গুয়াহাটি, ৯ সেপ্টেম্বর: অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন নিয়ে রাজ্যে কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই, কারণ হিন্দু বাঙালিরা নিজেদের ভারতীয় বলে নিশ্চিত এবং তারা ১৯৭১ সালের আগেই অসমে এসেছেন। তিনি জানান, হিন্দু বাঙালিদের বিদেশি হিসেবে সন্দেহ করার কোনও কারণ নেই।
গুয়াহাটিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সিএএ অসমে প্রাসঙ্গিক নয়। হিন্দু বাঙালিদের বিদেশি মনে করার কোনও কারণ নেই, কারণ তারা ১৯৭১ সালের আগেই এখানে এসেছেন। তাঁরা জানেন, তারা ভারতীয়। তাই তারা সিএএ-র আওতায় নাগরিকত্বের আবেদনও করেননি।”
তিনি আরও বলেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালে হিন্দু বাঙালিদের স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দিয়েছিলেন, এবং তাঁদের ফেরত পাঠানো হবে এমন কোনো ইঙ্গিত তখন দেওয়া হয়নি। এই কারণেই, মুখ্যমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সিএএ-এর অধীনে মাত্র ১২টি আবেদন জমা পড়েছে, যার মধ্যে মাত্র তিনজনকে নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়েছে।
সিএএ বিরোধী আন্দোলনে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনাও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “যেখানে আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন মানুষ, সেখানে আবেদন হয়েছে মাত্র হাতে গোনা। এর থেকেই বোঝা যায়, এই আইন অসমের বাস্তবতায় বিশেষ প্রভাব ফেলে না।”
তিনি জানান, ২০২৫ সালের “অভিবাসন এবং বিদেশী’ আদেশ” জারির পর থেকে আর কোনো আবেদন জমা পড়েনি। এই আদেশ অনুসারে, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪-এর আগে ভারতে আসা সংখ্যালঘুরা — হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টান —বৈধ নথিপত্র ছাড়াও ভারতে বসবাস করতে পারবেন। তবে সিএএ শুধুমাত্র ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগেই আগতদের নাগরিকত্ব প্রদানের সুযোগ দেয়।
অসম চুক্তির কথা উল্লেখ করে বিরোধী দলগুলি এবং অল অসম ছাত্র সংঘ সিএএ ও নতুন ছাড় আদেশের তীব্র বিরোধিতা করেছে। তাঁদের মতে, ১৯৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত যাঁরা এসেছেন, তাঁদের চিহ্নিত ও বহিষ্কারের কথা বলা হলেও, সিএএ-তে তা ২০১৪ এবং নতুন আদেশে ২০২৪ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে — যা অসম চুক্তির পরিপন্থী।
এই নিয়ে প্রশ্ন করলে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, “যদি লক্ষ লক্ষ আবেদন জমা পড়ত, তবে সরকার এই নিয়ে পদক্ষেপ নিত। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংখ্যাটা অত্যন্ত সামান্য, তাই এই আইন অসমে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক।”
উল্লেখ্য, অসম চুক্তি ১৯৮৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাক্ষরিত হয় এবং এটি রাজ্যের ছয় বছরব্যাপী বিদেশি বিরোধী আন্দোলন শেষ করে। ওই আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়। চুক্তিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর যাঁরা এসেছেন, তাঁদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে গণ্য করা হবে।
বর্তমানে, সিএএ ও সংশ্লিষ্ট আদেশগুলির মাধ্যমে সেই সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়াকেই বিরোধীরা রাজ্যের ভাষা, সংস্কৃতি ও অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলে দাবি করছে।
তবে মুখ্যমন্ত্রী শর্মা জানিয়েছেন, “সিএএ অসমের জন্য নয় — অন্তত এই মুহূর্তে। এই রাজ্যে হিন্দু বাঙালিরা তাদের পরিচয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। তাই নাগরিকত্বের জন্য তাঁদের সিএএ-র দরকার পড়ে না।”

