সরকারী শিক্ষার অধোগতি

Togariaসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জোর প্রয়াস জারী রাখিয়াছেন, তখন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আন্তর্জাতিক কার্যকারী সভাপতি প্রবীণ তোগারিয়ার ভাষণ নিয়া কংগ্রেস ও সিপিএম জোর প্রতিবাদী হইয়াছে৷ আগরতলায় পরিষদের ব্যবস্থাপনায় তোগারিয়াকে নাগরিক সম্বর্ধনা দেওয়া হয়৷ এই সম্বর্ধনা সভায় তোগারিয়া মুসলীম অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদ্গার করিয়াই ক্ষান্ত থাকেন নাই তাদের বিতাড়নের ডাক দিয়াছেন৷ তিনি বিতাড়নের যে ভিত্তিবর্ষ উল্লেখ করিয়াছেন তাহা মানিয়া নেওয়া যে অসম্ভব ইহা তিনি বুঝিতেছেন, এমন বলা যাইবে না৷ হিন্দুত্বের জয়গান গাহিয়া যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দেশ ও বিদেশে প্রচার চালু রাখিয়াছে, সেখানে নানা প্রশ্ণ থাকিতেই পারে৷ রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) অগ্রণী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ৷ কেন্দ্রে বিপুল শক্তি নিয়া ক্ষমতাসীন বিজেপির মূল কান্ডারীই তো আরএসএস৷ একথা তো এখন আর গোপন নাই৷ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শীর্ষে আছে সংঘ৷ রাজনৈতিক মঞ্চ বিজেপির মূল শক্তিই এই সংঘ৷ সংঘের নীতি আদর্শের অনুসারী হইয়াই চলিতে হইতেছে বিজেপিকে৷ হিন্দুত্বের তাস খেলিয়াই তো বিজেপির এই উত্থান৷ যেসব দল ধর্ম নিরপেক্ষতার জন্য সদা চঞ্চল বা সক্রিয় তাহাদের পক্ষে জন সমর্থন নিম্নগামী৷ এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে পায়ের নীচের মাটি আরও বেশী শক্ত করিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ হিন্দুত্বের গান তো চালাইয়া যাইবে রাজনৈতিক স্বার্থেই৷ বিজেপি সরাসরি যাহা বলিতে পারে না তাহাই তো বলানো হইবে অন্য মুখ দিয়া৷ দেশের মানুষ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, আরএসএস সংগঠন সম্পর্কে অবহিত৷ হিন্দুত্বের গান গাহিয়া বিজেপি কেন্দ্রে বিপুল সংখ্যা গরিষ্টতায় ক্ষমতাসীন হইয়াছে৷ এই ম্যাজিক তো রীতিমতো বিস্ময়ের৷ এত এত অভিযোগ সত্বেও বিজেপির প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়িবার কারণ কি শুধু হিন্দু তাস? এই ব্যাপারে বিতর্ক থাকিতে পারে৷
প্রবীন তোগারিয়া আগরতলায় শুধু নহে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে অবাধে, মনের সুখে হিন্দু ধর্মের প্রচার ইত্যাদি চালাইয়া গিয়াছেন এবং মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করিয়াছেন৷ ত্রিপুরায় শুধু নয়, দেশের প্রায় সর্বত্রই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কম নহে৷ তোগারিয়ার হিন্দুত্বের ডাকে বহু মানুষ যে ঝাঁপাইয়া পড়িতে প্রস্তুত সে বিষয়ে সন্দেহ নাই৷ বহু হিন্দু ধর্মাবলম্বীর মধ্যে হিন্দুত্বের সেন্টিমেন্ট আছে৷ পুজা আচ্চা না করিয়া জলস্পর্শ করেন এমন ব্যাক্তির সংখ্যাও কম নহে৷ কমিউনিস্ট পার্টির অনুগতরাও দেবদেবীতে ভীষণ ভক্তি শ্রদ্ধায় অবিচল৷ সেখানে তো সব দলের জারিজুরিই টিকিবে না৷ ধর্মীয় ভাবাবেগের কাছে তো সব কিছুই যেন তুচ্ছ হইয়া যায়৷ সেই দূর্বল জায়গাকেই পঁুজি ধরিয়া আগাইয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে সাফল্য তো মিলিতেছে৷ অন্তত বিজেপি সেই সাফল্যের পথেই তো হাটিতে পারিতেছে৷ যেসব রাজনৈতিক দল মুখে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আছে, বাস্তবে কি তাহারা নিজেরা সাম্প্রদায়িকতার উর্ধে? তাহারা কি জাত পাতের তোষণ করেন না? তাহারা কি জাত ভিত্তিক সংরক্ষণের পক্ষে সওয়াল করেন না? একথা হয়তো জোরের সঙ্গেই বলা যাইতে পারে যে, কোনও দলই জাতপাতের উর্ধে নাই৷
প্রবীণ তোগারিয়ার সব বক্তব্যই কি যুক্তিহীন? দেশের মানুষ কি এই বক্তব্যের সারবত্তা বুঝিতে পারিতেছেন না? ভারত ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র এখানে সকল ধর্মের সমানাধিকার৷ কিন্তু, হিন্দুরা দেশভাগের বলি হইবে কেন? অবর্ননীয় দুঃখ দুর্দশার ছবি কি আমরা ভুলিতে পারি? দেশ ভাগের অভিশাপ মোচনে রাষ্ট্র কতখানি সহায়ক ভূমিকা নিতে পারিতেছে? এইসব জ্বলন্ত প্রশ্ণের মুখেই তো তোগারিয়ার বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা হারাইয়া যাইতেছে না বরং জনমনে প্রাসঙ্গিকতা পাইতেছে৷ আর জনসাধারণের নাড়ির কথা টের পাইয়াই রাজ্য সরকার তোগারিয়ার সভা সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারী করিবার সাহসী হইতেছে না৷ দেশে এখন চলিতেছে তোষণের রাজনীতি৷ মুসলীম তোষণ, হিন্দু তোষণ৷ এই তোষণের কারণে আগামী দিনে ভারতবর্ষে মুসলীম সংখ্যাগরিষ্ট দেশে পরিণত হইবে বলিয়া আশংকা প্রকাশ করা হইতেছে৷ সুতরাং এইসব আশংকাই তো জনমনে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়৷ বৈচিত্রের দেশ ভারতবর্ষের সামনে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ আসিয়াছে৷ আজ আবার সেই ভাবনা দেখা দিয়াছে৷ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে যেকোনও মূল্যে রক্ষা করিয়া দেশকে শক্তিশালী করিতে হইবে৷ কোনও সাধারণ ভাবাবেগের কাছে আত্মসমর্পণ না করিয়া বাস্তব পরিস্থিতির মুখে দাঁড়াইতে হইবে৷ কোনও অবস্থাতেই দেশের ঐক্য সংহতির সঙ্গে আপোষ করা চলিবে না৷ প্রবীণ তোগারিয়া সেই শান্তি ও সম্প্রীতির পথকেই আমন্ত্রণ জানাইবেন৷ তাহার বিকল্প নাই৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *