্মিকভাবে পাল্টে দিতে পারে।