BRAKING NEWS

আবার কর্মনাশা বন্ধ

strike-copyসাধারণ মানুষ বন্ধের রাজনীতিকে মানিয়া নিতে পারেন না৷ এই বন্ধ এর অর্থ দাঁড়ায় একদিনের কর্মানাশা৷ নোট বাতিলের প্রতিবাদে সংসদে ঝড় বহিতেছে৷ বিরোধী দলগুলি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের নজীর রাখিয়াছেন৷ নয়াদিল্লীতে বিভিন্ন দলের দুইশত সাংসদ ধর্নায় সামিল হইয়াছেন৷ বাঘে মোষে একঘাটে জল খাওয়ার নজীর হইয়াছে৷ তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিএম, কংগ্রেস ও সপা হাতে হাত মিলাইয়াছেন৷ বিরোধীরা ২৮শে নভেম্বর দেশজুড়িয়া ‘আক্রোশ দিবস’ পালনের ডাক দিয়াছেন৷ নোট বাতিলের বিরুদ্ধে যিনি আন্দোলনের প্রথম সারিতে রহিয়াছেন সেই তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বন্ধের পথে পা না দিয়া নিজের ঘোষিত নীতির পক্ষে রহিয়াছেন৷ অন্য কোনও দলও এতবড় ঘটনার প্রতিবাদে বন্ধের রাজনীতি করিতে চাহেন নাই৷ আসলে রাজ্যবাসী এই অহেতুক কর্মনাশা বন্ধের পক্ষে নহে৷ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অধিকার আছে বলিয়াই বন্ধ ডাকিয়া জনদুর্ভোগ আরও বাড়াইয়া দেওয়ার মধ্যে কোন কৃতিত্ব নাই৷ বরং বন্ধ ডাকিয়া মানুষের ক্ষোভ অসন্তোষকে আরও বাড়াইয়া দেওয়া৷ এমনিতেই নোট বাতিলের কারণে সাধারণ মানুষ এখন গভীর সংকটের আবর্তে আছে৷ রুটি রুজির পথ যেখানে থমকাইয়া গিয়াছে সেখানে একদিনের বন্ধ ডাকিয়া এই সংকটকে আরও বেশী তীব্র করিয়া তোলা৷ কর্মনাশা এই বন্ধের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই জনমত প্রবল হইয়াছে৷ তবু, এই সস্তা রাজনীতি হইতে বামপন্থী দল সরিয়া আসিতে চায় না৷ সাধারণত দেখা গিয়াছে, যেসব দলের আন্দোলন করিবার ক্ষমতা নাই, লোকবল নাই তাহারাই রাজনীতিতে অস্তিত্ব জানান দিতে বন্ধ ডাকিয়া বসে৷ বন্ধ ডাকিলেই যান বাহন রাস্তায় বাহির হয় না৷ কোনও ব্যবসায়ী দোকান খোলা রাখিয়া অশান্তি বাড়াইতে চায় না৷ সোজা কথায়, ভয়ভীতিতেই দোকান পাট বন্ধ রাখে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই৷ তাঁহারা মোটেও বন্ধের সমর্থক নহেন৷ সিপিএমের জনভিত্তি আছে ত্রিপুরায়৷ সেই দলও সেই সস্তা পথেই যদি আগাইয়া যায় তাহা দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কী?
নোট বাতিল কান্ডে গোটা দেশ জুড়িয়া প্রতিক্রিয়া আছে৷ কিন্তু, বিরোধী দলগুলি যেভাবে মারমুখী হইয়াছেন ‘জনগণ’ সেইরকম ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান নাই৷ বরং গ্রামে গঞ্জে বহু গরীব অংশের মানুষ নোট বাতিলের ঘটনাকে জোর স্বাগত জানাইয়াছেন৷ গুরুতর সমস্যা হইতে সংহসাই উত্তরণের সম্ভাবনাও উকি দিতেছে৷ নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পিছনে অন্য কোনও মতলব আছে কিনা স্পষ্ট করিয়া বলা মুশকিল৷ কালো টাকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে নোট বাতিলের বার্তা তো দেশের গরীব অংশের মানুষ মনে মনে স্বাগত জানাইয়াছে বলিলে কি ভুল বলা হইবে? এই সত্যিকে কি কেউ অস্বীকার করিতে পারে? নতুন নোট ব্যাংকগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ খুব সহসাই আসিবে বলিয়া ধারণা৷ তখন তো জনগণের সঞ্চারিত ক্ষোভের আগুনে জল পড়িবার সম্ভাবনাই বেশী৷ নোট বাতিলের বিরুদ্ধে যে দল বেশী সোচ্চার হইতেছে জনমনে অন্যরকম বার্তাও যাইতেছে৷ কারণ, রাজনৈতিক দলগুলিও যে কালো টাকার রক্ষক এমন অভিযোগও তো আছে৷ নির্বাচনের সময় এত এত টাকা দলগুলি পায় কোথা হইতে?
সুতরাং নোট বাতিলের বিরুদ্ধে সংসদে টানা অচলাবস্থা চলিতে পারে৷ অতীতেও এই ট্রেডিশান দেশবাসী দেখিয়াছে৷ এই অধিবেশনের অচলাবস্থার কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যাইতেছে৷
গোটা দেশের সংখ্যাগরিষ্ট অংশের মানুষ নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে মনে মনে স্বাগত জানাইয়াছেন৷ কারণ তাঁহারা বুঝিয়াছেন কাল টাকার বিরুদ্ধে মোদি ব্যবস্থা নিয়াছেন৷ এই নোট বাতিলের বিরুদ্ধে ‘আক্রোশ দিবস’ মিছিল বিক্ষোভ দেখানোর আন্দোলনের প্রস্তুতি চলিয়াছে৷ পশ্চিমবঙ্গেও বন্ধ ডাকিয়া মমতার বন্ধ বিরোধী নীতিকেই ধাক্কা দিল সিপিএম৷ ২৮শে নভেম্বর সেই আক্রোশ দিবসও আরেক পরীক্ষা৷ জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত অংশ গ্রহণ কতটা৷ বন্ধ ডাকিলে তো সেই চিত্র থাকে অনুপস্থিত৷ বন্ধের রাজনীতি বন্ধ না করিলে তাহার বিরুদ্ধে একমসয় গণ আন্দোলন গড়িয়া উঠিবে৷ সেই দিন বোধহয় দেরী নাই৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *