BRAKING NEWS

‘আমরা ও তারা, আমাদের এবং তাদের’, এই সংঘাতের ফলেই বিশ্বে ধৰ্ম, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিপন্ন : মোহন ভাগবত

প্রাচীন জ্ঞানকে অবলম্বন করে শান্তির যুগ আনার আহ্বান আরএসএস-প্রধানের

ডিব্রুগড় (অসম)২৮ জানুয়ারি (হি.স.) : ‘আমরা ও তারা, আমাদের এবং তাদের’, এই ভাবনায় ঈর্ষা, অহংকার এবং সংকীর্ণ মানসিকতার মাধ্যমে যে সংঘাত চলছে, তার ফলেই গোটা বিশ্বে আজ ধৰ্ম, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিপন্ন। বলেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর সরসংঘচালক ডা. মোহন ভাগবত।

‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর কালচারাল স্টাডিজ’ এবং অরুণাচল প্রদেশ-ভিত্তিক ‘রিওয়াচ’ (আরআইডব্লিউটিসিএইচ)-এর যৌথ পৃষ্ঠপোষকতায় প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রবীণদের ব্যবস্থাপনায় আজ রবিবার সকালে ডিব্ৰুগড়ে অসমের অন্যতম প্রথমসারির ‘শিক্ষা ভ্যালি স্কুল’ প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে ত্রিবার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন। চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। ত্রিবার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এবারের থিম ‘শেয়াৰ্ড সাসটেইন্যাবল প্ৰসপারিটি’।

পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আজ রবিবার সকালে আরএসএস-এর সরসংঘচালক ডা. মোহন ভাগবত, সংঘের প্রবীণ অধিকারী সুরেশ সোনি সহ বহুজনের উপস্থিতিতে সুসজ্জিত হাতি সহযোগে ৩৩টি দেশের প্রবীণ প্রতিনিধিরা তাঁদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন উপজাতি জনগোষ্ঠীর পুরুষ-মহিলা তাঁদের পরম্পরাগত বাদ্যযন্ত্র সহ ভক্তিমূলক সংগীত-নৃত্যের মাধ্যমে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় পা মিলিয়ে ডিব্রুগড়ের প্রধান প্রধান রাস্তা পরিক্রমা করেছেন।

আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অসমের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার পৌরোহিত্যে আয়োজিত সভায় সংঘ-প্রধান ডা. ভাগবত ‘আধ্যাত্মিকতার ভূমি অসমে’ আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের স্বাগত জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। তিনি ৩০-এরও বেশি দেশের ৩৩টিরও বেশি প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী প্রবীণদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আপনারা আপনাদের চারপাশে অত্যন্ত আক্রমণাত্মক পরিবেশ সত্ত্বেও স্বধর্ম, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। তাই বিশ্বের এখন আপনাদের প্রজ্ঞার প্রয়োজন। দুহাজার বছরের অগ্রগতি ও বৈষয়িক সমৃদ্ধি সত্ত্বেও বিশ্ব আজ সংঘাতের সম্মুখীন। বাইরে বা ভিতরে শান্তি নেই। শিশুরা বন্দুক নিয়ে স্কুলে যায়। কোনও আপাত কারণ ছাড়াই মানুষকে গুলি করে।

সরসংঘচালক বলেন, যারা এই গোষ্ঠীবদ্ধতার বাইরে গিয়ে মানবতাকে বাঁচাতে চায়, তারা শেষ পর্যন্ত অন্য গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। এ সব বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পেতে নেতা-চিন্তাবিদরা পরিবেশ বাঁচানোর কথা বলছেন। কিন্তু আলোচনা ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনও ফল আসছে না।

তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিবাদ থেকে অনেক তত্ত্ব এবং ইজম (মতবাদ) উঠে এসেছে, যা সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে না। সমাজকে সর্বোচ্চ বলে মনে করে সাম্যবাদ। এখানে ব্যক্তিগত আনন্দ এবং সামাজিক শান্তির জন্য কোনও স্থান নেই। সমস্ত তত্ত্ব বস্তুগত সমৃদ্ধির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। ধর্ম সমাধানের জন্য বিবর্তিত হয়েছিল, কিন্তু তা-ও ব্যর্থ হয়। কারণ তারা অখণ্ড সমগ্রের দিকে তাকায়নি, তারা একত্বের অন্তর্নিহিত উপাদান বুঝতে পারেনি যা এ সমস্ত মানবিক মাত্রাকে সংযুক্ত করেছে।’

ডা. ভাগবত বলেন, ধৰ্ম সর্বাধিক মানুষের জন্য সর্বোচ্চ কল্যাণের আদর্শ। তারা ‘সর্বে সুখিনঃ সন্তু ’-র গূঢ় তত্ব বা অন্তর্নিহিত জ্ঞান উপলব্ধি করতে পারেনি। ‘সবাই সুখী হোক’, এটা ভাবতেই পারে না তারা। তাদের ধারণা, সেরা ফলাফলের জন্য প্রতিযোগিতাই একমাত্র পন্থা। স্বাভাবিকভাবেই, শক্তিশালী জিতেছে। যদিও প্রাচীন ঐতিহ্যগুলি ‘আধ্যাত্মিক একতা’-র অন্তর্নিহিত দিকটি জানত, যাকে ভারতীয়রা ধর্ম বলেন।

সংঘ-প্রধান বলেন, ‘আমাদের ধর্মের শুরুতে, মাঝখানে এবং শেষে সুখ আছে। প্রাচীন সংস্কৃতি বুঝতে পেরেছিল, ‘সবাই এক নয়, কিন্তু সবকিছু এক।’ আমাদের বিভিন্ন রূপ এবং অভিব্যক্তি থাকতে পারে। কিন্তু, এই বৈচিত্র্যকে নেতিবাচকভাবে দেখার কোনও মানে নেই। আমাদের বৈচিত্র্যকে সম্মান করতে হবে। কারণ এটি বিভিন্ন রূপে প্রকাশিত একতার অভিব্যক্তি। এই জ্ঞান বলে, সুখ ভিতরেই আছে, বাইরে নয়। সুখ কোনও বস্তুর ভোগে নয়, বরং আপনি সুখী বলেই তা ভোগ করেন।’

ডা. ভাগবত আরও বলেন, একজন ব্যক্তি, সম্প্রদায় বা সমাজ, জাতি এবং প্রকৃতি সর্পিলভাবে সম্পর্কিত, প্রতিটি পরবর্তী প্রক্রিয়ার দিকে নিয়ে যায়। তারা কেন্দ্রীভূত বৃত্তে বিদ্যমান নেই। এই সংস্কৃতি ফ্যাক্টরিং শান্তি এবং সমৃদ্ধি আনতে পারে।

তিনি তাঁর বক্তব্যে কীভাবে ১৯৫১ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের এক প্রস্তাবে দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির লক্ষ্যে প্রাচীন দর্শনের বিলুপ্তি এবং পুরনো সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ভেঙে ফেলার কথা বলা হয়েছিল, উল্লেখ করেছেন। বলেন, কিন্তু ২০১৩ সালে স্বীকার করতে হয়েছে, বিশ্বের কল্যাণে উন্নয়ন নীতিতে সংস্কৃতির একীকরণ প্রয়োজনীয় ছিল। প্ৰসঙ্গক্ৰমে মোহন ভাগবত বলেন, আমরা বিভিন্ন ঐতিহ্যের অন্তর্গত প্রাচীন জ্ঞান ব্যবস্থা জানতাম। এভাবে আমাদের সময় এসেছে। প্রাচীন সংস্কৃতি মনে করতে পারে, আমরা খুব ছোট এবং পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে সক্ষম নই।

আরএসএস-এর সরসংঘচালক একটি লোককথা তুলে ধরে বলেন, যার পাঠ ছিল সঠিক প্রজ্ঞার সঙ্গে আমরা একসাথে এসে পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারি, সংঘাত ও পরিবেশগত বিপর্যয়মুক্ত একটি নতুন বিশ্ব তৈরি করতে পারি। প্রাচীন জ্ঞানকে অবলম্বন করে শান্তির যুগ আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দুই দশক আগে এই সম্মেলনের প্রচলন হয়েছিল এই ভাবনাকে সামনে রেখে।

প্ৰসঙ্গত, আইসিসিএস কৰ্তৃক আজ একটি নতুন অ্যাকাডেমিক এবং গবেষণা জার্নাল চালু করা হয়েছে যা ইতিহাস, নৃতত্ত্ব এবং শাসনের উপর আলোকপাত করবে। এছাড়া একটি অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ নিবন্ধ ও পূর্ববর্তী সম্মেলনের হাইলাইট সহ একটি স্মরণিকার আজ উন্মোচন করেছেন ডা. মোহন ভাগবত, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

পাঁচ দিনের সম্মেলন শেষ হবে ৩১ জানুয়ারি আরএসএস-এর সরকার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসবলে, অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী চাওনা মেইনের উপস্থিতিতে। ওইদিনের সম্মেলনে তাঁরাও ভাষণ দেবেন। সম্মেলন শেষে দেশ এবং বিদেশের প্রতিনিধিরা অরুণাচল প্রদেশের রোয়িং-এ অবস্থিত ‘রিওয়াচ’ ক্যাম্পাস পরিদর্শন করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *